নন-সেন্স কথামালা (১৯): খেলা শেষে পড়তে বসতে হবে!!

 নন-সেন্স কথামালা (১৯): 

খেলা শেষে পড়তে বসতে হবে!!

খেলা হবে। হোক, খেলা হোক। সবাই মিলেই হোক। সবাই নিজের ব্যাট, বল, উইকেট আর নিজের লোক নিয়েই মাঠে আসুক। বিকালে হবে খেলা। মনে আছে তো, স্কুল থেকে ফিরে স্কুলের ড্রেস ছেড়ে কোনরকমে একটু কিছু মুখে দিয়েই মাঠে চলে আসিস। খেলা শুরু করতে যেন দেরী না হয়। আর কেউ বে-পাড়ার ছেলে নিয়ে আসবি না কিন্তু! পাড়ার খেলা নিজেদের মধ্যেই হবে।
হোক খেলা। সবাই মিলেই হোক। দাদা নিয়ে আসুক 'আত্মনির্ভর ভারত' আর 'নোটবন্দি', দিদির বড় অস্ত্র 'কন্যাশ্রী' আর 'নীল রঙের উন্নয়ন' সাথে থাকুক। আর জ্যেঠুর সঙ্গে থাকুক 'ভূমি সংস্কার' আর 'রক্ত দিয়ে গড়া বক্রেশ্বর'। না, না! শুধু এটুকু নামেই খেলা হবে না! আরও অনেক অনেক তাস প্রত্যেকের হাতেই আছে। খেলা শুরু হলেই না হয় প্রকাশ হোক এক এক করে। ওয়াসিম আক্রম তো রিভার্স সুইংয়ের জন্ম তো আজহারের সাথে কথা বলে দেয়নি! তাই দাদার 'জি.এস.টি', 'রামমন্দির' যদি মিডিল অর্ডারের চমক হয় তাহলে দিদিও 'সবুজ সাথীর সাইকেল' আর 'স্বাস্থ্য সাথী'কে টপ অর্ডারে তুলে আনতেই পারেন পিচের কন্ডিশন দেখে। জ্যেঠু কিন্তু হাতের তাস অনেক আগেই দেখিয়ে ফেলেছেন। বছরের পর বছর 'এস এস সি পরীক্ষা', 'রাজারহাটের সেক্টর ফাইভ' আমরা জেনেই খেলা দেখতে এসেছি। তাই খেলা হোক চেনা মাঠে, বন্ধুর সাথে। রক্তমাখা-ভাত আর থান-কাপড় পাঠানো বাড়ীর কান্নার গল্প শুনিয়ে কি লাভ! পার্কস্ট্রিট আর কামদুনী যেমন দিদির সংগ্রামের গল্প শোনায় না(!) ঠিক তেমনি হাতরাস আর পুলওয়ামা দাদার ইচ্ছায় হয় না(!) তাই খেলা ভেস্তে দেবার চেষ্টা করবেন না। খেলতে দিন। খেলা হোক। আমরা দর্শকরা তো মাঠ ঘিরে গোল করে বসেই আছি। আর দিনের শেষে খোরাক হিসাবে 'কাঞ্চনকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী' বা 'জাপানী তেলে নতুন করে জাগানো মিঠুনদা নাচুননা' দাগিয়ে মিম করার আগে একটু ভাববেন, আপনার রাজনৈতিক জন্মের অনেক আগেই জ্যেঠুরা এসব 'বসন্তের দাগে দাগী' বিপ্লবজ্যেঠু বা অনিলজ্যেঠু কে জিতিয়ে এনেছিলেন, অবশ্যই মানুষের জন্যই। মানুষের জন্যই তো আজকের খেলা। শুধু খেলতে খেলতে মাথায় রাখবেন আপনার হাতে মধুজা থাকলে দিদির হাতে মহুয়া আছে, আর দাদার সাথেও নিশ্চয়ই এরকমই কেউ আছে!
তাই খেলা হোক। আমরা আছি।
কিন্তু শুধু এই খেলা হবার কথা লিখতে আমি বসিনি। আসলে খেলার মাঠ থেকে খেলা আজকাল শেষ হচ্ছে না। খেলুড়েরা আজকাল ভুলে যেতে বসেছে আমাদের বিকালের খেলা, সন্ধ্যা নামার সাথেই শেষ হয়ে আসে। আর তারপর বাড়ী ফিরে হাত-পা ধুয়ে একবাটি মুড়ি খেয়ে পড়তে বসতে হয়। ঢুলে ঢুলে চোখ লাল হয়ে গেলেও রাত দশটা না হলে পড়ার ছুটি নেই। কাল স্কুলে যে পন্ডিত স্যারের ধাতুরূপ, শব্দরূপের পড়া দিতে হবে। না হলে? সবাই জানে, লাঠিটা পিঠেই ভাঙবে।
তাই,
-'খেলা হবে।'
- অবশ্যই হবে।
-*"খেলা শেষে পড়তে বসতে হবে"।*
তাই,
*'খেলা হবে'* শ্লোগান যত জোরে উঠবে, ততধিক জোরে যেন উত্তর হয়:
*"খেলা শেষে পড়তে বসতে হবে"।*
*** ছবিটা আমি ফেসবুকে কোন এক বন্ধুর ওয়ালে দেখেছিলাম। এরকমই আর একটা খুব জনপ্রিয় ছবি আগে দেখেছিলাম যেখানে দেখেছিলাম পাড়ার চায়ের দোকানে বাইকে বসে কয়েকটা ছেলে আড্ডা দিচ্ছে আর চায়ে চুমুক দিচ্ছে। প্রত্যেকের হাতে ধরা পতাকার রঙ কিন্তু আলাদা। যদি ছবিটা মনে পড়ে তাহলে আর একবার ভেবে দেখুন ওদের মধ্যেই একজন ছেলে কিন্তু আরেকজন ছেলেকে উদ্দেশ্য করেই এই কথাগুলো মজা করেই লিখেছে! এটাই তো খেলা। এটা ওদেরই খেলা। ওদের পাড়ার খেলা। আমাদের শুধু খেলা শেষে পড়তে বসার কথা মনে পড়িয়ে দেবার কথা। আমি, আপনি ওদের মাঝে ঢুকে ওদের খেলাটা গুলিয়ে দিচ্ছি না তো!
*** মতামত আমার একান্তই নিজের। আমার রাজনৈতিক মতামত আমার নিজস্ব, তা আমি আপনার উপর চাপিয়ে দিতে চাই না। তবুও দিনের শেষে তো আমি মাস্টারমশাই। পড়তে বসার কথা মনে পড়িয়ে দেওয়া আমার কাজ। বড়ই অভাব আমাদের এই সময়ে! তাই তো কান কামড়ে মনে পড়িয়ে দিতে হয়, খেলা হবে! একবার নয় একশো বার হবে! কিন্তু খেলার শেষে পড়তে বসা হবে।
*** দুটি ছবিই আমার ফেসবুক থেকে সংগ্রহ করা। অন্য ছবিটা কমেন্টসে দেওয়া আছে।

Comments

Popular Posts