তবু আমি ব্রাজিল।।(চতুর্থ এবং শেষ পর্ব)

তবু আমি ব্রাজিল।।(চতুর্থ এবং শেষ পর্ব)
২০০৬ বিশ্বকাপ। জার্মানী।
ফ্রান্স এর কাছে হেরে ব্রাজিল আর জার্মানী র কাছে 'ওই লোকটা' র দল: দুজনেই বাদ এবার এর বিশ্বকাপ থেকে নক আউট পর্যায় এ যাবার আগেই। তোমার দল এর কথা আর কি বলবো? যত কম বলা যায় ততই ভালো। আর ব্রাজিল এতো আগে হেরে গেলেও কিছুটা টীম গেম এর নমুনা রেখেছিল। রোনাল্ডো ৩, আদ্রিয়ানো ২, আর ফ্রেড, গিলবের্টো, জুনিনহো, কাকা প্রত্যেকে ১ টা করে গোল করেছিল। আসলে গোটা টীম টার যে কেউ যখন তখন গোল করার ক্ষমতা রাখে। কাকা আর রবিনহো এই দুই অস্ত্র আগামী র দিকেই তাকিয়ে রইলো। পেরেইরা র গেম প্ল্যান আর স্ট্রাটেজি বোঝার আগেই শেষ হয়ে গেল বিশ্বকাপ যাত্রা। চূড়ান্ত অসফল রোনাল্ডিনহ, রোনাল্ডো রা। টীম টা এক সুরে বাঁধবার আগেই শেষ। বিদায় জার্মানী।।
২০১০ বিশ্বকাপ। সাউথ আফ্রিকা।
ওয়াকা ওয়াকা!!!দিস টাইম ফর আফ্রিকা। শাকিরা হাজির।
জাবুলানি বল আর ভুভুজেলা বাঁশি নিয়ে আফ্রিকা প্রস্তুত।
গোটা বিশ্ব আজ প্রস্তুত হয়ে আছে এবার আবার। কেন?
কেন কি বলছো? 'ওই লোকটা' আবার আসছে যে টীম নিয়ে। মানে!! সেটা আবার কি করে? 'ওই লোকটা' তো দেশের হয়ে তো বটেই, এমনিও ফুটবল খেলা ছেড়ে দিয়েছে। মাঝে মাঝে টিভি তে খবর এ দেখা যায়- আজ কয়েক শ কোটি কর ফাঁকি র জিজ্ঞাসাবাদ এ, কাল মিডিয়া কে মারধর করার জন্য তো পরের দিন তো প্রকাশ্যে মাদক সেবন বা তারপরেই একে তাকে চরম গালি-গালাজ করার জন্য। 'ও' এখানে কি করে এলো? দেশের প্রেসিডেন্ট এর বাক্তিগত অনুরোধ আর হস্তক্ষেপে 'ওই লোকটা' এখন ওর দেশের কোচ, ম্যানেজার। নিয়ে এসেছে তারুণ্যে ভরপুর এক টীম যার পাঁচ জন এর বয়স তখন বাইশ, ডি মারিয়া, আগুএরা, হিগুয়েন আর লিও, আর তেভেজ, মাসেরেন, রডরিগেজ- এরা কেউই তখন ত্রিশ এ পৌঁছায়নি। হিগুয়েন এর হ্যাট্রিক দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে, আবার মেক্সিকো র সাথে হিগুয়েন এর গোল, যখন তোমার টীম এগিয়ে চলেছে, তখনও তোমার সেরা অস্ত্র মেসি তখন কোনো গোল পায় নি। শুরুর সময় এ তুমিই বলেছিলে, 'ও আমার মতো খেলে'। তাই তো আমরা যারা 'ওই লোকটা' কে ফুটবল এর ভগবান জেনে এসেছি, আমরা সব ম্যাচেই মেসি র দিকে তাকিয়ে আছি। কিন্তু গোল করতে হয় তো দেখি নি এবছর, তবে কিছু টাচ আর ড্রিবল আর গোল এসিস্ট করা দেখেছিলাম। মনে হয়েছিল, তুমি বলেছো, তাহলে অবশ্যই কিছু আলাদা। তোমার টীম যে ভাবে এগুচ্ছিল তাতে ভালো কিছু আশা করেছিলাম। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনাল এ জার্মানী র সাথে চার গোল এ হার ছিটকে দিলো এবার এর মতো। যে জার্মানী কে তুমি একসময় ধ্বংস করেছিলে, তারাই পর পর দু বার এই ভাবে আটকে দিল। তবে মাঠের বাইরে 'ওই লোকটা' র হাত পা ছোঁড়া, কোরিয়া এর ম্যাচ এ বাইরে আসা বল একবারও না তাকিয়ে ব্যাক হিল মেরে মাঠে ফিরিয়ে দেওয়া বা উঁচু থেকে বাইরে আসা বল পায়ের তালু তে জমিয়ে প্লেয়ার এর হাত এ তুলে দেওয়া দেখে মনে হচ্ছিলো পারলে এখুনি নেমে পরে মাঠে। মেসি কে খেলার শেষে ছুটে এসে আনন্দে জাপটে ধরা, কোট প্যান্ট পরা হাত পা যে বল প্লেয়ার এর মতো ছুটবে না সেটা না জেনেও বল লিফট করা বা ভলি করে যতবার মাঠে পাঠিয়েছ, ততবার ই পুরোনো দিন মনে পরে যাচ্ছিল।
একই ভাবে বিদায় নিলো ব্রাজিল। কাকা, রবিনহো, ফাবিয়ানও এর কিছু চমক ছিলো, কিন্তু তা ছিল খুবই ক্ষণস্থায়ী। গ্রপ এর ম্যাচ গুলো জিতলেও শেষ ম্যাচ পর্তুগাল এর সাথে গোলশূন্য শেষ করে কোয়ার্টার ফাইনাল এ গেল শুধু মাত্র নেদারল্যান্ড এর খেলা দেখতে। সেদিন শুধু কমলা হয়ে গিয়েছিল মাঠ। পারছিল না ব্রাজিল। সমস্ত ছন্দ হারিয়ে ফেলেছিল। স্নেইডার আর ভ্যান পার্সি গোটা মাঠ জুড়ে ব্রাজিল কে ছিঁড়ে ফেলেছিল।
ফটবল এর কুলীন ব্রাজিল, পাঁচ বার বিশ্বকাপ জেতা ব্রাজিল, হাজার হাজার বলপ্লেয়ার যার গোটা ইউরোপের ক্লাব গুলো রাজত্ব করে, যার ধর্ম ফুটবল- এ কি সামনে রাখছে আমার পরের প্রজন্মের কাছে। আগামী দিন বড়োই চিন্তার। ভুলে গেছে টোটাল ফুটবল, কিছু প্লেয়ার এর ছোট ছোট প্রতিভার সামান্য বিচ্ছুরণ দিয়ে গোটা পৃথিবীকে মোহিত করা যায় না। আওয়াজ উঠলো দুঙ্গা কে সরিয়ে দেবার জন্য, একই ভাবে 'ওই লোকটা' কেও সরিয়ে দিতে চাইছে ওর দেশ।
২০১৪, ব্রাজিল। ব্রাজুকা বল আর শাকিরা র আন অফিসিয়াল ভিডিও 'লা লা লা....ব্রাজিল' নিয়ে শুরু হলো আমাদের এবার এর বিশ্বকাপ। এবার হেক্সা হচ্ছেই। একে তো দেশের মাঠে খেলা আর তার উপর নেইমার দারুন ফর্মে। বাকি ব্রাজিল দল টা কে সবাই যেন ভুলে গেছ, যেন একা নেইমার ই বিশ্বকাপ জেতাবে। মিডিয়া তার সত্যি-মিথ্যার ফানুস এমন ভাবে উড়িয়েছিলো, যাতে আমরা মনে করে নিয়েছিলাম, এবার, এবার ই আবার হচ্ছে। ঠিক অন্যদিকে এ তোমার টীম এর মেসি কে নিয়েই ছিলো সেই একই উন্মাদনা। খেলা কিছুদূর এগুবার পর ই দেখা গেল, এই দুজন ভালো গোল করছে কিন্তু একা বিশ্বকাপ তুলে দেবে, সেই ভরসা নেই। ব্রাজিল যখন কোয়ার্টার ফাইনাল এ জার্মানী র কাছে সাত গোল খেয়ে বিদায় নেবার আগেই যখন কলম্বিয়া র ম্যাচ এ নেইমার চোট পায় (বা বলা যায় চোট দেওয়া হয়) এবং এবছর এর মতো বিশ্বকাপ খেলা থেকে বসে যাওয়ার আগে এটুকু বুঝতে পারছিলাম, বাকি ব্রাজিল টীম টাই যেন বসে গেল। যে ফিফা তার ড্রিম টীম এ এবছর চার ডিফেন্ডার এর মধ্যে ব্রাজিল এর দানি আলভেজ, থিয়াগো সিলভা, আর ডেভিড লুইজ কে রেখেছে তারা এই জার্মানী র ম্যাচ এ কোথায় গেল। নেইমার এর চোট গোটা টিমে সংক্রামিত। অস্কার, ফ্রেড, পৌলীনো, মার্সেলো, হাল্ক সবাই যেন ছন্নছাড়া আজ। ক্যাপ্টেন থিয়াগো সিলভা ও হলুদ কার্ড দেখে মাঠের বাইরে। সবথেকে বড় ব্যবধান এ ব্রাজিল হারলো। স্কোলারি ও পারে নি এবার এর টীম কে এক সূতোয় বাঁধতে। তৃতীয় স্থান এর ম্যাচেও আবার নেদারল্যান্ড এর কাছে তিন গোল এ হারলো। অন্যদিকে তোমার টীম কে জার্মানী হারালো পরপর তিন বার ফাইনাল এ, ১৯৮৬, ১৯৯০ আর ২০১৪। দুটো টীম এর দুই বড় প্লেয়ার যাদের কাঁধে ভড় করে বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন দেখছিলো দুই দেশ, তাদের দুজনার ব্যক্তিগত গোল সংখ্যা চার হলেও কোথায় সেই টীম গেম, কোথায় সেই ছবির মতো বলপ্লেয়ার দের পাশ যা ডিফেন্ডার দের চিড়ে দিয়ে অন্য ফরওয়ার্ড কে দিয়ে গোল করাবে!!
না, এই বছর টা তোমার আমার কারোরই ভালো গেল না।
তবু, তবু আমি ব্রাজিল।
এই লেখাটা শেষ করবো অদ্ভুত এক ভার্চুয়াল রিয়ালিটি বা অন্য ভাবে বললে পরা-বাস্তব এর কাল্পনিক গল্প দিয়ে।
২০০৬ সাল। বিশ্বকাপ শুরু র আগে আগেই দেখেছিলাম এটা। টিভি তে কোন একটা ম্যাচ দেখানো শুরু হচ্ছে। ব্রাজিল এক পক্ষে আর অন্য দিকে লাল জার্সি। ব্রাজিল এর জাতীয় সংগীত হচ্ছে। ক্যামেরা যেমন ভাবে এই সময় একটার পর একটা প্লেয়ার এর মুখ দেখায় সেরকম ভাবেই দেখিয়ে চলেছে। প্রথম রোনাল্ডোর মুখ, প্রচন্ড দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মুখে জাতীয় সংগীত এ গলা মেলাচ্ছে, এর পর ক্যামেরা পাশ এ সরে গেল, দেখলাম কাকা, আর তার পরেই ক্যামেরা পরের জনার কাছে গেল। 'বেঁটে মতো ওই লোকটা', সবুজ কলার হলুদ জার্সি পরে মাথা উঁচু করে ব্রাজিল এর জাতীয় সংগীত গাইছে! ক্যামেরা পরের জনার কাছে আবার ফিরে এলো। ওমা! সেই 'ওই লোকটা' ব্রাজিল টীম এ ব্রাজিল এর জার্সি পড়ে ম্যাচ খেলতে নেমে গেছে!!! এরপর আমার এই গল্পটা নিয়ে আমার আর কিছু বলার নেই। অনেকেই এটা দেখেছে। এর পর যখন 'ওই লোকটা' কে এই ব্যাপার এ জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তখন উত্তর দিয়েছিল, "ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা র যতই ফুটবল নিয়ে শত্রুতা থাক, আমার ব্রাজিল এর জাতীয় দলের জার্সি পড়তে কোনো অসুবিধা নেই।"
ইসস, কেন তুমি আর পরলে না ওই একবার ছাড়া।
তাই, তাই আমি আজও তোমার জন্য ব্রাজিল।
তবু, তবু আমি ব্রাজিল।।
পোস্টফেস।।
লেখা টার এই অংশটা সেই অর্থে ঠিক পোস্টফেস কিনা জানিনা, তবে এই লেখাটার সাথেই জড়িত কিছু কথা, তাই আবার লিখলাম।
এর আগে বিশ্ব কাপ এর সময় আমি কোনোদিনই এরকমভাবে খুব একটা লিখেছিলাম এরকম নয়। কিছু ম্যাচ, কিছু প্লেয়ার, কিছু কোচ আর কিছু কিছু গোল নিয়ে দু-চার লাইন স্ট্যাটাস আপডেট করার মতো করে লিখেছিলাম তাৎক্ষণিক ভাবে, যেটা এ বছর ও যে কয়েকটা ম্যাচ দেখেছি সেগুলো নিয়ে যা মনে হয় তাই ই লিখি। আগের বার ই যে সব স্ট্যাটাস গুলো লিখেছিলাম তার প্রায় কিছুই মনে নেই। তবে দু একটা মেসি কে নিয়ে বা রোনাল্ডো (সি আর সেভেন) কে নিয়ে আর বেশীর ভাগ ই ব্রাজিল নিয়ে। যেমন সি আর সেভেন কে আমি বেশ কোনো একটা বাইক এর ইঞ্জিন এর মডেল আর আমাদের গল্পে পড়া পর্তুগিজ জলদস্যু দের গল্প নিয়ে লিখেছিলাম। মেসি কে নিয়ে সুইজারলান্ড ম্যাচ এর পর পরই মেসি র সুইস চকলেট খাওয়া আর হারবানা র সাথে ম্যাচে হাড় ভাঙা র কথা লিখেছিলাম। ব্রাজিল এর চিলি ম্যাচ এর আগে 'চিলি' এর ঝাল হজম করার কথা লিখেছিলাম।( পোস্ট গুলো আমার টাইমলাইন এ আছে, সব লিঙ্ক গুলো এখানে দিয়ে বিরক্ত করলাম না) আসলে এগুলো বলছি কেন? কারন, বেশ কিছু ভুল বোঝার সৃষ্টি হয় এই লেখার মাধ্যমে। এই লেখা যে একান্তই বাক্তিগত, আর তার যা কিছু সবই যে আমার ভাবনা সেটা অনেকে ভুলে যায়। আমি কখনোই আমার ভাবনা তোমার উপর চাপিয়ে দিচ্ছি না আমার লেখা দিয়ে। তোমায় কখনো একমত হতে হবে আমার লেখার সাথে সেটাও আমি বলিনি। আমি তোমার মত জানতেও চাই নি, যদি না আমি তোমায় ট্যাগ করে থাকি আমার লেখায়।(যেটা আমার কিছু বন্ধু বলেছিলো প্রথম পর্ব এর পর যে পরের পোস্ট করলে যেন তাদের জানাই, আর আমার কিছু বন্ধু কে আমি নিজের থেকেই জানিয়েছিলাম।) তা সত্বেও আমি তোমার মতামত সাদরে শুভেচ্ছা জানিয়েই আমার সাথে রাখতে চাই। তুমি কলম্বো কে সাপোর্ট করতেই পারো, তার মানে এই নয় তো আমি জাপান কে আমার এক নম্বর টীম মনে করবো না!!! আমি খেলা দেখতে বসি আমার প্রিয় টীম এর যেমন, ঠিক তেমন ই আমার অন্য অনেক পছন্দের প্লেয়ার যে টীম এর সাথে, তাদেরও। অদ্ভুত এক যুক্তিহীনতা, যেহেতু আমি ব্রাজিল কে পছন্দ করি তাই আমি যখনই সি আর সেভেন নিয়ে কিছু লিখছি বা মেসি নিয়ে কিছু বলছি, তার উত্তরে পাচ্ছি, 'কেন, নেইমার কি করলো'!! আরে!! নেইমার যা করছে সেটা যদি আমার পছন্দ হয় আর মেসি র টা আমার ভালো না লাগে, সেটার কারন ও আমায় বলতে হবে। আমি জানি এ গুলোর কোনো উত্তর হয় না। আমার মতো অনেকেই আছে যারা তার নিজের পছন্দের টীম কে সাপোর্ট করলেও সারা পৃথিবীর আরো অনেক প্লেয়ার যারা তার পছন্দের টীম এর নয় তাদের পছন্দ করে। তাদের খেলা মন মতো না হলে ক্ষোভ প্রকাশ করে। আমিই এই বার এবং আগের বার #searchingLeo তে যা লিখছি সেটা সেই দিন মেসি কি খেলছে বা মেসির খেলা দেখে আমার যা মনে হচ্ছে সেটাই লিখছি। আর হ্যাঁ, মেসি যতবার বিশ্বকাপ খেলতে আসবে, ততবারই আমি তার খেলা খুঁজবো। সেই একটাই কারণ। 'ওই লোকটা' বলে ছিলো মেসির প্রথম বিশ্বকাপ খেলার সময় যে, "ও আমার মতো খেলে"। এর সাথে নেইমার পরের দিন কি খেললো বা ব্রাজিল হারলো কিনা, তার কোনো সম্পর্কই নেই। এটা গেলো একরকম। আরো একরকম যা আমি শুনেছি আমার পুত্রসম ছাত্র, বন্ধু, ভাইপো, ভাইপোর বন্ধু মানে ঠিক আমাদের পরের জেনারেশন এর কাছে, যা আমায় খুব অবাক করে দেয়। একজন আমায় বলেছিলো, একটা বিশ্বকাপ এর ম্যাচ দিয়ে মেসি কে বিচার করা যায় না। একদম ঠিক। কিন্তু একটা টুর্নামেন্ট দিয়েও বিচার করা যাবে না! আচ্ছা, একবার না হোক, দুবার! না, তাও নয়। তার জন্য আমায় নাকি নিয়মিত ক্লাব ফুটবল দেখতে হবে। তাই? এখানে একটু পিছিয়ে যেখানে শুরু করেছিলাম সেখানে গিয়েই বলি:
আমরা যখন বিশ্বকাপ দেখা শুরু করি তখন ই পি এল, ইউরো, কোপা, চ্যাম্পিয়ন্স লীগ শুরু হলেও আমরা তার খবর খুবই কম পেতাম, আর দেখতে পাওয়া তো ভাগ্যের দান ছিল। আমরা তাই হয়তো ব্যক্তি ছেড়ে দল বা দেশ এর খেলায় বিশ্বাস করতাম। মনে হতো যতই তুমি ক্লাব এ ভালো খেলো, বিশ্বকাপ তোমায় দেশ কে এনে দিতেই হবে। তবেই তুমি দেশের কালজয়ী প্লেয়ার হবে। আমাদের কাছে বিশ্বকাপ কোনো এক্সট্রা কম্পেটিশন নয়, এটাই ছিল একমাত্র। আর বাকি ক্লাব খেলা ছিলো ল্যাটিন আমেরিকার গরিব দেশের প্লেয়ার দের কিছু টাকা রোজকার এর জায়গা। দীর্ঘ চার বছর ক্লাব প্রাক্টিস আর প্রচুর টাকা প্লেয়ার কে দেশের হয়ে খেলার জন্য রসদ জোগাতে সাহায্য করতো। তাই হয়তো এই মূহুর্তে বিশ্বের সেরা প্লেয়ার তার সেরার তকমা টাই রাখতে পারবে না যদি না এবার(২০১৮) দেশ কে বিশ্বকাপ এনে দিতে না পারে। তাই হয়তো শচীন জীবনে সব রেকর্ড করেও শেষ পর্যন্ত টেনে যায় একবার ওই কাপ টায় হাত দেবার জন্য। আর 'ওই লোকটা' যখন কাপ টায় চুমু খেয়ে আকাশ এ তুলে ধরে তখন আর কেউ জানতে ও চায় না 'ও' ক্লাব লীগ এ কটা গোল করেছে। বিরাট কোহলি কে আই পি এল বা রঞ্জি এর রেকর্ড দিয়ে মাপি না দেশের ম্যাচ এর রেকর্ড দিয়ে মাপি!! আমি বার্সা র ত্রিফলা র খেলা দেখতে ভালোবাসি, ভালোবাসি সি আর সেভেন এর গোল করা দেখতে, কিন্তু যখন ই বিশ্বকাপ আসে, তখন ই...........।।।। ( আমাদের সময় একবার ম্যান ইউ সে বছর বিশ্বকাপ এর সেরা ন জন প্লেয়ার কে সই করিয়েছিল, আর মাঝ মাঠ এ কাকে নামবে আর কাকে বসিয়ে রাখবে, ভাবতে ভাবতেই লীগ শেষ করে ফেলেছিল)। দেশ হিসাবে বিশ্বকাপ এর ম্যাচে যতক্ষন তুমি দেশ কে তুলে ধরো, ততক্ষণই আমি তোমার সাথে। বাকি চার বছর তুমি যত খুশি খেল, তুমি হাজার গোল এর বন্যা বইয়ে দাও- অনেক মানুষ তোমার খেলায় খুশি হতে পারে। কিন্তু আমার মতো আজও অনেকেই আছে, যারা তোমাকে দেশের হয়ে বিশ্বকাপ মঞ্চে তুমি দেশের হয়ে কি করছো, সেটাই বড় কথা। প্রতিটা বিশ্বকাপ আসবে, তোমার নাম এ গোটা পৃথিবীর আকাশ বাতাস ফেটে যাবে, আর দেশের হয়ে খেলতে নেমে তুমি নাটক করবে, পারবে না, চোট পেয়ে মাঠ ছেড়ে যাবে, এটা কখনোই হতে পারে না। আমি জানি, এই টীম এর সাথে তোমার সিনক্রোনাইজেশন নেই, তোমার মতো ভালো খেলার কেউ নেই, তোমায় বল পাস করার কেউ নেই, ম্যান মার্কিং আর ফাউল এ তোমায় খেলতেই দিচ্ছে না। এসব তো হবেই!!! এসব টপকে গিয়েই তো তুমি দেশকে বিশ্বকাপ এনে দেবে। কারন তুমি এখনো দেশের হয়ে কিছু করার আগেই তো 'ওই লোকটা' র সাথে তুলনা করা হয়। স্বপ্ন তো তুমি এখনো বাস্তব এ নামিয়ে এনে হাতে দিতে পারো নি 'ওই লোকটা' র মতো। তোমার প্রতিটা মুভ, প্রতিটা বল পাস নিয়ে, তোমার সামনে তৈরি ডিফেন্ডার দের দেয়াল এ তোমার আটকে যাওয়া নিয়ে, তোমার পেনাল্টি মিস নিয়ে কথা হবেই। তোমাকে নিয়েই তো কথা হবে। না তো কি সৌদি র 'জান মালিক' কে নিয়ে কথা হবে? তোমার ভালো খেলাই মানুষ দেখে এসেছে। এখানে তোমার খেলার স্টাটিস্টিক নিয়ে আলোচনা করতে কেউ আসে নি, এখানে তো আবেগ এর জোয়ার এ ভেসে যেতেই মানুষ এসেছে। এখানে যে আবেগের ই গল্প রচনা হয়। তাই তো তোমার চুড়ান্ত প্রফেশনালিসম এ বশে যখন আগের বার বিশ্বকাপ এর পর তুমি খেলা ছেড়ে দিয়েছিলে, আর তার পরেও আবার দেশের হয়ে খেলতে এসেছো, সে তো আবেগ এর জোয়ার এ ভেসেই এসেছো। আমি তোমার এই আবেগ কে সম্মান জানাই। তোমার বিশ্বজয় করা আমার কাছে ভয় এর নয়, তার থেকেও অনেক বেশী কিছু পাওয়া। আমি এটা জেনে যাবো 'ওই লোকটা' ভুল বলে না। তাই, তাই তোমাকে খেলতেই হবে দেশের জন্য। তোমার প্রতিটা স্কিল, প্রতিটা মুভ দেশ কে ভেবে। এই একটা জায়গায় কোনো অবহেলা বা কম হলে আমরা মেনে নেবো না। বারবার, শতবার, হাজারবার বলবো। আমি আমার মতো বলবো।


Comments

Popular Posts