আগ্রা 97


আগ্রা 97


 কানপুর এর দু বছর এর মধ্যে আমরা প্রথম যে ট্যুর করেছিলাম, তা হল আগ্রা।।
ডিসেম্বর এর শেষ, কানপুর এর ভোর ৬ টায় তুফান এক্সপ্রেস ধরার তাড়া, প্রায় রাত থাকতে গোয়ালটুলি থেকে বেরিয়ে স্টেশন এ এসে আমরা যখন পৌছালাম, তখন সবাই বেশ ক্লান্ত। এসে যথারীতি শুনলাম তুফান তিন ঘন্টা লেট। কোই বাত নেহি। স্টেশন এই বসে চা খেয়ে কাটালাম। আসলে ক্লান্ত লাগছিলো না কারণ বাড়ী আসার আগে বেড়াতে যাচ্ছি, ফিরে এসে বাড়ী আসবো।
এই ছবি গুলো আপলোড করে বেড়ানোর গল্প শুরু করার আগে একটা কথা বলে নি। আগের দিন খাজুরহ র ছবি দেবার পর আমার এক একদা বন্ধু (বর্তমান বন্ধুপত্নী) বলেছে এবার যেন ওর ভালো ভালো ছবি আপলোড করি আর ওকে ট্যাগ করে দি। কিন্তু ছবি গুলো স্ক্যান করার পর আমি দেখলাম আমার একটাও ছবি খুব ভালো লাগছে না, মানে ও যত সুন্দরী ছবি গুলো তার এক অংশও নয়। কিন্তু কি করবো। আমি সব ছবি ই আপলোড করি একটা নির্দিষ্ট অ্যালবাম এ। আমি জানি, আমাদের সত্যি ই আজ এখন সময় এত কম, কেউ বসে বসে আমাদের এই পুরোনো ছবি গুলো দেখবে না। বিশ্বাস কর, আমি চাই ও না বা এরকম কোনো আশা করি ও না যে আমাদের বন্ধুরা আমার অ্যালবাম এর সব ছবি গুলো দেখবে। কিন্তু এটুকু জানি, আমরা যে ছ' জন এই বেড়ানো তে ছিলাম, তারা সব ছবিই দেখবো, সে আজ না হোক, কাল, পরশু বা যখন সেই অফুরন্ত অবসর থাকবে। থাক না, ছবি গুলো চট করে খুঁজে পাবার জায়গা হিসাবে এই ফেইসবুক। কি বলিস সবাই?
যাই হোক, অনেক হলো ধান ভাঙতে শিব এর গীত। এবার আসল কথায় আসি। আমাদের মধ্যে অনেকেই বা মনে হয় প্রায় সবাই ছিলাম আগ্রা যাবার জন্য উদগ্রীব। আমরা তো বটেই, এমনকি রাজীব ও স্বাতী ও। আমরা ছিলাম প্রেমের সৌধ তাজমহল দেখার নেশায় বুঁদ, আর রাজীব স্বাতী ও প্রেমের সাক্ষী হিসাবে তাজমহল এ শপথ নেবার কথা ভাবছিল। (রাজ কলেজে এর প্রেম ওদের, তখন পরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে চলেছে, যদিও রাস্তা এতো মসৃন ছিলো না, যাই হোক। আজও সেই জুটি কন্যা সহ তাজমহল দেখে। এটাই আমাদের প্রাপ্তি। যদিও একটা কথা আমি তখন ভাবি নি, পরে জীবনের প্রায় দুপুর অতিক্রান্ত করে এসে আমি ভাবি, সত্যিই তাজমহল প্রেমের শপথ নেবার জায়গা!!! আমি তো কিছুতেই ভাবতে পারি না, শুধু মনে হয় বাদশাহ এর তাজমহল নির্মাণ কোন প্রেম এর বহিঃপ্রকাশ ছিল না, ছিল শুধু ক্ষমতা আর ঐশ্বর্য র আস্ফালন। বাদ দাও, এসব ফালতু কথা। রাজীব স্বাতী কিছু মনে করবে না জেনেই আমি 'ভাট' বকে চলেছি।)
আগ্রা পৌঁছেই আমরা হোটেল এ ব্যাগ রেখেই সেই বিকালে তাজ দেখতে ছুটলাম। না, কোনো দিকে তাকাই নি আর। টাঙ্গা ভাড়া করেই ছুটেছি। দেখলাম, দুচোখ ভরে দেখলাম। কিছুতেই আশ মেটে না। আরো, আরো কিছুক্ষন থাকতে মন চাইছিলো। একটাও ছবি সেদিন বিকাল আর গোধুলি তে তুলি নি। মন ভরে শেষ বিকালে তাজ এর উপর রং এর খেলা দেখেছি। ফিরে এসেছি হোটেল এ সবাই একটাই মন নিয়ে, না, এ হতে পারে না। কিছুতেই এতো কম সময় এ দেখা হতে পারে না। আবার যাবো কাল। আর কিছুই দেখার নেই তাজ ছাড়া। সব প্রোগ্রাম বাদ। বাদ দিয়ে দিলাম ফতেপুর সিক্রি, আবার কাল সকাল সকাল যেতে হবে, যত টুকু সময় পাবো, তাজ এই থাকবো। রাত ছিলো সেদিন স্বাতী র জন্মদিন এর খাওয়া আর খাওয়ানোর। অসাধারণ এক স্মৃতি হয়ে যাওয়া ঘটনা তার একটু আগেই হোটেল এর পাশের রুমে ঘটে গেছে, আমাদের জন্য (না, কেউ জানে না আমরাই ছিলাম সেই ঘটনার সাক্ষী, কি বন্ধুরা মনে পড়ে তো।দিব্য, কি বলিস!!! ছকুর চেঁচানো, আর দোষ পড়লো কার ঘাড় এ)
পরের দিন কোনো রকম এ রেড ফোর্ট এ ঘন্টা খানেক কাটিয়েই আবার পৌঁছে গেলাম তাজ এ। সারাদিন, বিকাল।হয়ে প্রায় সন্ধ্যা অবধি কাটালাম শুধু তাজ এ। সত্যি, আমরা সেদিন দুপুর এর খাবার খাই নি, ভিতরেই ছিলাম। অদ্ভুত এক পাগলামো ছিলো আমাদের। ছবি গুলো দেখতে দেখতে মনে পড়লো সব ছবি ওই দিন এর। শেষ বেলায় ফিরে আসছিলাম যখন, শুধু ফিরে ফিরে দেখছিলাম। কেন? জানি না। কি দেখছিলাম? জানি না। ডিসেম্বর এর আগ্রার ঠান্ডা তখন আমাদের ধপধপে মার্বেল বেয়ে মস্তিষ্কে আঘাত করছে, দাঁড়াতে পারছি না, তবুও মনে হচ্ছে আবার ফিরে যাই। ( আমরা সেদিন প্রায় সারাদিন থাকার সময় আমাদের অনেক পরিচিত বন্ধুর সাথে দেখা হয়েছে, যারা এসে দেখে ফিরে গেছে। কিন্তু আমরা ওখানেই ছিলাম, একবার নীচে নামি তো একবার উপরে যাই, একবার এ প্রান্ত তো আর একবার ওই প্রান্ত। ভাবা যায়, আমার এক ছোটবেলার বন্ধু যে তার বাবা মা এর সাথে বর্ধমান থেকে গিয়েছিলো, তার সাথেও ওখানে দেখা হলো। কি মহসীন, মনে পড়ে? ছবি আছে, দেখ।)
তাজ দেখা ছাড়া আর যা যা আমরা সেবার করেছি:
এই বার এর আগ্রা তে আমার দুই বান্ধবী র ই বেশ বিদেশী দের সাথে ছবি তোলার শখ হয়েছিলো। আমি ও কিন্তু তাতে না বলিনি। তুলে দিয়েছিলাম। কি রে, স্বাতী, মিঠু মনে আছে? না থাকুক, ছবি দেখ। আমি আর দিব্য ছিলাম বিড়ি তে ব্যস্ত। সে ছবি ও আছে দেখছি। তবে দিব্য কে এক ছবি তে দেখলাম মিঠুর ছবি বেশ মনোযোগ সহ তুলছে। বেশ ভালো।
রাজু খাবার এর ভাগ বা আমাদের যত্ন করে সাজিয়ে দিচ্ছিল। রাজীব দেখলাম রুম এর টিভি র রিমোট টা নিয়ে মোবাইল ফোন এর মতো ব্যবহার করছে। এছাড়াও রাজীব আরো "অন্যান্য" অনেক কাজে ফাঁকা সময় এ ব্যস্ত থাকছিল। মিঠু লেপ মুড়ি নিয়েই ভালো ছিল। আর কম্বল এর গল্প থাক, এখানে করে কাজ নেই। আমরা কেউই কিন্তু তাজমহল এর চূড়া ধরার চেষ্টা একবারও করিনি সেটা অ্যালবাম দেখলেই বোঝা যাবে, কিন্তু রাজু হটাৎ তাজ ছেড়ে রেড ফোর্ট এর কি একটা চূড়া ধরতে গেল কেন, কে জানে?
এই অ্যালবাম এর ছবি গুলো আমি কোনো নাম দিই নি, ইচ্ছা করেই। তবেই কয়েকটা ছবির নাম আমি ভেবেছি। বলি, আশা করি বন্ধুরা খুঁজে নিতে পারবে। ছবি গুলো র নাম হলো:
" স্বাতী, মিঠু আর মিঠুর আত্মীয়রা"
" মিঠু, স্বাতী আর স্বাতীর আত্মীয়রা"
আর "একটা ছবি" সেদিন তোলার পর প্রায় লুকিয়েই রাখতাম, তখনও সেই ছবি টা দেখানোর সময় হয় নি। আজ সেই সময় পেরিয়ে এসেছি আমরা, তাই সেই ছবিটাও দিলাম এখানে। ওটাই আমার তোলা এই অ্যালবাম এর সেরা ছবি।
অনেক ছবি আছে যেগুলো কি তুলেছি আর কি এসেছে সে সব ভেবে দেখার তখন সময় ছিলো না, কিন্তু আজ দেখতে দেখতে মন ভরে গেলো। আজ এই থাক। এরপর আমার বন্ধুরা যেমন পারে লিখুক।
** তোদের কাছে এই বেড়ানো র যদি অন্য ছবি থাকে তাহলে এই অ্যালবাম এই আপলোড কর। আমি এই প্রতিটি অ্যালবাম এ তোদের কন্ট্রিবিউটর হিসাবে অ্যাড করেছি, তোরা এডিট ও করতে পারবি এই অ্যালবাম গুলো।
ছবিগুলো তুলেছিলাম কোডাক কোরমা তে, কিছু কিছু ছবির ডি এস এলার এফেক্ট !!!





































Comments

Popular Posts