আবার আমি নতুন করে ঐশ্বর্য রাই এর প্রেমে পড়লাম।


আবার আমি নতুন করে ঐশ্বর্য রাই এর প্রেমে পড়লাম।


--"দেখ বেটা, স্বপনকো সাথ দো হি বাতে হতে হ্যায়- ইয়া তো পুরে হতে হ্যায়, ইয়া টুট যাতা হ্যায়। লেকিন মেরে সাথ এক ন্যায়ি বাত হুঁয়ি: যব তু প্যায়দা হুয়ি, মেরে স্বপ্নে হি বদল গ্যায়ে, যো ম্যায় আপনে লিয়ে চাহতা থা ও অব তেরে লিয়ে চাহনে লাগা।"
আমার মনে হয় পৃথিবীতে একমাত্র দেশ ভারতবর্ষ যেখানে স্বপ্ন উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া যায়। এখানে বাবা তার ডাক্তার না হতে পারার সব যন্ত্রনা ভুলে যায় ছেলের ডাক্তার হওয়াতে। ঠিক তেমনই কোনো কিছু না হতে পারার ইচ্ছা অতি সংগোপনে লালন-পালন করে ছেলের বড় হবার সাথে-সাথে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম পেরিয়ে যায় স্বপ্নগুলো ধরবার আশায়। একটার পর একটা প্রজন্ম পার করে স্বপ্নগুলো হয়ে যায় মালিকহীন। এখানে স্বপ্নের মৃত্যু হয় না। স্বপ্নগুলো এক হাত থেকে আরেক হাতে বদলে যায় শুধু সময়ের সাথে সাথে। পারিবারিক বাড়ী-গাড়ী আর গরু-মোষ এর স্বত্ব পাওয়ার মতো করেই আমরা এখানে হাতে পাই আমার দাদুর স্কুল মাস্টার হবার স্বপ্ন, যা আমার বাবার হাত বদল হয়ে আমার কাছে থিতু হয়েছে। আর আমার ছেলের স্কুল পালানোর স্বপ্ন যা আমার গল্পে শুনেছে, তা আজ পাড়ি দিয়েছে বিদেশে। তাই তো ভারতবর্ষে স্বপ্নের মৃত্যু নেই। বাস্তবের মাটিতে আমরা তাকে নামিয়ে আনবো ই, সে আমি না পারি, আমার ছেলে তো পারবে, আর সে না পারলে তার ছেলে।
জানি কি অসম্ভব চাপ এই ভাবনার।
--কেন তুমি এমন স্বপ্ন দেখবে যা তুমি কোনোদিনই বাস্তবায়িত করতে পারবে না আর চাপিয়ে দেবে আমার উপর।
কি প্রচন্ড যন্ত্রনা। কি প্রচন্ড অপমান। কি অসম্ভব খারাপ লাগা। তোমার দেখা স্বপ্ন যখন তুমি আমায় দিয়ে পূরণ করতে চাও, তুমি একবারও ভাবো না, এর জন্য তোমার আমার সম্পর্কের ভালোবাসাটাই কেমন হয়ে গেছে। তোমায় আমি এখন আমার প্রধান শত্রু ছাড়া ভাবি না। তোমায় এখন আমি সহ্য করতে পারি না। তোমার ভালোবাসা আমি তো ভুলেই গেছি। আমার একটু আনন্দও আমি এখন তোমার সাথে ভাগ করতে চাই না। শুধু তোমার দেখা স্বপ্নগুলোর চাপে।
আর কি কি ভাবে কি কি করলে আমি ওকে এই জায়গায় পৌঁছে দিতে পারবো! সারাদিনের ক্লান্ত পরিশ্রান্ত অফিস ফেরত বাবা তাই টুয়েলভ এর ক্যালকুলাস নিয়ে বসে যদি কোনোভাবে ইঞ্জিনিয়ারিং এ চান্স টা পাওয়ানো যায়! আর একটু চেপে ধরলে হয়তো এবছরই পাবে! শেষ পর্যন্ত লড়ে যায়, শেষ দেখতে চায়। আর একটু! কি প্রচন্ড হতাশ হয়ে পরে ভেক্টর এর মতো প্রথম চ্যাপ্টারের একটু অঙ্ক ভুল দেখলে। জিজ্ঞাসা করতে ভুলে যায় সারাদিন বাদ এসে সেই ছোটবেলার মতো করে, 'আজ স্কুলে কার সাথে টিফিন খেলে?, আর কি কি হলো আজ?, আজ খেলা হয়েছে?'
যাক, শুরু করেছিলাম যে ভাবে ঠিক অতোটা গম্ভীর কিছু লেখা বা ভাবনা নয়। আসলে একটা হিন্দি ফিল্ম দেখলাম।
"ফান্নে খাঁ" (Fanney Khan)
খুব সুন্দর অর্থ বাংলায় এই 'ফান্নে খাঁ' হিন্দি শব্দজোড়ার। 'শিল্পী মানুষ বলে কথা আরকি!'
সে আপনি যেমন মানেই করুন, মজা করেই বলুন আর খুব সিরিয়াস হয়েই বলুন এর মানে হলো- প্রচলিত ভাবে চাকরি-বাকরি করে বাড়ি এসে সংসার পালন এর বাইরে আরো অন্য যে গুনগুলো কারোর আছে জানলে আমাদের যেমন মনে হয়, সেই গুনের মানুষ জন কে ফান্নে খাঁ বলে। কি অদ্ভুত এই শব্দটার বিস্তৃতি। শিল্পী থেকে শুরু করে সব থেকে বড় বোকাকেও নাকি এই একই নামে ডাকা হয়। আসলে যে তোমায় মজা দেয়, সে মজা তোমার সুক্ষ অনুভূতি জাগ্রত করুক বা তাৎক্ষণিক হাসির খোরাক করুক, সেই মজাদার ব্যক্তি হলো ফান্নে খাঁ। কেউ কেউ এই উপাধি পেয়ে গর্বিত হয়, ভালোবাসার প্রমান মনে করে, যেমন এই সিনেমার প্রোটাগনিস্ট প্রশান্ত শর্মা (অনিল কাপুর)। বন্ধু আদির (রাজকুমার রাও) থেকে বউ কবিতা শর্মা (দিব্যা দত্ত) সবাই ওকে মজা করে, ভালোবেসে ফান্নে খাঁ বলে ডাকলেও, ওর কিছু এসে যায় না।
কারণ সেই একটাই: 'স্বপ্নের হস্তান্তর ও তার বাস্তবায়ন'।
এই ঘোরেই তার দিন কাটে তার একমাত্র মেয়ে লতা শর্মা (পিউ স্যান্ড) কে 'ইন্ডিয়া বেস্ট ভয়েস' এ গান গাইয়ে ষ্টার করা। তার জন্য যা যা করতে হয় তাই করতেই সে রাজী।
না, এরপর আর গল্প নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। গল্প তুমি তোমার মতো করেই দেখবে আর যা বোঝার তাই বুঝবে।আমি এখানে সিনেমাটার রিভিউ লিখতে বসি নি বা কোনো আলোচনা-সমালোচনা করতে লিখছি না।
যাই হোক, যে কথাটা না বললে আমার প্রেমে পড়া বোঝানোর কোনো জায়গা থাকলো না, যা হলো এই সিনেমার একমাত্র ষ্টার কাস্ট (অনিল কাপুর, রাজকুমার রাও, সতীশ কৌশিক, দিব্যা দত্ত কে বাদ রাখছি ইচ্ছা করেই) বেবি সিং এর ভূমিকায় ঐশ্বর্য রাই। আজ থেকে কত বছর আগে সেই কলেজে পড়ার সময় যখনও তুমি মিস ওয়ার্ল্ড হও নি, সেই টিভির বিজ্ঞাপন থেকেই, যেখানে ভারতে আসা ফ্লাট টিভি আর তোমার ফ্লাট পেট দেখানো নাচের ভঙ্গিমা এক হয়ে গিয়েছিল, সেই দিন থেকেই আমি তোমার রূপের গুণমুগ্ধ প্রেমিক। যত দিন গেছে তোমার নীল চোখ আর লরিয়েল খ্যাত প্রায় লাল চুল তোমাকে স্বপ্নের নাগাল ছাড়িয়ে দূরে কোথাও হারিয়ে দিয়েছে। বারবার ফিরে এসেছ তুমি অনেকভাবে। কিন্তু কোথাও মনে হয়নি তুমি এই মাটির মানুষ। সারাজীবন স্বপ্ন সুন্দরী হয়েই থেকে গিয়েছিলে, সে 'তাল সে তাল মিলা' ই হোক আর 'ক্রেজি কিয়া রে' হোক। আর আজ এতদিন বাদে তোমার এই সিনেমায় সব থেকে গ্ল্যামারাস চরিত্রে রোল করার পরও তোমার সাথে রাজকুমার রাও এর ছোট্ট কিছু কথোপকথন বা ভাব আদান-প্রদান এবং শেষে প্রেমিকা হয়ে ডাল লেকে আর পাঁচটা সাধারণ গৃহস্থর মতো বেড়াতে যাওয়া- কতো নতুন সম্ভাবনার জন্ম দেয় পর্দায়। তোমার অতি বাদামী-লাল চুল, নীল-সবুজ চোখ, তোমার কালো পোষাকের পাশে সোজা করে কথা বলতে না পারা, জীবনের সব দিক থেকে ব্যর্থ রাজকুমার রাও এর বলা বা না বলা প্রেম কেমন করে পূর্নতা পেলো: ভাবার আগেই শেষ, এক অন্য ভালো লাগার জন্ম দেয়।
আবার স্বপ্ন। অনেক অনেক স্বপ্ন বয়েই চলে আমাদের জীবন। সবার স্বপ্ন সবার মতো করেই আলাদা। তবুও এতটুকুও বুঝি না আমরা। নিশি পাওয়ার মতো করে ছুটে চলেছি। জানি, স্বপ্ন থাকতে হয়, না হলে জীবন গড়বে কেমন করে। সব জেনে,শুনে, বুঝে এবার মনে হয় আমাদের চিৎকার করে বলে উঠতে হবে:
"তেরে যাইশা তু হ্যায়,
মেরে যাইশি ম্যায় হুঁ।
তেরে মেরে যাইশা,
কোই হোগা কিওঙ।
তেরে যাইশা তু হ্যায়,
মেরে যাইশি ম্যায় হুঁ।"
** সিনেমাটা দেখতেও পারো আবার নাও পারো। না দেখলে খুব কিছু এসে যায়না। তবে আমি তো সাধারণ ভাবে রাজকুমার রাও এর সিনেমা বাদ দিইনা, সে 'বারেলি কি বরফি' হোক বা 'বহেন হোগি তেরি' হোক বা 'নিউটন'। আর এখানে তো ঐশ্বর্য আছে।
*** বাবার স্বপ্নপূরণ করছে মেয়ে, বাবার লেখা গান গেয়ে ষ্টার হচ্ছে। যে গানে বাবা কিন্তু লিখেছে: তুমি তোমার মতো, আমি আমার মতো/তোমার আমার মতো কেউ কেন হবে।
তারপরও সেই দাবী। বাবারা মনে হয় এরকম ভাবেই চায় যে ছেলে-মেয়েরা আমার স্বপ্ন নিজেদের মনে করে পূরণ করবে আমার মতো করে।
ইল্লি আরকি!! চাওয়ার আর শেষ নেই!
*** একদিনও তো কেউ জানতে চাইলো না, "কিরে!'পাব-জি' গেমটায় কোন স্টেজ অবধি গেলি?"
****ছবিটা খুব ভালো লেগেছিল। তাই দিলাম।

Comments

Popular Posts