জলঢাকায় দিন-রাত্রি।।

 জলঢাকায় দিন-রাত্রি।।

যাই হোক, লাটাগুড়ি আর মুর্তি তে খেয়ে-থেকে-ঘুমিয়ে দু দিন-রাত কাটিয়ে বেরুলাম ঝালং যাবো বলে। না, না, ওই ঝালং, বিন্দু, রকি আইল্যান্ড বা আরো সব কতকিছু আছে না, সেসব দেখবো বলে নয়! আসলে ইচ্ছা ছিল ঝালং আর বিন্দুর মাঝে রাস্তার উপর একটা রেস্টুরেন্ট আছে যেটার কয়েকটা সিঁড়ি নামলেই জলঢাকা নদী, সেখানে যদি থাকা যায় সেই ভেবেই। না, আমি খুঁজে পাইনি। কিন্তু এবার আমার সঙ্গী যে কবি। চারিদিক লোক-বসতিহীন এই রেস্টুরেন্টটিতে অনেকেই আসেন এদের খোলা ছাদে দুপুরের খাবার খেতে। নীচে প্রায় নদীর কাছাকাছি চারটে আধুনিক ব্যবস্থা-সম্পন্ন ঘর আছে। কবি আগে ঘুরে এলেও থাকার ইচ্ছা মনে-মনেই রেখেছিল। আসলে একটু অন্য জগতের মানুষ তো! ঝামেলায় যেতে চায় না, আর কি! আর আমার তো এবার শুধু খাওয়া আর ঘুম। তাই রাজী হলাম। ভাগ্যিস! রাজী হয়েছিলাম। ঘর, বারান্দা, ছাদ সবই যেন জলঢাকা নদীতে ঝুলছে। অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা। ঘরে বিছানায় শুয়ে থাকলেও নদীর জলের প্রবল উচ্ছ্বাস দেখা যায়। বিকালের মধ্যে টুরিস্টদের গাড়ীগুলো যখন সব ফিরে চলে যায়, তখন গোটা উপত্যাকায় যে নিস্তব্ধতা আর তা ভেঙে দেওয়া জলের শব্দ ধীরে ধীরে মনকে এক নতুন মাত্রায় নিয়ে যায়। নদীর পাড়ে রাত্রে মাংস পোড়ানো(বার-বি-কিউ) হোক বা চিকেন মোমো সঙ্গে সুপ দেওয়া হোক, সবেতেই 'দুই ভায়ের' হাত একেবারে ফাইভ-ষ্টার। ওহ, বলাই হয় নি তো! এই রেস্টুরেন্ট আর সাথে চার রুমের থাকার ব্যবস্থা করেছে যে দু ভাই, তারা কলকাতায় তাজ আর মুম্বাইয়ের পাঁচ-তারা হোটেলে কাজ করে আসা ম্যানেজমেন্টে চাকরী করে আসা আর কলকাতা থেকে পড়াশোনা করা পাহাড়ী ছেলে। মা আর বোন দেখাশোনা করে কিচেনের, আর বাবা দেখে দোকান-বাজার। কি ভালো লাগলো দেখে যে একটা গোটা পরিবার কি ভাবে ব্যাবসাটাকে চালিয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যায় আসে দূর থেকে কিছু লোকাল মানুষ, যারা আড্ডা দেয়, পান করে, গান করে। তারপর ধীরে ধীরে তারা চলে যাবার পর খোলা ছাদে ডিনারে বসে চারিদিকে জলের আওয়াজ আর ঝিঁ-ঝিঁ পোকার ডাক, সামনে জমাট বেঁধে থাকা অন্ধকার ভূটান পাহাড়, মনকে তুমি হারিয়ে ফেলবেই দূরের ঠিকানায়। যাই হোক, ঘোর লাগা গল্প অনেক হলো। যেটা আসল বলা হলোনা তা হলো, এই জায়গাটা আমার ছেলের সবথেকে ভালো লেগেছে। ও সকালে উঠে একবার চারিদিক একা হেঁটে ঘুরে এসেছে আর সব সময়ই নদীতে নেমে থাকছিল, আর শুধু এ পাথর থেকে ও পাথর করে বেড়াচ্ছিল। আর আমরা ঘর থেকেই বেশ ওকে দেখতে পাচ্ছিলাম। ধন্যবাদ কবি!এরকম এক জায়গার সন্ধান দেবার জন্য। আচ্ছা আর একটা কথা তো বলাই হলো না। 'ম্যাডাম' তো এমনিতে ভুলেও ক্যামেরায় হাত দেন না। আমিও সেই টেকনিকটা এখানে এসে নিয়ে নিয়েছিলাম। তার জন্য যার হাতেই ক্যামেরা থাকছিল তাকেই ডেকে-হেঁকে আমার অনেক ছবি তুলিয়ে নিয়েছি। হুঁ, হুঁ, বাওয়া!!আমিও জানি! কিন্তু আমার এই হাঁক- ডাকের প্রভাবে 'রাজপুত্র' ( গোল-গোল) সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠেই চোখ না খুলেই বলছে: " মাংকা, আমার একটা ছবি তুলে দে না!" (মানে, এরকম করেই আগের দিন বিকাল থেকেই আমি আমার ছেলেকে জ্বালিয়েছি, আরকি!) খুব সুন্দর দুটো দিন একটা রাত এখানে কাটিয়ে আবার আসার কথা ভেবে খুবই মন খারাপ নিয়েই অন্য একটা জায়গায় গেছি। সে গল্প-ছবি পরের দিন। আজ শুধু জলঢাকায় দিন-রাত্রি হোক।



Comments

Popular Posts