ফাগুর ভূত-বাংলোতে ।।

 ফাগুর ভূত-বাংলোতে ।।

ফাগুর ভূত-বাংলোতে ।। বেড়ানোর শেষ পর্ব আর আমার হাতে নেই। শেষ দু-দিন আবার নতুন জায়গা। কিন্তু খুবই অদ্ভুত এবার যে আমার জায়গা পরিবর্তন করতে খারাপ লাগছিলো না। তার প্রধান কারণ যদি হয় দূরত্ব গুলি খুবই কম, সবই প্রায় পঞ্চাশ কিলোমিটারের মধ্যে আর তার সাথে যোগ হয় ওই সুন্দর শাল-পিয়ালের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে মাঝে মাঝেই ময়ূরের ঘুরে বেড়ানো, হাতি পার হওয়া সুন্দর মনমুগ্ধকর ক্লান্তিহীন রাস্তায় যাতায়াত করার জন্য।( ছবি তো আগেই দেখিয়েছি, রাস্তায় পোজ দিতেই শুয়ে পড়িনি, মনে হচ্ছিলো সত্যি সত্যিই যদি ঘুমিয়ে যেতে পারতাম এখানে!) কোথায় যাচ্ছি সে সম্পর্কে একটু আবছা ধারণা গুগল করে পেলেও অনেক কিছুই অন্ধকারে ছিল আমার কাছে। কারণ ব্রিটিশ আমলের এক চা-বাংলোর অথিতি হতে যাচ্ছি, জনবসতি থেকে প্রায় চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরে, চা বাগানের এক টিলার উপর, যা বাকি পাহাড়গুলো থেকে বাংলাকে আলাদা করে রেখেছে, ভেবেই কিরকম যেন ভূত বাংলো ব্যাপারটা মাথা থেকে যাচ্ছিল না। যদিও যাবার রাস্তা মন ভরিয়ে দিয়েছিল কিন্তু শেষ এক কিলোমিটার যেন আর গাড়ী যেতে চায় না। কুশের কিছু কথা (এই পাঁচ দিন আমাদের সাথেই ছিল, আমাদের গাড়ীর ড্রাইভার, কাছেই এক চা বাগানের বস্তিতেই বাড়ী, শুধু একবার জিজ্ঞাসা করেছিল, কে বললো আপনাদের এখানে আসতে!) আমার চিন্তা বাড়িয়ে দিলেও কবির উপর আমার অগাধ বিশ্বাস। শুধু মনে হচ্ছিলো, যে একবার এখানে এসেও আবার আমাদের নিয়ে আসতে চাইছে, তাহলে নিশ্চই ভালো লাগার মতোই কিছু! যাই হোক পৌঁছালাম। একজন রাঁধুনি, দারোয়ান, আর একজন বাগানের মালি এসে আমাদের অভ্যর্থনা না জানিয়েই ঘরে তুললো। সামনে বারান্দা, তিনটে বেড-রুম, একটা ডাইনিং রুম, একটা ড্রইং রুম আর পিছনে কিচেন নিয়ে এই বাংলোর আজকের অথিতি আমরা দুই পরিবার। দুদিন কি খাবো জেনে একজন বাজার চলে গেল আর অন্য দুজন আমাদের খাবার ব্যবস্থা করতে। ঘরে ঢুকে বুঝলাম, কেন ব্রিটিশ ছেড়ে যেতে চাইতো না এই দেশ! প্রতিটা রুম আমার বাড়ীর সমান আর বাথরুম আমার বেড-রুমের সমান। কাঠের এই বাংলোতে আধুনিক সব ব্যবস্থার সাথেই আছে সেই রাজকীয় সাজ-সজ্জা। প্রতিটি আধুনিক উপকরণের সাথে মিশে রয়েছে এক সেকেলে রাজকীয় সাজ। যাই হোক, দুপুরের খাবার খেয়ে সামনের চা-বাগানের নেমে যাওয়া ঢালু প্রান্তে আর দূরের পাহাড়ে সূর্যের ঢলে পড়া দেখতে দেখতে সামনের কাঠের বারান্দায় বেতের চেয়ারে কখন চোখ লেগে গেছে বুঝতেই পারি নি। ছেলেগুলো বাংলোর সামনে মাঠ আর দোলনা নিয়ে মেতে আছে। আলো কমে আসছে ধীরে ধীরে, আর গোটা এলাকা জুড়ে এক নিস্তব্ধতা গ্রাস করছে। বাংলোর পিছনে মালি ঝাঁট দিচ্ছে, তার আওয়াজ, পাখিরা ডেকে ডেকে ঘরে ফিরছে, অল্প ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক: সব মিলিয়ে কেমন যেন এক মায়াবী পরিবেশ তৈরী হয়েছে। চোখ খুলে দেখলাম গরম চা আর বাকিরা এসে হাজির। চা শেষ হবার আগেই সন্ধ্যা নেমে গেল। বাংলোর কম পাওয়ারের আলোগুলো একটা একটা করে জ্বেলে দিলো। একটু সামনের জায়গাটাতে হাঁটতে হাঁটতে সামনের বাংলোর দিকে মুখ তুলে দেখি এক অদ্ভুত দৃশ্য। গোটা আকাশ ঘন কালচে নীল আর তার মাঝে এই ভূত বাংলো, যার একটা দুটো আলো টিম টিম করে জ্বলছে। ভয় লাগছে তা নয়, আবার খুব রোমাঞ্চকর তাও নয়। তবে সব মিলিয়ে এক অন্য রকম ভালো লাগার অনুভূতি হচ্ছে। কিছুক্ষন বাদেই শুরু হল আবার সেই রাত্রের মাংস পোড়ানোর পালা। আগের দিন ছিল ফাইভ ষ্টার কুকের হাতের কাজ তো আজকে যেন সেই আদিম, চিরায়তভাবে লোহার শিকে কাঠ কয়লার আগুনে ধীরে ধীরে ঝলসানো। রান্না শেষে সেই একই জায়গায় আমরা খেতে বসলাম, সামনের বারান্দায়। আসলে ঘরের রাজকীয় চেয়ার-টেবিল যেন আর পছন্দ হচ্ছে না। চারিদিকে কেউ কোথাও নেই, আমরা ছ জন আর বাংলোর কেয়ার-টেকার। খাবার পর ওই ভুতুড়ে, আলো-অন্ধকারময় বারান্দাতেই চললো আমাদের আড্ডা। উঠতে আর মন যাচ্ছে না যেন। এতো নিস্তব্ধতা যেন আগে কখনো পাই নি। ঠিক পাল্টে গেল সবকিছু যেন পরের দিন সকালেই। টিলার উপরে অবস্থানের জন্য সকালের রোদ একটু আগেই যেন এসেছে। চারিদিক এতো আলোময়, সবুজ চা-বাগান, চারিপাশে ফুটে থাকা নানা ফুল যেন মনে মনে হচ্ছে ফাগুন এসেছে এই পাহাড়ের ছোট্ট একটু অংশে। সত্যিই অসাধারণ। আবার বলি কবি তোমায় ধন্যবাদ এরকম এক জায়গায় আমাদের নিয়ে আসার জন্য। তাই তো লেখাটা প্রথমে এক নাম দিয়ে শুরু করলেও শেষ করছি অন্য নামে, "ফাগুন লেগেছিল ফাগুতে।।" *** এখানে আমাদের ছবি তোলার মানুষরা সবাই খুব ক্লান্ত হয়ে গেছে তাই খুব ভালো আর বেশী ছবি তারা ঠিক তুলে দেয় নি। আর একটা কারণও ছিল। সেটা হলো, এখানে এসে সবাই যেন কেমন ভাবে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে গেল, ছবি তুলে দেবার জন্য আর কাওকে খুঁজে পেলাম না। যাইহোক, বলতে আমায় হবেই যারা ছবি গুলো তুলে আমাদের ধন্য করেছিল: নিতু আঙ্কেল (আমি নই, গোলগোল বলেছে), মাংকা( আমি বলি) আর আমার একমাত্র বউ, স্বাতী।। **** আসল কথা: যেটা না বললেই নয়, এই তিন জায়গায় যেখানে যত ভালো ছবি দেখা যাচ্ছে সবই আমার তোলা! কি হলো, বিশ্বাস হলো না! যাও গিয়ে ম্যাডামজীকে জিজ্ঞাসা করে এসো গিয়ে! আর আমার ভালো ছবিগুলোও আমার তোলা। কিভাবে? আবার বিশ্বাস করলে না তো! ঠিক আছে সে গল্প না হয় পরে একদিন করা যাবে।




Comments

Popular Posts