আহিরকথা! (৩)

 আহিরকথা! (৩)

পুতুলের মানুষ হয়ে ওঠা!

পুতুলটা বড়ো তাড়াতাড়ি মানুষ হয়ে উঠছে!
গুটিপোকা, এক পৃথিবী 'চিকেন'বাসা আর বাইক!
হাঃ হাঃ! কি ভাবছো! সকালে উঠে ভুল বকছি! না, না! একটুও ভুল-ভাল কিছুই বলছি না। শুধু একটু সময় নিয়ে দেখো আর অনুভব কর, তাহলেই বুঝবে!
বেশ কিছুদিন আগে ঠান্ডাটা যখন বেশ জাঁকিয়ে পড়েছিল, সন্ধ্যার আড্ডায় বসে থাকতে থাকতেই ফোন। ধরেই বুঝলাম স্বয়ং তিনি ফোনে আমার সাথে কথা বলতে চাইছেন। চালাকি তো আমার একটাই ছিল আগে যে ওকে কিছু বলতে না দিয়ে আগেই বলে দেওয়া, "আসবে! চলে এসো আমাদের বাড়ী!" শুনেই আমায় একটাই উত্তর, "এতো ঠান্ডায় কি করে বেরুলে!" চুপ করে তখনকার মতো ফোনটা কেটে দিলেও বাড়ী এসে শুনলাম যে স্বাতীকে ফোন করে আবার জিজ্ঞাসা করেছে, "সাগরদা জেতু কি করে বেরুলো?" বুঝলাম শিখিয়ে দেওয়া কথাও এখন তিনি নিজের মতো করেই বলতে শিখে গেছেন সময়মতো!
দুদিন আগেই শুনলাম আর একটা নতুন কথা। পরে কার্যকারণ মিলিয়ে আবার এক নতুন উপলব্ধি। সেদিন বাড়ীতে একজন এসেছে ওর মায়ের কাছে। আমরা যাবার পর যখন তিনি চলে যাচ্ছেন তখন ও দেখলাম বারান্দা থেকে একটা কথাই বার বার
স্বাতীদি কে জিজ্ঞাসা করে চলেছে, "ও কি চালিয়ে এসেছিল?" অনেকবার জিজ্ঞাসা করার পর কেউ একবার হয়তো বললো যে হেঁটে এসেছিল। আমি ভাবলাম, এরকম প্রশ্নের কারণ কি! সেদিন ওর বাবা ফেরার পর একবার শুনলাম বাইক নিয়ে কি যেন বললো। পরে চিকেন তো ওকে সব ভুলিয়ে দেয়! তাই মনযোগ দিয়ে ভাত খেতে বসা। ভুলে গেলাম এই ছোট ছোট সূত্রগুলো। কাল রাত্রে ওর বাবার ফোনের পর আমায় প্রথমে সনু দাদার খবর জিজ্ঞাসা করার পরই জানালো,"আমার বাইক হয়েছে।"
-- তাই!
-আমি বাইক চালাচ্ছি!
--কাল কি তুমি তাহলে বাইক নিয়ে আসবে!
- না। আমি বাইক বাড়ীতে চালাচ্ছি!
এবার বুঝলাম কে কি চালিয়ে এসেছে তা জানার ওনার এতো আগ্রহ কেন! আমার বুলেটটা ও বেশ পছন্দই করে! এতো দিন ছোটখাটো বাইক সংক্রান্ত কিছু বললে পাত্তা দিতাম না। না! আর নয়! ছেলেকে সিরিয়াসলি নেবার সময় হয়ে যাচ্ছে!
- আজ স্কুল গিয়েছিলে?
-- হুঁ!
- কার কাছে বসেছিল?
--বন্ধু!
- কে তোমার বন্ধু? শ্রুতি না অননীকা?
--অননীকা নয় অলোলিকা!
- ও তাই! কেন শ্রুতি আর তোমার বন্ধু নয়?
-- না।
এতো পরিষ্কার মতামত বন্ধু নির্বাচনে খুব কমজনই পারে! যেখানে শ্রুতি ছিল ওর প্রথম বন্ধু। তাই তো স্কুলের মিস রা মেলার মাঠে আমাদের কাছ থেকে ওকে ছিনতাই করে নিয়ে চলে যায়! বাড়ী ফেরার সময়ও ফিরিয়ে দিতে মন চায় না তাদের। মিস রা ওকে বলেছে ওকে এখন স্কুলের পড়া পড়লেই শুধু হবে না, টিউশন পড়তে হবে। আসলে মিস রা ওকে একটুও মিস করতে চায় না! সে না চাইতেই পারে। আমি আসলে আর একটু এগিয়ে সামনের সেই দিনগুলো ভাবছি!
এই রকম সরস্বতী পূজো আর ভ্যালেন্টাইনস ডে র মাঝামাঝি সময়ে জন্মদিন! আর কতদিন ও আমাদের সাথে এইভাবে জন্মদিন কাটাবে! পৃথিবী জোড়া যে ওর.....!!!
হ্যাঁ! আজ ওর জন্মদিন।।
অনেক অনেক আদর আর 'চিকেন'বাসা আর তারসাথে দুহাতে তোকে মাথার উপর তুলে পাখি হওয়া!
বাবা-মায়ের কবিতা হয়ে ওঠো তাড়াতাড়ি!

11.02.2020

Comments

Popular Posts