#আহিরকথা (৪): ছেলেটা বড়ো হয়ে গেল!

ঠিক আছে, ঠিক আছে! বলো, বলো! নাও বলো।

- হ্যালো, গোলগোল?
- তুমি কে বলছো? গোলগোলের মা!
- হ্যালো স্বাতী, বল!
- স্বাতী ই ই! আরে এ! সনু কোথায়?
- সাগর বলছি। সনু কোথায়? যাবো, স্বাতী!
হয়ে গেল!
- স্বাতী দি ডাকছে আমাকে। যাই।
- কি বললো?
- এসো। এসো বললো।
- তাহলে তুমি চললে নাকি!
- আমি তো সাগর দা জ্যেঠু।
- স্বাতী দি কাকে ডাকলো? সাগর দা জ্যেঠু কে ডাকলো না গোলগোল কে ডাকলো?
- হুম। গোলগোলকে আর সাগর দা কে।
এটা কোন একদিনের ওর মায়ের সাথে স্বাতীর ফোনে কথা বলার মাঝে ও ফোনটা নিয়ে আমাদের বলতে শুরু করে। সাধারণত ও ফোন করলে বা আমরা ওর সাথে ফোনে কথা বললে ফোনটা স্পিকারে করে কথা বলি বাড়ীর সবাই মিলে। এদিনের ফোনের কথা প্রথমে আমরাও বুঝতে পারিনি, ও কি বলছে! পরে বুঝলাম ও আমায় নকল করছে! আমি স্বাতীর সাথে ফোনে যেমন করে কথা বলি সেটাই ও করছে। ও এখন সাগরদা জ্যেঠু।
একটু একটু করে বড় হয়ে উঠছে ছেলেটা। ভুলে গেলে সেই ছেলেটাকে! আরে! ওই তো আজকাল আমায় বলে,
'সাগর দার চুলটা সম্ভব নয়। সম্ভব?'
মানে কি? কি বলতে চায়! বুঝে লাভ নেই। বেশি জিজ্ঞাসা করলে বলে, 'কেকের মতো'। মানে! আমার চুল কেকের মতো! আসলে মাঝে মাঝে গায়ে-পিঠে বসলে আমার মাথায় হাত বোলানো ওর একটা মজার খেলা। ছেলে একটু বড়ো হচ্ছে সে তো বোঝাই যায়। সেদিন সন্ধ্যার আড্ডার পর ওদের বাড়ী থেকে আমাদের বাড়ী চলে এলো আমাদের সাথেই রাত্রে থাকবে বলে। আমরাও বিশ্বাস করতে পারছি না। ভাবছি, মাঝ রাত্রে হয়তো আবার দিতে আসতে হবে। কোন কিছু হলো না তো বটেই উল্টে পরের দিন সকাল থেকে যত বার জিজ্ঞাসা করা হয় কখন বাড়ী যাবে, ততবারই একই উত্তর একটু পরে যাবো। এই করে বিকাল পার করে সন্ধ্যায় নিয়ে গেলাম। একটু অবাকই হচ্ছিলাম ওর থাকা নিয়ে। এর আগে ও কোথাও একদিনও থাকেনি বাবা-মা ছাড়া। ভালোই লাগলো আমাদেরও। সারাদিন নিজের মতোই করে কাটায় রাজ্যের খেলনা নিয়ে। শুধু মাঝে মাঝে ওর সাথে একটু গল্প করে যেতে হয়।
প্রথমদিন ভাবলাম না বুঝেই চলে এসেছিল আমাদের সাথেই, কিন্তু না! পরের দিন আবার এসেছিল নিজের ব্যাগ নিয়ে- নিজের জামা, হাওয়াই চপ্পল নিয়ে। এমনিতে ছেলের কোন জ্বালা নেই, শুধু ঘুমোতে একদম ইচ্ছা করে না! সোনুদাদা না শুলে তিনিও শোবেন না! শুয়ে থেকেই কত চিন্তা!
- তোমাদের এসি টা মনে হয় খারাপ হয়ে গেছে! একটা ঢাকা দাও।
- মশা কামড়াচ্ছে!
- সিম্বা কি করছে এখন! (একটু আগেই লায়ন কিং দেখে শুয়েছে)
- সোনুদাদা ঘুমিয়েছে!
এরপরের বার যেদিন এসেছে সেদিন সকালেই এসেছে। ওর বাবা-মা ওকে নামিয়ে দিয়ে যাবার পরই প্রথম কথা,
-আমার বমি হয়েছে।
-কেন? কি হলো?
-খাবার পরই হয়েছে তো।
-আচ্ছা। ভাত খাবে না?
-ভাত খেয়েই তো বমি হয়েছে।
-আচ্ছা, ঠিক আছে। পরে খাবে।
সকালে ছাতু খাওয়া আর বিকালে দুধ খাওয়া ছেলের এক ভালো নিয়ম। আর সারাদিন যা খেতে দেবে সবই খায়। উচ্ছে ভাজা, বেগুন ভাজা, কুমড়োর তরকারি কোন কিছুতেই না বলে না, শুধু চিকেন হলে মনটা কেমন হয়ে যায়। আচ্ছা, এতো তো বলছি, এবার বলো তো,
-সিম্বার চিকেন কোনটা?
-কেন? খরগোশ, হরিণ চিকেন।
-ওর বাবার চিকেন কোনটা?
-কেন? পনীর চিকেন।
সবার আলাদা আলাদা চিকেন আছে এটা ওর কাছথেকেই আমরা শিখেছি। আর ও যেটা খায় সেটা হলো চিকেন চিকেন। আর একটা খায় সেটা হলো মটোন চিকেন!
বড়ো হয়ে যাচ্ছে ছেলেটা। পাল্টে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। নিজস্বতা তৈরী হচ্ছে। পছন্দের বা ভালোলাগার গতি পাল্টে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। চার বছর দেখছি কেমন করে বদলে যাচ্ছে। পুজোর জামা দেখানো হোক বা তার মধ্যে কোনটা কে দিয়েছে সব মনে রাখতে পারে। কোনটা পার্সেল কাকু দিয়ে গেছে আর কোনটা মা কিনে দিয়েছে সব জানে।
মাষ্টার বাবা-মায়ের ছেলের পড়াশোনার কায়দা দেখলে চমকে যাবার মতোই। ব্যাগের মধ্যে কিছু খাতা নিয়ে লিখতে শুরু করে একটু পরেই যখন শেষ হয়ে যায় তখন যা করে তা দেখার মতো। বই খাতা রাখার আলাদা তাক বাবুর পছন্দ নয়। তাই, বই-খাতা সহ ব্যাগ খাটের পাশে খাটের তলায় ফেলে দেয়। কাল আবার যখন লাগবে তখন তুলবে না হয়!
ছেলেটা বড়ো হয়ে যাচ্ছে। দুর্গাপুজোর সপ্তমীর দিন খাওয়ার পর রাত্রে আমাদের বাড়ী থেকে ওদের বাড়ী যাচ্ছি, উদ্দেশ্য একটু ঘুরে আসা হয়ে যাবে আর দু-একটা পুজো প্যান্ডেল দেখা হয়ে যাবে। বাবু তো আসার সময় বাবার গাড়ীতে এলেও ফেরার সময় আমার বুলেটে চেপে যেতে পছন্দ করে। রাস্তায় বেশ কিছু কমবয়সী ছেলে বাইক নিয়ে মুখে আওয়াজ করতে করতে বেশ জোরে আমাদের পেরিয়ে গেল। প্রথমে আমি একটু চমকে উঠলেও পরে নিজের পূর্ব জীবনের কথা ভাবে চুপ করে পাশ দিয়ে যেতে থাকলাম। আমাদের বাইকে আমি আর স্বাতীর মাঝে উনি বসে আছেন আর সামনের স্কুটারে ওর বাবা আর মা। বেশ কিছুক্ষণ যাবার পর দেখি উনি মুখ দিয়ে ওই ছেলেগুলোর মতো আওয়াজ করছে। প্রথমে আমরা কেউ বুঝতে না পারলেও পরে ওকে উৎসাহিত হয়ে আওয়াজ করতে দেখে যখন জিজ্ঞাসা করলাম এরকম করছো কেন!
- মা কে আওয়াজ দিচ্ছি।
- মানে!
- মা ওই গাড়িতে তো তাই!
প্রফেসর মাকে মাস্টার বাবার ছেলে আওয়াজ দিচ্ছে!
ছেলেটা বড়ো হয়ে গেল!
ওর বাবা মাঝে মাঝেই ওকে ধরে চটকে দিতে দিতে বলে, ছেলেটা বড়ো হয়ে গেল! ছেলেটা আমাদের বাড়ী এলেই ওকে পরের দিন যাবার পর খুব
সেন্টু-মার্কা কথা বলে! ছেলে মোটেও পাত্তা দেয়না, কিন্তু কি আর করে! মন খারাপ হয়। মা কিন্তু ওকে কিছু বলে না। তাই তো ডাকা হোক আর আওয়াজ দেওয়া হোক বা নতুন কিছু শিখে দেখানো হোক ছেলের সবই মা দিয়েই শুরু হয়!
না! সত্যিই ছেলেটা বড়ো হয়ে গেল!
* ওনার ছবি তো একজনই তোলে, তাই
Swati Dan
* মা-বাবা থাকবেন না, তাই কি হয়!
Dipanwita Pal
Nityananda Dutta
* আর সোনু দাদা তো এমনি এমনিই আছে।
Swapnaneel Dan
*** আর আমি ছেলের ছবি আমার দেওয়ালে পোষ্ট করি তো ফুটেজ খাবার জন্য। এটুকু ফুটেজ আমি পেতেই পারি একমাত্র সাগর দা জ্যেঠু বলে কথা!!


Comments

Popular Posts