'বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে': 'দ্য ট্রায়াল অফ শিকাগো সেভেন'

We carried certain ideas across State lines - not machine guns or drugs or little girls - Ideas - When we crossed from New York to New Jersey to Pennsylvania to Ohio to Illinois - We had certain ideas and for that we were gassed, beaten, arrested and put on trial.

কি মনে হচ্ছে! কথাগুলো খুব চেনা চেনা মনে হচ্ছে! শহরগুলোর নাম চেনা হলেও আমাদের তো নয়! তাই অতো চিন্তা করার সময় নেই! কিন্তু সত্যিই কি তাই! আর একবার ভেবে দেখুন না! সেই একই পদ্ধতিতে সৃষ্টির আদিম থেকে আজ অবধি শাসক তোমার কন্ঠ রোধ করে চলেছে! সে তুমি ৬৮ র শিকাগোর হও বা ২০ র শীতের দিল্লির রাস্তায় হও! কি! এবার একটু হলেও চেনা মনে হচ্ছে এই শাসনের ছক! খেয়াল করে দেখো, সেই চেনা কাঁদানে গ্যাস, জল কামান, লাঠিচার্জ আর শেষ পর্যন্ত ট্রায়াল!! শাসক কিছুতেই তার চেনা ছকের বাইরে হাঁটতে জানে না। তার এই বহুল ব্যবহৃত অস্ত্র তাই আজও কাজ করে চলেছে প্রচলিত ধারণার বাইরে চলা মানুষের বিরুদ্ধে। সে আজও জানে এই নতুন ভাবনা বয়ে নিয়ে আসা মানুষেরা তার শাসন-শোষণ যন্ত্রের অচলায়তন ভেঙে নতুন পৃথিবীর সৃষ্টি করবে! তাই তো সে ভয় পায়। আর যতবার সে ভয় পায় ততবারই সে তার অত্যাচারের মাত্রা দ্বিগুন করে তোমায় ভয় দেখায়।
যে কথাগুলো দিয়ে শুরু করেছিলাম তা হল
আ্যবি হফম্যান এর। না! ইনি কোন উপন্যাস বা গল্পের চরিত্র নাম নয়। ১৯৬৮ সালের অগাস্টের শিকাগো শহরকে যে কয়েকজন (৭ জন, সঙ্গে অগুনতি আমেরিকান ছাত্র-যুব, সাদা-কালোর ভাগ না করে) যুবক তোলপাড় করে দিয়েছিল, ঘুম থেকে তুলে শাসককে এক ঝটকায় মানুষের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল, ভাবতে বাধ্য করেছিল তারা যা বলছে বা করছে তা দেশের সব মানুষ মেনে নেয় না- সেই একজন হলো হফম্যান। শাসক তার প্রথাগত বুদ্ধিতেই নিয়ে হাজির করে তাদেরকে তার নিজস্ব বিচার-ব্যবস্থায়। সেই ১৫১ দিনের টানা চলা বিচার প্রহসন(!) আমেরিকার ইতিহাসে স্থান করে নেয়। যা গল্প নয়, কিন্তু গল্পের মতোই কাঁটা দেয় উপস্থিত থাকা বা না থাকা সব মানুষকেই। একটা রাষ্ট্রযন্ত্র তার শাসন ব্যবস্থার সাম্যবস্থা বজায় রাখার জন্য কি করতে পারে! কি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে সেই দেশ যা তাকে এতদিন তার শিক্ষায়, সমাজ ব্যবস্থায় তাকে মানুষ হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে, তারাই তার ভাবনার আজ দাম তো দেয় না, উল্টে তাকে জেল-বন্দী করে সমাজের শত্রু বলে দাগিয়ে দিতে চায়।
তাই তো এই ইতিহাস যখন এ প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের কাছে অজানা, তা জানাবার জন্য আ্যরন সরকিন লিখলেন চিত্রনাট্য। একেবারে প্রথমে এগিয়ে এসেছিলেন স্পিলবার্গ এই গল্পের পর্দায় উপস্থাপনের উদ্দেশ্যে। ২০০৭ এ রাইটার্স গিল্ড অফ আমেরিকা স্ট্রাইক এর সাথে কিছু মনমালিন্যে যখন স্পিলবার্গ সরে যান তখন ২০১৮ তে সরকিন নিজেই ডিরেক্টর হয়ে কাজ শুরু করেন তথাকথিত অচেনা মুখ নিয়ে। শিকাগো আর নিউ জার্সি জুড়ে শুটিং করে ২০২০ র সেপ্টেম্বরে তা তুলে দেন সারা পৃথিবীকে দেখার জন্য ওয়েব প্লাটফর্মে। গত দু-মাসে বহু মানুষ দেখেছে, প্রশংসা করেছে। পরে উপলব্ধি করেছে, কি ভয়ঙ্কর হতে পারে এই রাষ্ট্রযন্ত্র যা তোমার নিজের বাচ্ছাকেই হাসতে হাসতে বলি দিয়ে দেয় নিজের গদি এতটুকু টাল-মাটাল হলেই। স্পিলবার্গ নিজেই এই ছবি শুরু করার জন্য এতটাই উদগ্রীব ছিল যে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হবার পর যখন বার বার এই একই ঘটনা ঘটিয়ে চলেছিল তখন সরকিনকে সাবধান করে মনে করিয়েছিল যে দেশের এই অবস্থায় মানুষকে জানানোর প্রয়োজনীতা।
"I'd like to punch him right in the face" ট্রাম্প যখন কোন সরকার বিরোধী প্রোটেস্ট মিছিলের উদ্দেশ্যে বলে, তখন স্পিলবার্গ তার গলায় সেই ১৯৬৮ র শিকাগোর মেয়র রিচার্ড ডেইলি র কন্ঠ শুনতে পায়।
কিসের গল্প এই শিকাগো ট্রায়াল!
কারা এই সাতজন!
কোথা থেকে এসেছিল!
কি ভাবে এক হয়েছিল!
কি তাদের উদ্দেশ্য ছিল!
'দ্য ট্রায়াল অফ শিকাগো সেভেন'
আমেরিকার ভিন্ন ভিন্ন প্রান্তের সাত জন মানুষ ৬৮ র অগাস্ট মাসে শিকাগো শহরে ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার অবস্থান, তার বহু ছেলের প্রাণ দেওয়া, তার আগ্রাসী মানসিকতার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ অবস্থান বিক্ষোভের উদ্দেশ্যে মিলিত হয় অনুগামী ও বন্ধুদের সাথে। স্থান ছিল শহরের মাঝ বরাবর অবস্থিত তিনদিকে ব্রিজ দিয়ে ঘেরা সেই উঁচু জমির পাশে হল যেখানে ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশন। রাস্তায় পুলিশ আটকায়। তারপর যা যা হবার সবই আমরা জানি। আজও প্রতিনিয়ত সব দেশে সময়ের সাথে সাথে তাই হয়ে চলেছে- প্রথমে কাঁদানে গ্যাস দূর থেকে ছোঁড়া সম্মিলিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে, তারপর কাছে এলে লাঠিচার্জ আর শেষে কয়েকজন মাথাকে ধরে এনে জেলে পুরে দেওয়া। কখনো তা শেষ হয় পরেরদিন ছেড়ে দেওয়া আর কখনো তা চলে বিচারের নামে কিছুদিন আটকে রাখা। ওদের সাতজনকে বন্দি করে হয়নি তখনই। প্রায় পাঁচ মাস বাদ ওদের সাথে আর একজন কালো মানুষ ববি সিলকে আ্যরেষ্ট করা হয় দাঙ্গা শুরু করার অপরাধে আর শুরু হয় বিচার।
না, ওরা কেউ ভাবতেই পারে নি যে শুধু এই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ বিক্ষোভ তাদের কোর্টরুমে নিয়ে এসে হাজির করবে! ওরা তো এটাও ভাবতে পারে নি যে সেই পুলিশই ওদের বিরুদ্ধে লাঠি চালাবে যার ছেলের ভিয়েতনাম যুদ্ধে মৃত্যর (সংঘঠিত হত্যা!) বিরুদ্ধে ওরা বিক্ষোভ দেখাতে সেদিন হাজির ছিল। প্রথম থেকেই ওরা তাই কোর্টরুমের এই আইনী লড়াইয়ের কপচা-কপচি কে মজা করে উড়িয়ে দিয়েছে আর কথায়-কথায় প্রশ্নের উত্তরে প্রতি-উত্তরে হাসির খোরাক করে তুলেছে রাষ্ট্রপ্রধান থেকে রাষ্ট্রীয় শাসন শক্তির প্রতিটা মেশিনারীকে। কোর্ট রুম ড্রামাকে ওরা সমস্ত মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিল সেইসময়। রাস্তা জুড়ে প্ল্যাকার্ড আর পোস্টারে ছেয়ে গিয়েছিল ওদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবীতে। ওরাও মনের আনন্দে একদিন সবাই উকিলের পোশাক তো অন্যদিন পুলিশের পোশাকে কোর্টে উপস্থিত হয়। ব্যঙ্গ করে এই বিচার ব্যবস্থার, ধিক্কার জানায় সেই পুলিশ ব্যবস্থা যারা তাদের স্টার আর নেম-প্লেট খুলে পকেটে লুকিয়ে রাস্তায় ওদের আক্রমন করে। কি বন্ধু! কিছু মনে পড়ে যায় নাকি! হাওয়াই চটি আর গামছা মুখে পুলিশ আর রাষ্ট্রের গোপন আঁতাঁতের গল্প তো সব দেশে সব কালেই আছে! বিচারের শুরুতেই মাননীয় জজ সাহেব যখন জুরীদের জানিয়ে দিতে চান যে আসামী হফম্যান আর এর তার পারিবারিক নামের মিল থাকলেও তাদের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই, তখন হফম্যান সোজাসুজি 'বাবা' বলে ওনাকে সম্বোধন করে। ওরা তখনও বুঝতে পারে নি কার সাথে ওরা লড়াইয়ে নেমেছে! ওদের মাঝেই অনেক আগেই একটু একটু করে ঢুকিয়ে দিয়েছে রাষ্ট্র তার বাহিনীকে ছদ্মবেশে, বন্ধুর সাজে। যারা প্রমান করতে চায় তাদের দেখা, শোনা, রেকর্ড করে আনা গোপন কথোপকথনে যে এরাই ছিল সেদিনের সেই দাঙ্গার আসামী। পুলিশ নয়, রাষ্ট্র নয় প্ররোচনা দিয়েছিল এরাই। একটার পর একটা মিথ্যা যুক্তির জাল কেটে এরা বেরুতে থাকে। আর এই প্রক্রিয়ায় থাকতে থাকতে এরা অভ্যস্ত হয়ে যায় রাষ্ট্রের ভাষায় কথা বলতে। রাষ্ট্র যখন তাকে প্রশ্ন করে যে তার বলা একটা কথায় সাধারণ মানুষ পুলিশকে আক্রমন করে তখন সে মনে করিয়ে দেয় যীশু মাকে বাঁচাতে বাবার সাথে লড়াইয়ের কথা বলেছিল, তার মানে সে বাবাকে খুন করতে বলে নি।
পুলিশ রেকর্ডে যে কথা দাঙ্গার ইন্ধন যোগায় বলে তাদের বিরুদ্ধে হাজির করা হয়, তা হল
"If blood is gonna flow, then let it flow all over the city!"
উত্তরে হফম্যান জানায় একটু ভালো করে খেয়াল করুন যে এখানে 'blood' এর আগে একটা পসেসিভ প্রোনাউন ব্যবহার করা হয়েছে, যা আপনি বাদ দিচ্ছেন।
"If our blood is going to flow..."
দীর্ঘ ট্রায়াল জীবনে রাষ্ট্রের সাথে কথার খেলা খেলতে খেলতে আজ এরা অভ্যস্ত। এরা জানে এদের কবেকার কোন কথা কোনরকম সম্পর্ক ছাড়াই তুলে এনে বিচার ব্যবস্থার মুখ বদলে দেবে রাষ্ট্র। প্রশ্নের পর প্রশ্নে যখন রাষ্ট্র যখন তাকে ক্ষত বিক্ষত করে তখন ও মনে পড়িয়ে দেয় এই দেশের রাষ্ট্রপতিই বলেছিল,
When the people shall grow weary of their constitutional right to amend their government, they shall exert their revolutionary right to dismember and overthrow that government.
Lincoln 1861
বিরোধী উকিল যখন হফম্যান কে শেষ বারের মতো প্রশ্ন করে,
"Do you have contempt for your government?"
উত্তরে সে জানায়,
"I think the Institutions of our democracy are wonderful things. That right now are populated by some terrible people."
না! দেশ, দেশের সরকার আর তার ব্যবস্থাকে সে অসম্মান করে না। সে জানে ডেমোক্রেসির কি মানে! আর তার কি প্রয়োজন। আসলে সে বোঝে
'some terrible people' আজ তার দেশকে শেষ করে চলেছে। রাষ্ট্রের ভুল নীতির জন্য যখন তার দেশের যুবকের বলি হচ্ছে তখন সেই সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছিল ওরা কয়েকজন। ওরা তো একটাই কথা বলতো! ওরা তো বারবার সাবধান করেছে রাষ্ট্রকে!
"The whole world is watching"
'১৫১ ট্রায়াল ডেজ' এ সমস্ত বিচার প্রহসন শোনার বা না-শোনার পর মাননীয় বিচারক বেছে নিলেন দলের সব থেকে কম কথা বলা, চুপ থাকা, এতকিছুর পরও রাষ্ট্রযন্ত্র কে সম্মান প্রদর্শন করা সেই ছেলেটাকে, যার নাম টম হাইডেন। তাদের দলের শেষ বক্তব্য জানাতে বলে সবার সামনে। সঙ্গে মনে করিয়ে দেয় যেন তার বক্তব্য হয় রাষ্ট্রের প্রতি 'সম্মানজ্ঞাপনপুর্বক', 'অনুশোচনাময়' এবং 'সংক্ষিপ্ত', তাহলে রাষ্ট্র তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকবে এবং সাজা কম করার কথা ভাববে। 'সম্মানজ্ঞাপনপুর্বক', 'অনুশোচনাময়' এই দুটি শব্দ নিয়ে কোন কিছুই বলার ছিল না হাইডেনের। সে রাষ্ট্রকে সম্মান দেয় এবং ঘটে যাওয়া সেদিনের ঘটনায় সে কিছুটা হলেও অনুতপ্ত। কিন্তু তাকে তার বক্তব্য 'সংক্ষিপ্ত' করার কথা বললে সে কিছুতেই মেনে নিতে পারে না! আবার প্রশ্ন করে,
'is it you want brief?'
আমরাও ভাবতে পারি না কি বলতে চাইছে ছেলেটা! এরপর সে উঠে দাঁড়ায় তার শেষ বক্তব্য শোনাতে। শুরু হয় এইভাবে,
"যে ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে আমরা বিক্ষোভ প্রদর্শনে শিকাগো শহরে এসেছিলাম সেই যুদ্ধে আজ অবধি বিচারের প্রথম দিন থেকে আজ ১৫১ তম দিন পর্যন্ত মারা গেছে ৪৫৭২ জন, যারা হলেন....."
এরপর সে এক এক করে প্রত্যেকের নাম পদমর্যাদা সহ বলতে শুরু করে। রাষ্ট্র বার বার তার মুখ বন্ধ করতে চায়, থামিয়ে দিতে চায়। গোটা কোর্টরুমে মানুষ একসময় উঠে দাঁড়ায়, সম্মান জানায় তার শহীদ পুত্র-কন্যাদের আর স্যালুট করে তাদের যারা রাষ্ট্রের এই বীর পুত্রদের কথা বলতে এসে বন্দী!
ছবিটা এখানেই শেষ হয়ে যায়। কিন্তু গল্পটা তো এখানে শেষ হওয়ার নয়। রাষ্ট্র কিন্তু এরপরও প্রত্যেককে পাঁচ বছরের জন্য জেলে পাঠিয়েছিল। আর পরবর্তী কোন আপীল যাতে না শোনা হয় তার ব্যবস্থা করেছিল। যদিও পরবর্তী কালে হাইকোর্ট অনেক শাস্তিই তুলে নেয় এবং সরকার তা বিবেচনা করে এদের মুক্তি দেয়।
উইলিয়াম ক্লুনসলার, যিনি ছিলেন এই সাতজনের উকিল তাঁকে মাননীয় বিচারক জুলিয়াস হফম্যান ২৪ বার contempt of court এর জন্য শাস্তির কথা শুনিয়েছিলেন। তার অপরাধ ছিল, তিনি বার বার শুধু এই সাতজনের সমস্ত কথা শোনাবার আবেদন করেছিলেন। যিনি এদের শাস্তির ব্যবস্থা করেন সেই বিচারককে কিন্তু আমেরিকার বিচারক সংস্থার প্রায় ৭৮ ভাগ বিচারক পরবর্তী কালে 'unqualified' ঘোষণা করেছিল। হবে নাকি একবার আমাদের দেশে! দু-কোটি টাকার বাইকে চাপা বিচারককে কি সম্মানে ভূষিত করা হবে না তাকে দেখানো হবে তার আস্পর্ধা, ভেবে দেখবেন একবার! যে মহিলা পুলিশ ওদের একজনের সাথে বন্ধু হয়ে সব গোপন খবর বের করে আনতে গিয়েছিল, সেও কিন্তু কোর্টে স্বীকার করে দাঙ্গা ওরা শুরু করে নি! রাষ্ট্রযন্ত্রের সব সৈনিক কিন্তু চোখে পর্দা দিয়ে থাকে না। কোর্ট চত্ত্বরে যে উকিল মহাশয়রা রাষ্ট্রের ফাঁদে পা দিয়ে একজন বিচারাধীন ছাত্রের উপর চড়াও হন তারা কি আদেও এই বিচার ব্যবস্থার প্রতি সম্মান রাখেন! দেশকে ভালোবাসেন তারা! তাহলে তো দেশ আর তার চালনাকারী মেশিনারী কে এতো নিকৃষ্ট ভাবে আক্রমন করে দুর্বল করে দেন কেন! আসলে ভয় পান আপনারা। আপনারা হলেন সেই 'some terrible people' যারা আজ আমার দেশকে দুর্বল করে চলেছেন নিজেদের স্বার্থে। আপনি ভয় পান নতুন কোন 'idea' র কথা শুনতে। তাই যারা সেই নতুন 'idea' এর কথা শোনায় তাদের ভয় দেখান হাতে-পাওয়া রাষ্ট্রযন্ত্রের অসৎ ব্যবহারে।
ছবি শেষ হয়ে যাবার পরও যখন স্ক্রীনপ্লেয়ার রা আর বাস্তবের ওরা সাতজনের গল্প আমাদের আচ্ছন্ন করে রাখে তখন শোনা যায় যে গান, যা মানুষকে আশার আলো দেখায় তার কথাও মনে রাখার মতোই।
Hear my voice
Hear my dreams
Let us make a world
In which I believe
Hear my words
Hear my cry
Let me see a change
Through these eyes
You may think I won't be heard
Still I'll raise this hand spread this world
There words of fire of hope and desire
And I'll let them free.
যুদ্ধবাজ আমেরিকাকে তো শুধু ওরা ওদের এই কথাগুলোই শোনাতে চেয়েছিল।
*** আ্যরন সরকিন (Aaron Sorkin) কে নিশ্চই সবার মনে আছে। অনেক ছবির মধ্যেই এক্যাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত 'The Social Network' যা ফেইসবুক আর তার জন্মের গল্প শুনিয়েছিল। এই ছবিটা আমায় দেখতে বলেছিল আমার ছেলে, ওর ধারণা এবার এই ছবি পুরস্কার পাবার দৌড়ে এগিয়ে থাকবে। আমার সেরকম কিছু আশা না থাকলেও মনে হয়েছে দেখা যেতেই পারে এরকম এক ইতিহাস নির্ভর পলিটিক্যাল কোর্ট রুম ড্রামা। ভালো লাগবে। অনেক কিছুই তো মিলিয়ে নিতে হয় জীবনে।
*** [যে সাত জন ও একজনের কথা আমরা শুনলাম তাঁরা তারপরেও আমেরিকার অনেক সোশ্যাল ও পলিটিক্যাল কাজকর্মের সাথে যুক্ত ছিলেন। তাদের সবাইকে একটু গুগল করলেই জানা যাবে। একটা প্রাথমিক তথ্য আমি না হয় যোগ করলাম।
• হফম্যান (Abbie Hoffman): ওরসিস্টের বাসিন্দা। Steal This Book এর লেখক। 1989 সালে মারা যান। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন Youth International Party ("Yippies"). একসময় আমেরিকা জুড়ে Flower Power movement করেছিলেন।
• রুবিন (Jerry Rubin): সিনসিনাটি র বাসিন্দা। "Yippies" এর সহযোগী প্রতিষ্ঠাতা। পরবর্তীতে ব্যবসার সাথে যুক্ত।
• হাইডেন (Tom Hayden) : আমেরিকান সোশ্যাল এন্ড পলিটিক্যাল একটিভিস্ট। পরবর্তী তে ডেমোক্র্যাট থেকে ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট লেজিসলেটিভ ভোটে ৬ বার জিতেছে।
• ডেভিস (Rennie Davis) : মিশিগান এর ছাত্র। যুদ্ধ-বিরোধী মতবাদের প্রচারক।
• ডেলিনজার (David Dellinger): ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র, অহিংস আন্দোলনের মতধারায় চলা মানুষ।
• ওয়াইনার (Lee Weiner): যুদ্ধ-বিরোধী মতাদর্শ মেনে চলা ছাত্র।
• ফ্রইনস (John Froines): সাধারণ যুদ্ধ-বিরোধী মতের মানুষ।
• ববি সিইল (Bobby Seale): টেক্সাসের বাসিন্দা। ব্ল্যাক প্যান্থা র পার্টির সমর্থক। লেখক। শুধু কালো মানুষ হবার অপরাধে এই মামলায় নাম জড়ানো হয়েছিল এবং কিছুতেই কোন কথাই যার বিচারক শুনতে চায় নি এবং যার উকিলকেও পুলিশ কাস্টডিতে খুন করা হয়।]
*** ছবি গুগল থেকে নেওয়া।

Comments

Popular Posts