গুঁড়ো গুঁড়ো নীল, স্বপ্ন রঙ্গিন!!(৯): এখানে আঠারো: 'উন্মাদ শ্রাবণবন্যা ছুটে আসে ভৈরব নিঃস্বনে'

গুঁড়ো গুঁড়ো নীল, স্বপ্ন রঙ্গিন!!(৯)

এখানে আঠারো: 'উন্মাদ শ্রাবণবন্যা ছুটে আসে ভৈরব নিঃস্বনে'

'এ বয়সে তাই নেই কোন সংশয়-
এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে।'
না, না। বিপ্লবী কাজকর্ম কিছু হচ্ছে না। বা যুদ্ধে যাওয়া, প্রান দেওয়া বা শাসনের শৃঙ্খল ভেঙে বেরিয়ে আসার মতো গুরুত্বপূর্ণ ও কিছু হচ্ছে না। তাহলে হচ্ছেটা কি! সেটাই বড় প্রশ্ন।
- আমাজানের কার্টে একটা ফুটবল রাখা আছে। অর্ডার করে দিও তো!
- ফুটবল! ফুটবল কি হবে! কোথায় খেলবি এখন?
- সে অতো ভাবতে হবে না। তুমি অর্ডার করে দিও।
- কাজকর্ম নেই তোর? ঘরের মধ্যে কোথায় খেলবি?
- তাহলে থাক আমি ক্যাশ অন ডেলিভারি করে দিচ্ছি!
- মানে! কে টাকা দেবে?
- মা দেবে। তোমায় দিতে হবে না।
- ফালতু ফালতু কেন কিনছিস? খেলতেও পারবি না। ঘরে ফেলে রেখে নষ্ট করবি!
- ওই জন্যই তো তিনশো ষাট টাকার বল কিনছি, তিন হাজার টাকার নয়।
(চুপ থাকাই ভালো, তাই চুপ করে গেলাম)
- ডন কিহতো পড়েছ?
- কেন?
- পড়েছ কিনা বল না? পড়নি না?
- ডন কুইকজোট তো! ছোটবেলায় পড়েছি মনে হচ্ছে।
- কি? ডন কুইকজোট আবার কি? আর ছোটবেলায় মানে? বাংলায় ছোটদের সংস্করনটা বলছো?
- হ্যাঁ। গল্পটা জানি। স্কুলে পড়েছিলাম।
- ধুর! আমি রাদারফোর্ডের ইংরেজি অনুবাদের ন'শ পাতার বইটা বলছি!
- না, পড়িনি। কেন? পড়তেই হবে নাকি!
- আ্যরন সরকিন বার বার অনেক রেফারেন্সে বলছে। আর পড়ে নেবার কথা বলেছে। মনে আছে তো আ্যরন সরকিন কে?
- ঠিক আছে। আজ অর্ডার করে দিচ্ছি।
- আমি কার্টে রেখে দিয়েছি। বলটা অর্ডার করার সময় ওটাও দিয়ে দিও।
এরকম হ্যাটা আর কাঁহাতক সহ্য করা যায়। বেশ কিছুদিন ধরেই ভাবছি এবার ওকে বেশ মুশকিলে ফেলতে হবে। ওল্ড ক্লাসিক ফিল্ম থেকে নতুন ওয়েব সিরিজ- প্রায় সবেতেই হেরে আমি শেষকালে যখন আমেরিকান টিন-এজ সিরিজ দেখা শুরু করেছি সেসব নিয়ে ব্যঙ্গ করতে ছাড় দেয়না। বুঝলাম এসব দিয়ে কিছু হবে না। কয়েকদিন আগে সকালে বেশ তক্কে তক্কে ছিলাম। কলকাতা, স্টার থিয়েটার এসব সংক্রান্ত কিছু একটা খবর কাগজে পড়তে পড়তে কি একটা বলে উঠলে শুরু করলাম:
- আচ্ছা, বাদল সরকার কে বলতো?
- কে? জানি না তো?
- শম্ভু মিত্র কে বলতো?
- কি?
- হাবিব তানভির কে বলতো? কি করেছে?
- এটা আমি জানি। থিয়েটার এর সাথে যুক্ত। আর বাকি জানি না।
- আচ্ছা, লালন ফকির কে?
- জানি, জানি! লালনের গান।
- আচ্ছা, জীবনমুখী গান কি বলতো?
- কি? এটা শুনি নি তো!
- সে কি রে!
বুঝেছি, ওকে ফাঁসাতে গেলে এই রাস্তাই ধরতে হবে। এরপর এক এক করে শুরু করি লীলা মজুমদার থেকে উপেন্দ্রকিশোর, সুনীল থেকে জয়, সুমন থেকে অঞ্জন- মাঝে মাঝে কোথাও একটু চেনা নাম পেলেই সেটা ধরে বক-বক করতে শুরু করলেও অনেকটাই প্রায় না জানা। হারাতে গিয়ে লাভ নেই। জানানোটা শুরু করা উচিত। যতই কোহেন
আর মিঃ সলওয়ে চিনুক, লালন না চিনে কি করে জীবন কাটবে!
বল আর বই দুটোই এসেছে কয়েকদিন আগে। যেহেতু বইটা আমার পড়া নয় তাই আমাকে আগে পড়তে দিয়ে উনি উপরের ঘরে প্রায় সবকিছু ফাঁকা করে বল পিটছেন। আমি আওয়াজ শুনছি।
আচ্ছা, যে জন্য এই কেনা কাটার কথা হচ্ছিল তা হলো জন্মদিন উপলক্ষে। কিন্তু যেহেতু আগে এসেছে এবং ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে তাই এইদুটো বাদ হয়ে গেল। দেখা যাক, এরপরে কি দাবি আসে!
আঠারোতম জন্মদিন বলে কথা। দেশ বাঁচাতে না গেলেই বা বাড়িতেই জঙ্গিপনা করতে কি কিছু করতে হয়! এত কিছুর পরেও দিনের শেষে একটাই কথা শান্তি দেয় যে সত্যিই 'সংশয়' করে না কিছুতেই, সে যে কাজই হোক। এটাই হয়তো ওর আঠারোর কাছে আমাদের পাওনা।
"Being a parent is hard.
And I know we have not done it perfectly.
But I learned from my mistakes and your mother from hers.
Just as you will learn from ours mistakes
Until someone someday
Finally has a perfect childhood."
তাহলে আপাতত অপেক্ষায় থাকলাম। দেখা যাক, সেই 'perfect childhood' আমরা ওকে দিতে পারলাম কিনা! সময়ের অপেক্ষায়।
শুভ জন্মদিন। শুভ আঠারো। ভালো থেকো। সুস্থ থেকো। মানুষ হও।
.
.
.
***ছেলের ছবি ছেলের মা তুলে দিলেও আমি নাকি খুঁজে পেতে সেদিনের সব থেকে বাজে ছবিটা বেছে নি!



Comments

Popular Posts