গুঁড়ো গুঁড়ো নীল, স্বপ্ন রঙ্গিন।। (৪) :জন্মাষ্টমী নেই তো কি হয়েছে, গণেশ আছে!

গুঁড়ো গুঁড়ো নীল, স্বপ্ন রঙ্গিন।। (৪)

#জন্মাষ্টমী নেই তো কি হয়েছে, গণেশ আছে!

আমাদের বাড়ীতে জন্মাষ্টমীর পূজোও হয় না বা খাওয়া-দাওয়াও ভোজও হয় না তাই এদিন যে বন্ধুদের বাড়ী নিমন্ত্রণ থাকে তাদের বাড়ী চলে যাই সপরিবারে। এই যেমন এবার রাজীব-স্বাতী ডেকেছে, তাই সন্ধ্যা হলেই চলে যাবো। সেসব কথা থাক, যে জন্য লিখতে বসলাম তা হলো কৃষ্ণ না থাক গণেশ তো আছে আমাদের বাড়ীতে। আছে, আছে! একটা গণেশ আছে যাকে পূজো করতে হয়না, সে সব পূজো নিজেই নিয়ে নেয়। জন্মাষ্টমীর সাথে আমার সম্পর্ক খুব ছোটবেলায়ই শেষ হয়ে গেছে। সেই আজ থেকে কত বছর আগের কথা, যখন আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি আর ঝুলন পূর্ণিমায় কৃষ্ণ সাজবো ভেবে বাড়ী থেকে মায়ের কাপড় নিয়ে পাড়ায় ঝুলন উৎসবে গেলাম আর তার পরই কাকু এসে বাড়ী নিয়ে গেল আর বেশ ঝাড়-টার দিয়ে পড়তে পাঠিয়ে দিলো। পড়তে যাবার সময় দেখলাম বুলান আমার নিয়ে যাওয়া শাড়ি ধুতির মতো করে পড়ে কৃষ্ণ সেজে মানুষ-ঝুলন সেজে আছে। যাই হোক, আমার ঝুলন আর কৃষ্ণ ভাবের ইতি এখানেই হলো। সে যাই হোক, আজ কৃষ্ণ দিনে আমি না হয় আমার গণেশ নিয়েই ব্যস্ত থাকি।
ছুটির দিনগুলোতে সকালে দেরী করে উঠতে হয় সেটা সবাই জানে। আগের দিন রাত্রে যদি গণেশ বলেন তিনি দশটায় উঠবেন, তাহলে তিনি দশটায় ই উঠবেন। মাঝে উঠলে বা কেউ উঠিয়ে দিলেও আবার ঘড়ি দেখে দম দেওয়া পুতুলের মতো ঘুমিয়ে যাবে। রীতিমতো তর্ক-বিতর্ক করে তোমায় বুঝিয়ে দেবে তুমি ভুল করছো, কথা রাখছো না। তুমি হয়তো ভাবছো যে, যাক এই তো এতো কথা বললো, এবার উঠবে। সে গুড়ে বালি! আবার বালিশ নিয়ে অন্য ঘরে গিয়ে আবার ঘুমিয়ে যাবে। ঘুম থেকে ওঠালে একটাই কথা,
- উহঃ! কি কষ্ট! কি টায়ার্ড লাগছে। একটু পরে উঠছি। আর পাঁচ মিনিট শুই, তাহলেই হবে। এখন আমি চেষ্টা করলেও উঠতে পারবোনা!(সারা রাত ঘুমিয়েও কি করে টায়ার্ড হওয়া যায়, সেটা ওর থেকে ভালো কেউ জানে না।)
দুজনার ছুটি থাকলে মানে আমরা দুজনে একসাথে বাড়িতে থাকলে প্রতি মুহূর্তে আর প্রতিটা কাজ নিয়েই ঝগড়া হবেই। সে তুমি ভালো বলো আর খারাপ বলো।
- পড়তে বস রে, সাড়ে এগারোটা বাজলো তো!
- বসছি, বসছি! একটু রেস্ট নিয়ে নি!
(দশটায় উঠে, মুখ ধুয়ে, খেয়ে এদিক-ওদিক ঘুরে-বেড়িয়ে এবার রেস্ট! তারপর পড়া!)
এছাড়া মাঝে মাঝেই আছে মাকে বোঝানো যে তুমি জীবনে কতো বড় ভুল করেছ এরকম একটা লোককে বিয়ে করে। মাকে যেগুলো বলে
- তোমায় নিশ্চই ভুল-ভাল বুঝিয়ে বিয়ে করেছিল। এখন ওই জন্য সব কাজ করায় আর নিজে কিছু করে না। (আসলে আমি দিনের বেশিরভাগ সময় বাইরে থাকায় ওকে নিয়ে আসা, দিয়ে আসা সে স্কুল বা টিউশন যাই হোক, সবই ওর মা করে তো!)
- তোমায় তো ওই একটা স্কুটার কিনে দিয়েছে, আর তাতেই তুমি মনের আনন্দে আছো!
এরপর আমার গণেশ আমায় নিয়ে ওর মাকে যা যা বলে তার একটা ছোট লিস্ট আমি করেছি, সেটা থেকে বুঝেছি যে আমায় বেশ ভালোই বাসে তবে একদম পছন্দ করে না এই যা!
ওর মাকে বলা কথা আমি না থাকলে,
- শীঘ্র ডিভোর্স দিয়ে দাও! কি করতে আছো এই লোকটার সাথে! ডিভোর্স দিয়ে দাও। সব টাকা পয়সা হাফ হাফ পাবো আমরা!
- বই নিয়ে কোনোদিন পড়াতে বসে আমায়! শুধু বলবে, সনু, পড়াশোনা হচ্ছে না ঠিক করে। কি পড়েছিল নিজে কে জানে! নিশ্চই 'ঝোল' আছে কিছু! (আমি আজকাল মাঝে মাঝে ভাবি আমার পড়াশোনায় কি কি 'ঝোল' ছিল!)
- তোমাকে বুঝেছিল এ বেশ ভালো 'মুর্গা', তাই বিয়ে করেছে! জানে, এ কিছু চাইবে না আর দেখতে-শুনতেও বেশ ভালোই! ( ক্ষী! উচ্চ ধারণা মায়ের সম্পর্কে!)
-আমায় মারে মাঝে মাঝে, ঠিক আছে! হক আছে! মারতেই পারে! ভালোও বাসে মাঝে মাঝে!
ম্যাগি দুথালা করে টেবিলে আসার আগেই আমাদের দুজনেরই খাওয়া শুরু হয়ে যায়। আমাদের অলিখিত নিয়ম হলো যার আগে খাওয়া হয়ে যাবে সে অন্য জনেরটা থেকে ভাগ পাবে। সে মতো খাওয়া চলে রাক্ষসের মতোই। তবে আজ আমি মুড়ি আর ও ম্যাগি, তাই আমি বললাম যে,
- দাঁড়া, আগে আমি টেস্ট করে নি! দেখিসনি, রাজা-মহারাজরা খাবার আগে চাকর-বাকর টেস্ট করে! বিষ-টিশ দেওয়া আছে কিনা দেখতে হবে তো!
-তুমি টেস্ট করতে যতটা নিয়েছো তাতে টেস্ট না করে বলো, তোমাকেই দেবে! আর বিষ-টিশ নিয়ে তোমায় অতো ভাবতে হবে না, আমি সব হজম করে নেব!
এবার মুড়ি শেষ করে আবার যখন আমি চামচ দিয়ে আর একটু ওর পাত থেকে তুলেছি, তখন
- বুঝেছি, টেস্ট করেও এখনো মারা যাচ্ছো না কেন সেই জন্য আবার টেস্ট করছো!
কোনোদিন হয়তো বললাম যে তুই এতো মাতব্বর হয়েছিস যে তোকে আর কিছু বোঝানো যাবে না। তুই এবার কেটে পড় তো বাড়ী থেকে। তখন বলবে,
- সে হবে না! আমার এখন যাওয়া যাবে না! বাড়ী ঠাকুমার। আমি ঠাকুমার বাড়ীতে আছি।
যদি বলি যে তোর পড়াশোনা কিছু হবে না, চায়ের দোকানে কাজ করে খাবি, তাহলে ওর কিছু বলার আগেই আমার মনে পড়ে যায় আজ থেকে দশ বছর আগের এক কাজ:
সেদিনও এরকম বলেছিলাম। কিছুক্ষন বাদে ওর মা দেখে ও দুটো জামা-প্যান্ট আর কয়েকটা খেলনা হাতে নিয়ে বলছে,
- আমি চায়ের দোকানে কাজ করতে যাচ্ছি।
বাবা তখন ওকে স্কুল থেকে লুকিয়ে আইসক্রিম খাইয়ে নীচের কলে হাত-মুখ ধুইয়ে উপরে নিয়ে আসতো যাতে কেউ জানতে না পারে, আর ও উপরে এসেই বলে দিত। দাদু ওকে একটাই শিখিয়েছিল,
- তোর বাবার উপযুক্ত মুগুর করবো তোকে!
মুগুর কিনা জানিনা, তবে আমার গণেশ অনেক কিছুতেই আমি যা বলবো তার উল্টো করলেও আমি জানি দিনের শেষে আমাদেরই গণেশ।
* আজ অনেক দিন বাদ ওর সাথে ছবি তুলতে বললাম স্বাতীকে। তাতেও ডায়লগ!
- সেই তো, আবার আমার ছবি দেখিয়ে বেশী লাইক নেবার চেষ্টা।
যাইহোক, শেষপর্যন্ত যে আমার সাথে ছবি তুলেছে সেটাই আমার বাবার ভাগ্য।
* ওর গণেশ নামটা আজ আর কেউ বলে না। আমার বাবা মাঝে মাঝেই স্বাতীকে বলতো,
- তোর ব্যাটা তো গণেশ রে! সারাদিন শুধুই তোর চারিদিকে ঘুরছে!
23.08.2019

Comments

Popular Posts