গুঁড়ো গুঁড়ো নীল, স্বপ্ন রঙ্গিন।। (৩)_স্বাধীনতা: কার? আমার না ওর!

গুঁড়ো গুঁড়ো নীল, স্বপ্ন রঙ্গিন।। (৩)

#স্বাধীনতা: কার? আমার না ওর!

দিনটা আগে কেমন কাটতো এখন আর মনে নেই। তবে শেষ পনেরো বছর প্রতিবারই নিত্য-নতুন ভাবেই কাটে। আসলে আজ থেকে ৭৩ বছর আগে স্বাধীনতা এলেও আমার জীবনে মহাপ্রভুর আবির্ভাব ঘটেছে মাত্র পনের বছর আগে। আজকের দিনেই, ২০০৪ সালের বিকাল ছটায় একটু আগে-পরে তিনি এসেছেন আমার জীবনে। প্রথম দু-চার বছর এই দিনে তিনি কি করতেন বা আমিই বা কেমন করে কাটাতাম সে সব আমার আবার মনে নেই। তবে তিনি মানুষ-মানুষ হবার পর, মানে ওই স্কুলে যাবার পর থেকেই এই দিনটার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছেন। বুঝেছেন নিজের জন্মদিনে নিজেকে স্পেশাল ভাবাতে বাকি লোকজনদের কাছে। যাই হোক, সে সব যেমন চলছে চলুক, ওনার বন্ধু-বান্ধব, স্কুল-বাড়ী, সব মিলিয়ে মিশিয়ে জন্মদিন পালন বা না-পালন করা এই সব নিয়েই। কিন্তু হঠাৎ করে এ বছর কি এমন হলো যে আমি এই নিয়ে লিখতে বসে গেলাম ওনার জন্মদিন নিয়ে। বলছি, বলছি। ধীরে, বন্ধুরা। অপেক্ষা করো, তোমরাও বুঝবে কেন আমি লিখছি। প্রতি বছর জন্মদিন আসার আগেই ওনার সব প্ল্যান করা হয়ে যায় কি ভাবে কি কি করা হবে বা কে কে আসবে। তাতে আমরা সব সময়ই চেষ্টা করতাম আমাদের পছন্দের কিছু ঢুকিয়ে দিতে। এই যেমন ধরো, ও বললো এবার ওর দশ জন বন্ধু আসবে, আর আমরা হয়তো এর সাথে আমাদের কিছু পরিচিত জনকেও বলে দিলাম আসার জন্য এবং বেশ বড় করেই হয়তো ওনার জন্মদিন পালন করা হল। কিছুদিন পেরিয়ে যাবার পরই আমরা শুনতে পেতাম আগের বার জন্মদিন আমার মনের মতো তো হয়নি, এর পরের বার আমি শুধু আমার বন্ধুদের বলবো। এই বলার পিছনে একটা নির্দিষ্ট কারন আছে যেটা আমি স্বাতীর কাছে শুনে পরে বুঝতে পেরেছি। যেমন ধরো, কোন একদিন সারাদিন ও বাড়ীতে পড়া বা পড়া-পড়া খেলা করে বিকালে যদি বলে আমি এবার রেস্ট নেব বা আমার মতো সময় কাটাবো, তখন ওকে আমরা কারোর বাড়ী আড্ডা দিতে বা আমাদের মতো কোথাও ঘুরতে নিয়ে গেলাম। ফিরে এলাম হয়তো রাত্রে যাতে সেদিন আর ওকে পড়তে না হয়। ও হরি! কাঁচকলা হল! পরের দিন ও বলবে ওর মতো তো ও সময় কাটাতে পারে নি, ওদের বাড়ী বা ঘুরতে গিয়েছিল আমরা বলেছিলাম বলে। আচ্ছা! এখন আমি বুঝে গেছি। আমার বন্ধুদের বাড়ী গিয়ে আড্ডা দেওয়া হোক বা আমাদের মতো করে ঘুরতে গেলে সেগুলো ওর ফ্রী টাইম পাস করা নয়। তাই এখন আমরা একটু সাবধানী এসব ব্যাপারে। কি চাইছেন আপনি সেটা আগে জেনে নিই, তারপর আমাদের মতো প্ল্যান করি।
যায় হোক, এবার প্রথম থেকেই বলা হয়েছিল এবছরের জন্মদিন কিছু আলাদা করে পালন করা হবে না, তাই একটু গোঁসা করে থাকলেও জানে শেষ অবধি কিছু না কিছু তো হবেই। ওর বুই, ওর দিদি, ওর আন্টিরা শেষ অবধি ঠিক আলাদা আলাদা করে কিছু করবে। তাতেই খুশী আছে। সকালে স্কুলে বন্ধুদের জন্য কিছু ব্যবস্থা করে নিয়ে গেলেও সেটা হয়নি, তাই রাত্রে পড়তে গিয়ে সেটা হবে, মানে খাওয়া। খাওয়া আর খাওয়া, মানে চিকেনের বংশ উদ্ধার করা ছাড়া আর কোন আনন্দের কিছু ওদের কাছে আছে বলে আমার মনে হয় না। সে যা হবে পরে দেখা যাবে। স্কুল থেকে ফিরে এসে দুপুরে মা মটন-বিরিয়ানি আর চিকেন চাপ খাইয়েছে আর বুই কেক এনেছে এতেই এবেলা হয়ে গেছে। আর চিন্তা নেই। উপরে বসে মোবাইল আর কানে হেডফোন, গল্প-আড্ডা যা মন করছে করুক। ডিসটার্ব করবো কেন! একটু ডিসটার্ব হলেই বলবে আমার জন্মদিনটাও আমার মতো করে কাটানো যায় না। তার থেকে আজকের স্বাধীনতা আজকেই থাক, কালকে দেখা যাবে বাকি সব। আর এটুকু করতে আমায় তো বেশী কিছু করতে হচ্ছে না, শুধু একটু চোখ-কান বন্ধ রেখে সময় পার করতে হচ্ছে। রাত্রে আবার যা যা হবে সেগুলোতেও কোন বাধা না দিয়ে শুধু দিনটা পার করতে দিতে হবে ওর মতন করে। তো, তাই হোক।
এবার আসলে একটু আলাদা হয়েছে আমার জন্যই। আমার একটা ছোট সার্জারীর জন্য আমায় গত দু দিন নার্সিংহোমে থাকতে হয়েছিল, তাই ওর মা ওকে বলেছিল এবার আর কিছু হবে না তোর জন্মদিনে। তাতে ও খুব একটা অখুশী হয়নি, কারন ও তো জানে বাড়ীতে যাই হবে তা তো আমাদের মতে। তাই ও খুব অখুশী হয় নি যখন ওকে বলা হলো যে তুই বন্ধুদের বাড়ীতে না ডেকে বাইরে খাইয়ে দিস। কিন্তু ওর মন খারাপ হবে বলে রাজীব আঙ্কেল, স্বাতী আন্টি আর ঐশী যখন বললো যে ওর জন্য কেক নিয়ে সন্ধ্যায় আসবে বা নিতু আঙ্কেল আর দীপা আন্টি গোলগোল কে নিয়ে বিরিয়ানি নিয়ে আসবে বা তানিয়া আন্টি কেক আর আইসক্রিম নিয়ে আসবে তখন ও তো জানে এগুলো তো বাড়তি পাওনা! আমি শুধু ওদেরকে বললাম, যা করিস করবি, ওর পড়তে যাবার আগে যেন আসিস, না হলে আবার কালকে বলবে ওরা তো তোমার জন্য এসেছিল। আমি খুশী আমাদের বন্ধুরা শুধু আমার কথা ভেবে আজ আমাদের বাড়ী আসেনি, ওরা সবাই আজ ওকে ভালোবেসে ওর জন্মদিন পালন করতেও এসেছিল।
সবাই সময় মতো এসে মহাপ্রভুকে কেক খাইয়ে জন্মদিন পালন করে গেল আর উনি গেলেন ব্যাচে পড়তে! বিশ্বাস হচ্ছে না! জন্মদিনের দিন পড়তে যাওয়া! সেখানেও যে আরো অন্য মজা। ফিরে এলেন তিনি ব্যাচে বন্ধুদের সাথে অল্প কিছু খেয়ে। সেটা কি, আর নাই বা জানা হলো। বাড়ী ফিরে কিন্তু আবার বিরিয়ানি। এবার দিন শেষ। খাওয়ার পর একটু আগে আমি বললাম, "বাবা, আজকাল আমায় আর পাত্তা দিচ্ছ না জন্মদিনে!"
উত্তর পেলাম, "ধন্যবাদ! সারাদিন একটুও না জ্বালিয়ে নিজের মতো দিনটা কাটাতে দেবার জন্য।"
আমায় বলে নি, ওর মা কে বলেছে।
আবার জিজ্ঞাসা করলাম, "কি কি ভালো হলো আজ?"
সোজা উত্তর, "দুবেলা বিরিয়ানি!"
মানে হলো মা আর দীপা আন্টি!
বাকিরা যে যার মতন কাটাও দিন।
কাল রাত্রে শুতে যাবার সময় আমি এগারোটার সময় যখন হ্যাপি বার্থডে বলে উইশ করলাম বললো এতো আগে, এটা কি আগের বছরের! যাই হোক, জেগে থেকে ঠিক বারোটায় উইশ করলাম, হোয়াটস আপে লিখলাম তাতেও কোনো লাভ হলো না কারন ওর মা ঠিক বারোটায় উঠে ওকে একটা গিফ্ট দিল, আর আমি দেখলাম। সব দিকেই তো হেরে যাচ্ছি। শেষে শুতে যাবার আগে বললাম, দেখ তোকে সব থেকে আগে উইশ করেছি। সকালে উঠে দেখলাম আমার মেসেজ ওর কাছে যায় ই নি, কি সব যে কারুকাজ করা থাকে!
যা যা লিখলাম, সবই আমি খুব মজা পেয়েই লিখি। ওর সব কাজই আমার ভালোলাগার
যাই হোক, আবার এক বছর পেরিয়ে গেল।
ছেলেটা আমাদের বড় হয়ে গেল আরো এক বছর।
অনেক অনেক ভালোবাসা, বাবা।
ভালো থেকো। মানুষ হও।
*ছবিটা আজ সকালে আমি ওর স্কুলে যাবার সময় তুলেছিলাম, প্রতিবারই তুলি এই দিনে। আসলে পাল্টে যাবার দিনগুলো ধরে রাখার চেষ্টায়।
** ধন্যবাদ বন্ধুরা, যারা যারা আজ এসে মহাপ্রভুর জন্মদিন পালন করে গেলেন, তাদের সবার কাছে আমার আর স্বাতীর একমাত্র আবেদন: আগামী প্রতিটা বছরেরই দায়িত্ব আপনাদের দেওয়া থাকলো।

Comments

Popular Posts