তবুও আমি ব্রাজিল।।(প্রথম পর্ব)

তবুও আমি ব্রাজিল।।(প্রথম পর্ব)
ব্রাজিল, শুধু ব্রাজিল আমি, তোমার জন্য।।

ফুটবল: এক জাতি, এক ধর্ম, এক রং এর বাঁধন দেয় ব্রাজিল। লেখার আগেই এটুকু পরিষ্কার করে নেওয়া ভালো যে আমি ব্রাজিল ফুটবল টীম এর জন্য আমার আগামী একমাস এর সন্ধ্যা আর রাত গুলো টিভি র সামনে বসবো। ব্রাজিল তার ফুটবল নিয়ে কি উন্মাদনা ছড়িয়ে দেয় পৃথিবী জুড়ে তা আমার থেকে অনেকেই ভালো জানে। ফুটবল এখানে - শিল্প না ভাত দিয়ে খাবার তরকারি- সেটা পৃথিবী জানে, আমার তোমার জানার অনেক আগে থেকেই। গোটা দেশ জুড়ে আর্থিক মন্দায় থাকায় মানুষগুলো নাকি এখন আর ফুটবল নিয়ে নয়, ভাত নিয়ে ভাবছে!!!(আমাদের দেশের শ্রেষ্ঠ বাজারী সংবাদ পত্র মতে! কেন লিখেছে তা ওরাই জানে।) শুধু একটু ভেবে দেখলে পারতো!!! দেশ টা তো কোনোদিন ই ইউরোপিয়ান দেশ গুলোর মতো আর্থিক সাচ্ছন্দ নিয়ে বেড়ে ওঠেনি। দারিদ্র্য, অশিক্ষা, কুসংস্কার, খেতে না পাওয়া মানুষ গুলোর প্রায় তিনশ বছরের পর্তুগীজ কলোনিয়াল প্রভুর শাসন থেকে বেরিয়ে এসে উনবিংশ শতাব্দীতে যখন একটু করে গড়ে উঠছে ঠিক তখনই আবার প্রায় তিন দশক মিলিটারি শাসক জুন্টা র কবলে। আর সেই দিনগুলো পার করে দুহাজার দশ এ ব্রাজিল ফাস্টেস্ট ডেভেলপিং ইকোনমিক পাওয়ার। না, এর সাথে ফুটবল এর কোনো যোগ নেই, বা ফুটবল দিয়েও কিছু হয়নি। কিন্তু এই পেরিয়ে আসা দীর্ঘ পথ গুলো র সাথী ছিলো ফুটবল। ফুটবল এখানে ধর্ম না রক্ত, খাবার না আনন্দ সামগ্রী, পড়াশোনা না চাকরী সেই বিতর্কে না গিয়েও আমরা জানি ফুটবল আর ব্রাজিল একটাই শব্দ।
আমার বিশ্বকাপ ফুটবল দেখা আর ব্রাজিল !!!
১৯৮৬ সাল, আমার তখন ক্লাস ৬, গরমের ছুটি চলছে স্কুলে, সারাদিন ক্রিকেট পেটাতাম রানীর মাঠ আর বাঁকার মাঠ এ। প্রচন্ড ক্লান্ত, সন্ধ্যা বেলায় ঘুমিয়ে যেতাম প্রায়ই। আর খাবার পর বাবা নিয়ে বসতো ফুটবল খেলা দেখাতে। তার আগের বছর ই বাড়ী তে টিভি এসেছে, সোনি, ওরসন, ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট। আমি আর বাবা মেঝেয় বিছানায় বসতাম আর মা আর বোন খাট এর বিছানায় শুয়ে পড়তো। প্রথম দিকে কিছুতেই নাম গুলো মনে রাখতে পারতাম না, তবে বাবা প্রায় পাখি পড়ার মতো করে আর্জেন্টিনা আর সব প্লেয়ার এর নাম মুখস্ত করিয়ে দিয়েছিলো। আর পাগলের মতো 'স্বপ্নের সেই মানুষ' টাকে চিনিয়ে দিয়েছিল। আমার বাবার চেনানো আমার স্বপ্নের সেই 'বেঁটে লোকটা'। ওর প্রতিটা ছোট বড়ো হয়ে যাওয়া টিভির পর্দার ছবি মানে খেলার সময় প্রতিটা মুভ প্রায় বাবা ই মুখস্ত করিয়ে দিয়েছিল। বলতো, " দেখ, 'ফুটবল এর ঈশ্বর ' , এরকম ভাবে আর কোথায় কাওকে কোনোদিন খেলতে দেখবি না "। জীবন এর সব পাওনা গুলোর মধ্যে মনে হয় একটা এই যে আমার বাবা র সাথে বসে রাত জেগে খেলা দেখা। আমি আজও প্রায় ই আমার ছেলের সাথে সব রকম খেলাই দেখি, কিন্তু খেয়াল করে দেখি ওদের ছোটবেলা টা আমাদের মতো নয়, ওর নিজের পছন্দের দল আছে, পছন্দের প্লেয়ার আছে, ও তাকেই সাপোর্ট করে। আমার শুরু টা কিন্তু এরকম ছিল না। বাবা আস্তে আস্তে আমায় ধরে ধরে শিখিয়েছিল। যাই হোক। একটা মজার কথা মনে পরে সেই সময়কার। আর্জেন্টিনা সেদিন ইংল্যান্ড এর সাথে খেলবে। বাবা আর আমি খেয়ে উঠে বিছানায় বালিশ নিয়ে বসে গেছি। খেলা শুরু হতে একটু দেরী আছে। অন্য দিন যখন খেলা দেখতে বসতাম তার আগে বাবা একটু একটু গল্প বলতো বিশ্বকাপ ফুটবল আর বেশী করে 'ওই লোকটার' কথা। যাই হোক, বাবা সেদিন একটু বাইরে গেল আর আমি টিভির বিরক্তিকর বকবকানি শুনতে থাকলাম। 'কিছুক্ষন' বাদ আমার ঘুম ভাঙলো, আর দেখি বাবা কিরকম চুপচাপ। আমি বুঝতেই পারছি না কি হলো! বুঝতে আমার একটু সময় লাগলো। আসলে, খেলা শুরু হবার আগেই আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, আর শেষ হলে উঠলাম। কিন্তু সে যা হলো, ঠিক আছে। বাবা এতো চুপচাপ কেন, আর্জেন্টিনা কি হেরে গেছে! না, তা তো নয়। তাহলে কি হলো। অনেক পরে বুঝেছিলাম, বাবা মেনে নিতে পারে নি 'ভগবান এর হাত'। আমি পরে বড় হয়ে ওই খেলাটা অনেক বার দেখেছি, গোলটা ও অনেক বার দেখেছি, বাবা কেও দেখিয়েছি। যত বার বাবা দেখেছে তত বার ই আর ওই খেলাটা নিয়ে আর কোনো কথা বলেনি। যাই হোক, প্রচন্ড এক আর্জেন্টিনা ময় পরিবেশ থেকে আমার খেলা দেখা শুরু।
হ্যাঁ, তার পরেও আমি ব্রাজিল।।
১৯৮৬ তে আমি হয়তো সেই অর্থে ব্রাজিল এর সমর্থক ছিলাম না, অন্য কোনো টীম কে সমর্থন করতাম কি না তা আজ আর আমার ঠিক মনে নেই। তবু আমি ব্রাজিল এর সমর্থক। কেন, কি কারণ, কি ভাবে-সেসব গল্প না হয় আর একদিন হবে।( বাকিটা পরে লিখবো ভালো লাগলে, আর তা না হলে - না বলাই থেকে যাবে।)


Comments

Popular Posts