না ভুলে যাওয়া সময়!

না ভুলে যাওয়া সময়! 

২০০০ থেকে ২০২১!

*
*
*
সেই যে বছর চারিদিকে শুধু ওয়াই টু কে নিয়ে খুব শোরগোল উঠেছিল, কি সব হয়ে যাবে নতুন বছর এলে, কম্পিউটারের সব হিসাব নাকি গোলমাল হয়ে যাবে, ডেট লিখতে কম্পিউটার আর পারবে না, যারফলে ব্যাঙ্কের হিসাব, ট্রেনের টাইমটেবিল, স্যাটেলাইটের ঘোরা- আরও সব কতকিছু বদলে যাবে আর পৃথিবী এসে পৌঁছাবে ধ্বংসের দরজায়, সেই বছর! ভয়ে ভয়ে নতুন বছরে পা দিয়েই বুঝলাম, যা কিছু সামলে দিলে সময় ঠিক-ঠাক চলবে তা বড় ভাই করে দিয়ে পৃথিবীকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। আমরাও বেশ কিছুদিন অপেক্ষায় থাকলাম, দেখি যদি পরে আবার কিছু হয়! মোটামুটি বছরের মাঝখানে এসে আমরাও বুঝলাম, পৃথিবীতে আর নতুনকরে কিছুই হবে না। তাই বিয়েটা করে নেওয়াই ভালো। তাই!
একটা একটা করে অনেকদিনই পেরিয়ে এলাম। পুরোনো এলব্যাম থেকে ছবি খুঁজে দেখতে দেখতে যখন একটাও ছবি মনের মতন লাগছিল না, তখন শুধুই কে ছবিগুলো সেই সময় তুলেছে তাদের মনে করে করে গাল দিচ্ছিলাম। দুপুরে খাবার টেবিলে এই আলোচনা যখন চলছিল, তখন আমাদের দুজনের কথা শুনে ছেলে চুপচাপই খাচ্ছিল। শেষে আমিই বলে উঠলাম,
- 'মাংকা'! আমাদের বিয়ের সময় তুই থাকলে আমায় ছবি নিয়ে এত ভাবতে হতো না!
- আচ্ছা, তাই! তা, কোন বাড়ির হয়ে ছবি আমি তুলতাম?
- সে না হয় দু বাড়িরই কন্টাক্ট তোকেই দিতাম ছবি তোলার! ছবি তুলে দিতিস আর আমরা না হয় ভালো-মন্দ খাইয়ে দিতাম!
- তুমি তো জ্বালিয়ে দিতে আমায়। সব সময়ই 'মাংকা-মাংকা' করে ডেকে ডেকে ছবি তুলিয়ে নিতে। মায়ের তো ছবিই তোলা হতো না!
- আমাদের বাড়িতে ভালো খাবার হয়েছিল! তোকে দুটো বেশি করে পনির-পসিন্দা খাইয়ে দিতাম না হয়!
- ডায়ালগ দিও না বেশি! তোমাদের বাড়ির থেকে মায়েদের বাড়িতে বেশি ভালো খাওয়া-দাওয়া হয়েছিল আমি জানি! ও বাড়িতে তো চন্দননগর থেকে ক্যাটারার এসেছিল। আর তোমাদের তো বর্ধমানের!
- আহা! সে না হয় প্রথমদিন ও বাড়িতে খেয়ে পরের কদিন না হয় আমাদের বাড়িতে খেতিস।
- থাক! তোমায় আর খাওয়া দেখাতে হবে না। আজ কি খাওয়াচ্ছ বলো?
- আজ না হয় চিকেন খাওয়াবো!
- আবার ডায়লগ দিচ্ছ! সকালে দোদো (ও বাড়ির দাদু) চিকেন দিয়ে গেছে, আমি জানি! তুমি কি খাওয়াবে বলো!
- আমি! আমি আবার কি খাওয়াবো? দুপুরে তো পনির পসিন্দা খাওয়ালাম! রাতে তোর মা খাওয়াবে ওদের বাড়ির খাবার! সেদিন যা ছিল, আজও তাই হবে। আমায় কিছু বলিস না!
- সত্যি! তুমি না!
থাক, আর বেশী কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। এরপর আবার কি খেতে চেয়ে বসবে। একটু আগেই বলে কিনা, কেক অর্ডার করে দিচ্ছি! কত বুঝিয়ে, লকডাউন এর গল্প দিয়ে থামালাম। এইজন্য বলে এদের সাথে কথা একদম বাড়াতে নেই। একটু বাড়ালেই!
.
.
.
ছবিটা বিয়ের দিনের ছবি নয়, তবে তার পরের কয়েকদিনের মধ্যেই তোলা। বিয়ের গল্প লিখতে গেলে শেষ হবে না, তাই থাক।
সকলের আশীর্বাদ, ভালোবাসা নিয়েই আমাদের বিবাহিত জীবনের বাইশে পা!

Comments

Popular Posts