গুঁড়ো গুঁড়ো নীল, স্বপ্ন রঙ্গিন।।( 6)

গুঁড়ো গুঁড়ো নীল, স্বপ্ন রঙ্গিন।।

2020 দিকে আর এক পা এগিয়ে!

(21 শে ডিসেম্বর 2019)
সেই কোন এপ্রিল 2009 এর 6 তারিখ শুরু করেছিল স্কুলে যাওয়া আর এবার বোর্ড পরীক্ষা দিয়ে জীবনের এক ধাপ পেরিয়ে বড় হতে সাময়িক বিরতির জন্য প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার রুটিন শেষ করবে। সেদিন বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছে দেবার আগে সকালে ছবি তুলে রেখেছিলাম আর আজ যাবার আগে ছবি তুললাম।
10 বছর 8 মাস 15 দিনের পার্থক্য তো ছবিতেই দেখা যাচ্ছে, যেটা দেখা যাচ্ছে না তা হলো, সেদিনও যা ছিল আজও তাই আছে। সেই শেষ মুহূর্তে চান করা, গায়ের জল মাথার জল নিয়েই ভাত খেতে খেতে মায়ের মোজা পরিয়ে দেওয়া, হাঁক-ডাক চেঁচামিচি করে বাড়ী মাথায় তোলা, আমার সাথে ঝগড়া করে তারপর বাড়ী থেকে বেরোনো- সব, সবই একই আছে।
সেদিন যখন প্রথম স্কুলে যায়, বাবা বলেছিল, "এই আমার শুরু হল কাজ, দেখবি এমন মুগুর তৈরী করবো, তোর জবাব দেবে।" মাঝপথে বাবার চলে যাওয়ায় বাবার অসমাপ্ত কাজ আমাকেই নিজের হাতে তুলে নিতে হয়েছে, আমার মুগুর আমাকেই তৈরী করতে হচ্ছে। কি হবে সেসব না হয় পরে দেখা যাবে!
এই দশ বছরে সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল থেকে আমাকে দু-বার ডেকে পাঠিয়েছে। একবার ওর ক্লাস সেভেন এ যখন ও বাসে একটা ছেলেকে এক ঘুঁষি মেরে অজ্ঞান করে দিয়েছিল আর এই কয়েকদিন আগে যখন ওদের প্রায় গোটা ক্লাসকে স্কুলের ডিসিপ্লিন না মানায় সাত দিন সাসপেন্ড করেছিল। সেবারও ছিল সাতদিন আর এবারও তাই। রেজাল্ট কোনদিনই খুব ভালো করেনি যে প্রাইজ নিতে ডাকবে বা খুব খারাপও করেনি যে সাবধান করে দিতে ডাকবে। মিলিয়ে-মিশিয়ে এই দশ বছর পার করে দিল।
ওকে সকালে বাস-স্ট্যান্ডে দিতে যাওয়া করে শুরু হয়েছিল আমার সকালের হাঁটা-হাঁটি যাতে এখন প্রায়শই ছেদ পড়ে। আর দুপুরে আগে যখন বাবা ওকে নিয়ে আসতো তখন আজে-বাজে খেয়ে বাইরের কলে হাত-মুখ ধুয়ে বাড়ী ঢোকার গল্প তো সবাই জানে। পরে স্বাতী নিয়ে আসা-যাওয়া করলেও শেষ বছর ও নিজেই করে।
স্কুলের স্কাউট ক্যাম্পে ভুবনেশ্বর আর ভূপাল যাওয়া, এডু-ফেস্টে প্রতি বছর নতুন মডেল তৈরী করা, প্রাকটিক্যাল খাতায় আমার নাম লিখে দেওয়া আর মায়ের মলাট দিয়ে দেওয়া, স্কুলের এন্যুয়াল প্রোগ্রামে গিটার বাজানো, ক্লাসে কি পড়া হচ্ছে লিখে না আনা থেকে আগে লিখে নিয়ে যাওয়া, হাতের লেখা খারাপ করার জন্য আমার গালাগাল খাওয়া, স্কুল ক্যাম্পে থালায় ভাত খেয়ে এঁটো থালা ব্যাগে ঢুকিয়ে আনা, ধীরে ধীরে বন্ধু পাল্টে নেওয়া- এরকম অনেক অনেক কিছুর সাক্ষী হয়ে থাকলাম এই ক বছরে।
2020 জানুয়ারী মাসে রিহার্সাল টেস্ট আর ফ্রেব্রুয়ারী মাসে ফাইনাল পরীক্ষা দেবে।
সেদিন আমরা ঠিক করেছিলাম ও কোন স্কুলে পড়বে আর এর পর ও ঠিক করবে ও কোন স্কুলে কি নিয়ে পড়বে। আসলে আমাদের এক দীর্ঘ অধ্যায় শেষ হলো আর ওর তো এই সবে শুরু হলো। স্কুলের দিনগুলো পেরিয়ে যাওয়া যে কি কষ্টের তা আমরা আজ এই সময়ে এসে বুঝি। তবুও এগিয়ে যেতেই হবে।
তুই ও এগিয়ে চল। সাথেই আছি।
ঘুমোনোর আগে যে অনেক, অনেক দূরে যেতে হবে তোকে!!

21.12.2019

Comments

Popular Posts