গুঁড়ো গুঁড়ো নীল, স্বপ্ন রঙ্গিন।। (৫) ভূত চতুর্দশী: বদলেও বদলায় না যা!
#গুঁড়ো গুঁড়ো নীল, স্বপ্ন রঙ্গিন।। (৫)
ভূত চতুর্দশী: বদলেও বদলায় না যা!
প্রায় টানা চারদিনের বৃষ্টিতে আমিও যেমন বিরক্ত হয়ে উঠেছি ঠিক তেমনই বাড়ীর লোকজনও অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে আমার নানা জ্বালাতনে। ছেলে, ছেলের মা আর আমার মা সবারই প্রায় মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে উঠেছি। ওরাও ভাবছে কবে যে আমার স্কুলটা খুলবে, আর আমি ভাবছি কবে যে বৃষ্টি থামবে, আর আমি একটু আড্ডা মারতে বেরুবো!
আজ সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার হয়ে থাকলেও বৃষ্টি প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু সকাল থেকেই আলসেমিতে পেয়ে বসেছে। কিছুই প্রায় করতে মন যাচ্ছে না। কুঁড়েমি করে শুয়ে বসেই কাটাচ্ছি। দুপুরে ভাত খাবার পর গল্পের বই নিয়েই একটু নাক ডেকে নিলাম। পাশে বসে ছেলে পড়ছিল। বলছিলো যে, শেষ কয়েক সপ্তাহে আমায় মোবাইল নিয়ে খুট-খাট আর গল্পের বই নিয়ে ঘুম ছাড়া আর কিছুই প্রায় করতে দেখা যায় নি! কি লজ্জাকর পরিস্থিতি মাইরি! বিকাল থেকেই ভাবছিলাম ছোটবেলায় আজকের দিনে আমি কি করতাম! প্রায় কবর থেকে স্মৃতি উঠে এলো যে, আজ ছিল আমাদের হিজললতি ( না হিজলবাতি?) পোড়ানোর দিন। গ্রামের বাড়ীতে থাকার সময় কালীপূজোর আগের দিন সকাল থেকে আমরা সব ছেলে-পুলের দল খড় আর বড় লাঠি দিয়ে হিজলবাতি বানাতাম। তারপর সন্ধ্যার সময় সবাই মিলে গোল হয়ে ঘিরে আগুন লাগতাম আর গ্রামের সব ভূত তাড়াতাম। আমার মেজ-দাদু ছিল সেসব দিনের আমাদের একমাত্র সঙ্গী। আমাদের ভূত চতুর্দশী পালনের সাথী। আর আজ আমার ছেলে কিনা বিকালে বাড়ীর স্যার এর কাছে পড়তে বসেছে। জানিনা আমার মতো ওর দাদু থাকলে নিশ্চয়ই আজকে পড়তে বসতে দিতো না! ধুর! ধুর! কত পাল্টে গেল দিনগুলো!
যাই হোক, আমি তো আরো বিরক্ত হতে থাকলাম উপরের ঘরে বসে। কি যে করি! শেষে ভাবলাম ছেলেকে খুশী করতে আর বাড়ীর লোকের বিরক্তি না বাড়িয়ে একটু মাংসই না হয় রান্না করি। আসলে আমার ছেলেটা একটু বাইরে বা বাড়ীতে অন্যরকম খেতে পেলেই খুশী হয়। আমার মা কে বললাম, দাও মশলাগুলো কেটে দাও তো! গোটা মশলা দিয়ে অন্যরকম মাংস বানাবো। ছেলের মা বললো যে আজ নাকি তার ছুটি! আমি শুরু করলাম। শেষ করলাম প্রায় দশটা নাগাদ। ছেলের মা তো না চেখেই শুধু দেখেই বললো, 'বাহ! দারুন হয়েছে তো, ভাইফোঁটার দিন সকালের রান্নাটা তুমিই করে দিও!' আচ্ছা, সে সব না হয় হবে। আগে আমার সব থেকে বড় সমালোচক, বাড়ীর একমাত্র খাদ্য রসিক, কিছুটা পেটুক আমার ছেলে খেয়ে আগে কি বলে দেখি!
সবাই মিলে একসাথেই খেতে বসেছি। আমার মা প্রথমেই বললো, 'বাহ! সুন্দর রঙ হয়েছে তো!' ছেলের মা বললো, 'তেলে একটু চিনি দিয়ে ভেজে নিলেই তো ভালো রঙ হয়।' আরে বাবা! এসব তো আমি জানি নাকি! মানলাম, তুইই শিখিয়েছিলি না হয় একসময়। এখনো অবধি কেউ কিন্তু খেতে কেমন হয়েছে বললো না! ছেলে বললো, খেতে তো ভালোই হয়েছে, টম্যাটো সস দিয়ে তো রঙটা করেছো। আমি সম্মতি জানালে বললো,
'আন আরতিস্ট ক্যান অনলি রেকগনাইজ দ্য ট্যালেন্ট অফ আনাদার আরতিস্ট, ওয়ান ইস মেজর, আনাদার ইস মাইনর!' ( এই 'আরতিস্ট' উচ্চারণ করা ও শিখেছে আমার স্প্যানিশ বান্ধবীর কাছে! আর কিছু না শিখলেও এই উচ্চারণের কায়দাটা ভালোই রপ্ত করেছে) খানিকবাদে বুঝলাম, রান্নাটা ভালো বললেও ও নিজেকে আসলে রান্নার সমঝদার সেটা বুঝিয়ে দিলো।
এরপর বললাম, 'চল যাই, ছাদে আলো আর মোমবাতি লাগিয়ে আসি।' কিছুক্ষন বাদে দেখি, নিজের ঘরের ভিতরে চারিদিকে ওই চেন-লাইট গুলো লাগিয়ে বসে আছে। সাথে মোবাইল আর ঘর অন্ধকার করে এলইডির রঙীন আলো। বললো, 'থাক এবার না হয়, ঘরেই থাক।'
কিছুক্ষন বাদে বললো, 'এগুলো এবার পার্মানেন্ট এখানেই থাকবে।' সত্যিই ভেবে পাই না, ছেলেটা আদেও ক্লাস টেনে পড়ে তো! কিছু উত্তর করে এখন লাভ নেই! তাহলেই ঝগড়া হয়ে যাবে এখনই! তার থেকে যা বলছে তাই থাক। আমিও তো ছোটবেলায় এই হিজলবাতি পোড়াবার সময় ভাবতাম রোজ সন্ধ্যাবেলায় যদি হিজলবাতি পোড়ানো হতো তাহলে আর সন্ধ্যাগুলো মাস্টার দাদুর কাছে পড়তে বসতে হতো না!
মহালয়া থেকে দূর্গাপূজো হয়ে লক্ষীপূজো শেষ হয়ে কালীপূজো এলেই তো শেষ! এ বারের মতো ছুটি শেষ। আবার অপেক্ষা একবছর!
**মাংস কেমন হয়েছে জানতে চাইলে না হয় একদিন এসো আমাদের বাড়ী। আপাতত এখন ছেলের আলো-মাখা ছবিই থাকলো।
27.10.2019
ভূত চতুর্দশী: বদলেও বদলায় না যা!
প্রায় টানা চারদিনের বৃষ্টিতে আমিও যেমন বিরক্ত হয়ে উঠেছি ঠিক তেমনই বাড়ীর লোকজনও অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে আমার নানা জ্বালাতনে। ছেলে, ছেলের মা আর আমার মা সবারই প্রায় মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে উঠেছি। ওরাও ভাবছে কবে যে আমার স্কুলটা খুলবে, আর আমি ভাবছি কবে যে বৃষ্টি থামবে, আর আমি একটু আড্ডা মারতে বেরুবো!
আজ সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার হয়ে থাকলেও বৃষ্টি প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু সকাল থেকেই আলসেমিতে পেয়ে বসেছে। কিছুই প্রায় করতে মন যাচ্ছে না। কুঁড়েমি করে শুয়ে বসেই কাটাচ্ছি। দুপুরে ভাত খাবার পর গল্পের বই নিয়েই একটু নাক ডেকে নিলাম। পাশে বসে ছেলে পড়ছিল। বলছিলো যে, শেষ কয়েক সপ্তাহে আমায় মোবাইল নিয়ে খুট-খাট আর গল্পের বই নিয়ে ঘুম ছাড়া আর কিছুই প্রায় করতে দেখা যায় নি! কি লজ্জাকর পরিস্থিতি মাইরি! বিকাল থেকেই ভাবছিলাম ছোটবেলায় আজকের দিনে আমি কি করতাম! প্রায় কবর থেকে স্মৃতি উঠে এলো যে, আজ ছিল আমাদের হিজললতি ( না হিজলবাতি?) পোড়ানোর দিন। গ্রামের বাড়ীতে থাকার সময় কালীপূজোর আগের দিন সকাল থেকে আমরা সব ছেলে-পুলের দল খড় আর বড় লাঠি দিয়ে হিজলবাতি বানাতাম। তারপর সন্ধ্যার সময় সবাই মিলে গোল হয়ে ঘিরে আগুন লাগতাম আর গ্রামের সব ভূত তাড়াতাম। আমার মেজ-দাদু ছিল সেসব দিনের আমাদের একমাত্র সঙ্গী। আমাদের ভূত চতুর্দশী পালনের সাথী। আর আজ আমার ছেলে কিনা বিকালে বাড়ীর স্যার এর কাছে পড়তে বসেছে। জানিনা আমার মতো ওর দাদু থাকলে নিশ্চয়ই আজকে পড়তে বসতে দিতো না! ধুর! ধুর! কত পাল্টে গেল দিনগুলো!
যাই হোক, আমি তো আরো বিরক্ত হতে থাকলাম উপরের ঘরে বসে। কি যে করি! শেষে ভাবলাম ছেলেকে খুশী করতে আর বাড়ীর লোকের বিরক্তি না বাড়িয়ে একটু মাংসই না হয় রান্না করি। আসলে আমার ছেলেটা একটু বাইরে বা বাড়ীতে অন্যরকম খেতে পেলেই খুশী হয়। আমার মা কে বললাম, দাও মশলাগুলো কেটে দাও তো! গোটা মশলা দিয়ে অন্যরকম মাংস বানাবো। ছেলের মা বললো যে আজ নাকি তার ছুটি! আমি শুরু করলাম। শেষ করলাম প্রায় দশটা নাগাদ। ছেলের মা তো না চেখেই শুধু দেখেই বললো, 'বাহ! দারুন হয়েছে তো, ভাইফোঁটার দিন সকালের রান্নাটা তুমিই করে দিও!' আচ্ছা, সে সব না হয় হবে। আগে আমার সব থেকে বড় সমালোচক, বাড়ীর একমাত্র খাদ্য রসিক, কিছুটা পেটুক আমার ছেলে খেয়ে আগে কি বলে দেখি!
সবাই মিলে একসাথেই খেতে বসেছি। আমার মা প্রথমেই বললো, 'বাহ! সুন্দর রঙ হয়েছে তো!' ছেলের মা বললো, 'তেলে একটু চিনি দিয়ে ভেজে নিলেই তো ভালো রঙ হয়।' আরে বাবা! এসব তো আমি জানি নাকি! মানলাম, তুইই শিখিয়েছিলি না হয় একসময়। এখনো অবধি কেউ কিন্তু খেতে কেমন হয়েছে বললো না! ছেলে বললো, খেতে তো ভালোই হয়েছে, টম্যাটো সস দিয়ে তো রঙটা করেছো। আমি সম্মতি জানালে বললো,
'আন আরতিস্ট ক্যান অনলি রেকগনাইজ দ্য ট্যালেন্ট অফ আনাদার আরতিস্ট, ওয়ান ইস মেজর, আনাদার ইস মাইনর!' ( এই 'আরতিস্ট' উচ্চারণ করা ও শিখেছে আমার স্প্যানিশ বান্ধবীর কাছে! আর কিছু না শিখলেও এই উচ্চারণের কায়দাটা ভালোই রপ্ত করেছে) খানিকবাদে বুঝলাম, রান্নাটা ভালো বললেও ও নিজেকে আসলে রান্নার সমঝদার সেটা বুঝিয়ে দিলো।
এরপর বললাম, 'চল যাই, ছাদে আলো আর মোমবাতি লাগিয়ে আসি।' কিছুক্ষন বাদে দেখি, নিজের ঘরের ভিতরে চারিদিকে ওই চেন-লাইট গুলো লাগিয়ে বসে আছে। সাথে মোবাইল আর ঘর অন্ধকার করে এলইডির রঙীন আলো। বললো, 'থাক এবার না হয়, ঘরেই থাক।'
কিছুক্ষন বাদে বললো, 'এগুলো এবার পার্মানেন্ট এখানেই থাকবে।' সত্যিই ভেবে পাই না, ছেলেটা আদেও ক্লাস টেনে পড়ে তো! কিছু উত্তর করে এখন লাভ নেই! তাহলেই ঝগড়া হয়ে যাবে এখনই! তার থেকে যা বলছে তাই থাক। আমিও তো ছোটবেলায় এই হিজলবাতি পোড়াবার সময় ভাবতাম রোজ সন্ধ্যাবেলায় যদি হিজলবাতি পোড়ানো হতো তাহলে আর সন্ধ্যাগুলো মাস্টার দাদুর কাছে পড়তে বসতে হতো না!
মহালয়া থেকে দূর্গাপূজো হয়ে লক্ষীপূজো শেষ হয়ে কালীপূজো এলেই তো শেষ! এ বারের মতো ছুটি শেষ। আবার অপেক্ষা একবছর!
**মাংস কেমন হয়েছে জানতে চাইলে না হয় একদিন এসো আমাদের বাড়ী। আপাতত এখন ছেলের আলো-মাখা ছবিই থাকলো।
27.10.2019
Comments