মাতব্বর হনু, ডাল ভরা আমের মুকুল আর আমি!

একটা বড় আম গাছ আমাদের বাড়ির পিছনেই আছে। আমাদের বলেই জানি। বাড়ি হবার সময় আমিই বসিয়েছিলাম কোন একটা খাওয়া আমার আঁটি। বেশ স্বাস্থ্যবান এই গাছটা। পাতা গুলো বেশ বড়, একটু জংলী টাইপের। আমার এক গাছ বিশারদ দাদু প্রায়ই বলে, 'গাছটা বেশ ভালো জাতের, একটু যত্ন করতে পারিস না। না, যত্ন কোনদিনই কিছুই করি না। তাও প্রচুর আম প্রতিবছরই হয়। আমগুলোও বেশ বড়-সড়ো ই হয়। দেখতেও বেশ সুন্দর। এই অবধি পড়েই নিশ্চই ভাবতে শুরু করেছ, 'ও তাই! এতদিনের বন্ধু, সাগর! কৈ আমাদের তো কোনদিন খাওয়ায় না বা বাড়ির জন্য একটাও দেয় না!' ঠিকই ভেবেছো। কোনদিন কাওকে একটাও দিই না আমাদের গাছের আম। গাছটা ভর্তি হয়ে যে আমগুলো আসে তার সামনের দিকে কিছু আম শুধু আমরা নিজেদের জন্য পাড়ি আর বাকি আম পাড়িও না বা পাড়তেও পারি না। গরমকাল জুড়ে আমাদের বাড়ি এলে অনেকেই দেখে যায় আমাদের গাছ ভর্তি আম আর যদি তার আগের দিন বিকালে ঝড় হয়ে থাকে তাহলে গাছতলা জুড়ে আম ছড়িয়ে থাকে। থাকুক আমগুলো তাদের মতো, আমাদের খুব দরকার হলে একটা দুটো কুড়িয়ে আনি পিছনের দিকে গিয়ে। কি হলো? ভালো লাগছে না শুনতে আর আমের গল্প! আচ্ছা থাক তাহলে। তো একটু অন্য কথা হোক। ফরেস্টের (বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের) কাছে বাড়ি হবার জন্য মাঝে-মাঝেই প্রচুর হনুমান আমাদের পাড়ায় একটু ঘুরতে আসে। আর আসে যখন তখন বেশ কেরামতি দেখিয়ে যায় আমাদের বাড়িগুলোর উপর। আসলে ওদের নিজেদের এলাকায় আসে তো ওরা! এখানকার গাছ-পালা, পুকুর সবই তো ওদের চেনা তাই একটু রাল্যা নিয়ে যায় আর কি! সেবার গরমে এসে আমগাছে প্রায় খান দশেক হনু এসে দাপাচ্ছে। আর খান কতক ছাদে, পাঁচিলে বসে দর্শক হয়ে ওগুলোর মাতামাতি দেখছে। আমি বাড়িতেই ছিলাম। দৌড়ে ছাদে গেলাম। কিছু না, শুধু ছাদের দরজা লাগাতে। গিয়ে দেখি ছাদের পাঁচিলে যে কটা বসে আছে তাদের হাতেও বেশ কয়েকটা করে আম আর গাছেরগুলোর হাতেও একটা-দুটো। সবকটা মিলে ডাল জুড়ে মাতামাতি করছে আর প্রবল চিৎকার করছে। আমি ছুটে ছাদের ধারে গিয়ে দেখতে গেলাম যে কি হয়েছে, মারপিট লেগেছে নির্ঘাত! ওমা! আমায় দেখেই সব চুপ। একটা একটু সরে গেল আর ডালে বসে মাতব্বর হনুটা হাতে একটা কামড়ানো দাঁত-বসানো বড় আম নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে! আমি তো জানি কি হয়েছে ওর! বুঝলাম এতোক্ষণ ওরা কি করছিল! আর কেনই বা মাতব্বরটা আমার দিকে ওমন করুণ চোখে তাকিয়ে ছিল। আসলে ওদের যতো খিদেই পাক ওরা একটা আমও খেতে পারবে না সেটা আমি জানি! তাই তো আম নিয়ে একে -অপরকে ছুঁড়ছিল। আমি যাওয়াতে থেমে গেছে। আর আমার দিকে তাকিয়ে শুধু এটাই বলতে চাইলো: 'বোকা**! এর থেকে তেঁতুল গাছ লাগাতে পারতিস!' সেইবারের পর আর হনুর দল পাশের কাঁঠাল গাছে চাই কি নিম গাছে বসে ডাল ভাঙে তবু ওই আম গাছের একটা আমও ছেঁড়ে না। যাক, যেটা বলছিলাম সেটা হলো আমরা কি করি? আমরা একটা আম কুড়িয়ে আনি তাতে দিন চারেক টক ডাল খাওয়া হয়ে যায়। আর কি! আর কিছু হবে না ওই আম দিয়ে। হনুতেও যে আমের দিকে তাকায় না, সেটাও আমরা খাই। তাই ওই গাছে মুকুল এলো না আম বড় হলো সেসব আমরা খুব একটা তাকাতাম না। এবার সারাদিন বসেই আছি, তাই বিকালে ছাদ থেকে গাছটায় দেখলাম মুকুল আর ছোট ছোট আমে ভরে গেছে। তাই পাইপ দিয়ে ধুয়ে দিলাম একটু ছাদ থেকে। মায়া হলো, ছবি তুললাম। গাছটা আমার খুব পছন্দের, ভালোলাগার। তাই আম যাইহোক, থাকবে আমাদের সাথেই। যত্নে-অযত্নে থাক আমাদের সাথেই, আমাদের পরিবারেরই একজন হয়ে। বাড়ির সব ছেলে কি সমান হয়! না সমান হতে হবে কেউ দিব্বি দিয়েছে! তবে তোমরা কেউ চারা চাইলে নিয়ে যেতেই পারো। প্রতিবছর অনেক চারা হয় গাছের তলায়। বর্ষার পর এসো। নিয়ে যেও!

আর একটা দিন পার করলাম #করোনামুক্তভারতবর্ষের দিকে।
25.03.2020


Comments

Popular Posts