গুঁড়ো গুঁড়ো নীল, স্বপ্ন রঙ্গিন।। (৬): ব্যাঙ্ক নিয়ে মাইরি আজকাল খুব লোচা করছো!

- ব্যাঙ্কের দায়িত্ব ছাড়ো তো তুমি!

- কেন? কি হলো!
- ব্যাঙ্ক নিয়ে মাইরি আজকাল খুব লোচা করছো!
- মানে! সেটা আবার কি?
- অতো মানে বোঝার দরকার নেই। এবার তুমি রিটায়ার। তোমায় পঞ্চাশ টাকা দেওয়া হলো।
- দিয়ে আমি কি করব?
- কিছু করবে না। এবার থেকে ব্যাঙ্কের দায়িত্ব আমার।
- আর আমি বাদ হয়ে গেলাম! আমার দোষটা কি, সেটা আগে শুনি!
- আগের বার মা যে তোমাকে চারশো টাকা দিল, সেটা তো তুমি জমা না করে নিজের কাছে রেখে দিলে!
- ও, তাই! ভুলে হয়ে গেছে হয়তো!
- ওলে বাবা লে! ভুলে হয়ে গেছে! যাও, বেশি ফালতু বক-বক কোর না। ফাইন করলাম না যাও! ছেড়ে দিলাম। আর তোমায় কিছুই দায়িত্ব নিতে হবে না।
ইসস! এরম করেই পঞ্চাশ টাকা পেনশন দিয়ে যদি আমরা ব্যাঙ্ক নিয়ে 'লোচা' করা পাবলিকগুলোকে রিটায়ারমেন্ট দিতে পারতাম দেশ থেকে! তাহলে হয়তো দেশটার অর্থনীতি আর একটু ভালো হতো! যাই হোক, ওসব পরে ভাবা যাবে। তারথেকে আরো সিরিয়াস যে কাজকর্ম এখন চলছে, মানে কাল যে বললাম আর এক যুদ্ধের কথা বলবো, সেই নিয়ে কথা চলুক। এই সময়ে যে তিন নম্বর যুদ্ধ আমাদের বাড়িতে চলছে তারই কিছু কথোপকথন আমার সাথে ছেলের উপরে উল্লেখিত। এই যুদ্ধে বসি আমরা তিনজন। আমি, ওর মা, আর ও। তিনজনে তিনপক্ষ যদিও। তাও ও চেষ্টা করে ওর মাকে ওর দলে টানতে। আর আমার উদ্দেশ্য থাকে ওদের কোন দলবাজি করতে না দেওয়া। প্রতিবারের এই যুদ্ধে জয়-পরাজয় আমার আর ওর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। এখনো পর্যন্ত যুদ্ধের ফলাফল ৫:৫. তাই এখন শুধু ডায়লগ চলছে:
- ছাড়, ছাড়! আগের দিন দেখালাম তো কেনা কাকে বলে! কটা জায়গা কিনলাম, বলতো?
- তোমার থেকে তো আমি বেশি জায়গার মালিক ছিলাম।
- বলিস কি রে! আমি যে অক্সফোর্ড স্ট্রীট কিনলাম। ওখানে আমার চারটে বাড়ী বসানো ছিল!
- আমার যে পিকাডেলি স্কোয়ারে হোটেল বসানো ছিল! কার দাম বেশী?
- ধুর! তার থেকে তো আমি তো মে ফেয়ার রোডে দুটো বাড়ী বসিয়ে বেশী রেন্ট পাচ্ছিলাম!
- আর আমার যে মেরিলিবোর্ন স্টেশন কেনা ছিল!
- আমারও তো দুটো স্টেশন কেনা ছিল!
- তোমার দুটো কেনা নয়! একটা তো তুমি মায়ের কাছে মর্টগেজ নিয়েছিলে!
- মা না দিলেও আমি কিনতাম।
- পারতে না।
- ঠিক আছে। পরের বার দেখাবো।
- কি দেখাবে তুমি? তুমি তো আগের দিনই ব্যাঙ্করাপ্ট হয়ে গিয়েছিলে।
- সে তো ব্যবসা করতে গেলে ওরকম অনেকেই হয়!
- আমি কিন্তু একবারও ব্যাঙ্ক থেকে ধার নিই নি!
- ধুর! ব্যাঙ্ক থেকে ধার না নিলে কি ব্যবসা করা যায়!
- বলেছে তোমায়!
- ঠিক আছে, পরের বার দেখবো।
পাশ থেকে শুনলে যে কেউ ভাববে বাবা-ছেলে নয়, যে কোন দুই ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট কথা বলছে। আর তোমরা যারা বোঝ, তারা তো জেনেই গেছ কি নিয়ে কথা হচ্ছে। মোটামুটি দুপুরে আর সন্ধ্যায় আজকাল আমি আর আমার ছেলে নিয়ম করে লন্ডনে বাড়ী, হোটেল, স্টেশন কিনছি বা বিক্রি করছি। মাঝে মাঝে ভাড়াও দিচ্ছি ওর মাকে। আর দু ঘন্টা বাদে সব গুটিয়ে একটা বড়ো বাক্সে রাখছি। কি? কি আবার! টাকা, হোটেল, ব্যাঙ্ক, বাড়ী, স্টেশন, রাস্তা সব, সবাই। আমরা 'মনোপলি' গেমসটার কথা বলছি। আর সেই যুদ্ধই চলছে আজ এই কদিন ঘরে বসে থেকে।
শেষ ফলাফলের পর আজ রাত্রে এগিয়ে যাবার চ্যালেঞ্জ:
- তুই পরের বার আর পারবি না আমার সাথে।
- দেখা যাবে, কে পারে?
- এবার আমি অন্য টেকনিকে খেলবো।
- যাতেই খেলো তুমি, জিতবো আমি।
- তুই পারবি না। তুই তো জানিসই না যে, 'খেলার জন্ম বিলেতে'।
- সেটা আবার কি? ও মা, ওটার মানে কি?
- দেখলি, বললাম না, তুই জানিস না।
- জানলাম তো। তাতে কি হবে?
- হবে কি সেটা পরের বার দেখতে পাবি।
একটু বাদে আবার নতুন গেম। আবার নতুন প্ল্যান। এবার হারাতেই হবে আবার, নাহলে মান- সম্মান থাকবে না। একটা নতুন টেকনিক আমি এই কদিন খেলে আবিষ্কার করেছি সেটা হল তোমার টাকা থাকুক আর না থাকুক ধার পাওয়ার লিমিট পর্যন্ত ধার নিয়ে তুমি শুধু কিনে যাও। পরে টাকা ঠিক ফেরত পাবে আর ধারও শোধ হয়ে যাবে। এই একটা জায়গায় ও একটু পিছিয়ে যায় আমার কাছে। আসলে ছোট তো, ভাবতেই পারে না অতো টাকা ধার নেবার কথা। ভাবে সত্যি সত্যিই ধার! ধুর, বোকা!
আমার ন-দাদু বলতো, 'জিতলেও ঘরে ভাত আর হারলেও ঘরে ভাত!' আসলে অতোটা
ডেসপারেট হতে পারে না ও! তা না হলে বাকি সমস্ত ব্যাপারে ও অনেকের থেকে বিশেষ করে আমার থেকেও বেশী খেলোয়াড়সুলভ। কেউ ভুল করলে বা ভুল চাল দিলেও ও ধরিয়ে দেয়। কেউ টাকা কম-বেশী পেলে ও বলে দেয় কি ভাবে সে বেশী পেতে পারে। এমনকি শেষ খেলাতেও ও যখন আমার কাছে জিতছে তখনো আমি কি করে আরো ছশো টাকা বেশী পাবো সেটা বলে দিল।
যাক, চা নিয়ে আমার মা চলে এসেছে।
বিছানায় সাজানো হয়ে গেছে।
আমরা আবার বসছি যুদ্ধে।
হার-জিত! থাক না হয়! ওর সাথে যতই লড়ি, ট্রফি তো বাড়ীতেই থাকবে আর খেলে উঠে একসাথেই খেতে বসবো। শেষ কথা:
- আচ্ছা, মা কেন খেলে বলোতো? জিতেতেও তো পারে না!
- না হলে তোর-আমার মারপিট হলে কে থামবে!
- ও, তাই!
- হুঁ!
- ও মা, এবার তুমি আর বাবার কথা শুনবে না। আমার মতো খেলবে।
- যা, যা! যাই কর, দুটোকেই হারাবো এবার!
জানি, খুব কষ্টকর এক সমস্যার মধ্য দিয়ে চলেছি আমরা সবাই, আমি-তুমি-আমাদের দেশ। কিন্তু ওই যে, এখানে আমাদের কাজ তো শুধু ঘরে থাকা। তাই এই ঘরে থাকার যুদ্ধে একটা পনের বছরের ছেলেকে যার বোর্ড পরীক্ষা অর্ধেক হয়ে থেমে গেছে, তাকে মানসিক ভাবে সুস্থ রাখতে আর কিইবা করতে পারি! মোবাইল, ল্যাপটপ, গল্পের বই পেরিয়েও নিশ্চই এতে খুশী হয়, তাই তো খেলার সব সরঞ্জাম নিয়ে বিছানায় উঠে আসে।
সবাই সাবধানে থাকুন। বাড়ীতে থাকুন। ভালো থাকুন।
আর একটা দিন পার করলাম #করোনামুক্তভারতবর্ষের দিকে।


Comments

Popular Posts