কষ্ট সামলে কেষ্ট, আমরা পাতলা ম্যানিফেস্টো!!

সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই আজ প্রায় ছুটেই চলেছি। না না, বাইরে নয়, বাড়িতেই। আসলে আজ সকাল থেকেই সব রান্নার কাজ থেকে মাকে আর স্বাতীতে ছুটি দিয়ে নিজেই লেগে গেলাম। মাকে বলে দিলাম শুধু কাটা-কুটি করে ঘর-দোর ঝাঁট দিয়ে মুছে দিতে আর স্বাতীকে বললাম ছেলেকে উঠিয়ে-খাইয়ে, কাপড়-জামা কেচে চান করে উপরের ঝামেলা মেটাতে। একটু লিকার চা আর শুকনো মুড়ি খেয়ে লেগে গেলাম আমরা তিনজন কাজে। প্রথমে ভেবেছিলাম আমার কাজটা একটু কম কারণ কালকের অনেক রান্না আছে তাই আজ অল্প একটু কিছু করে নিলেই হবে। কি করলাম সেসব পরে বলছি। খেয়ে উঠে বিছানায় একটু বসতেই প্রথমেই কোমরটা যেন আর সাড়া দিচ্ছিল না। কোনরকমে গা টা একটু এলিয়েছি, এমন সময়ই দেখি হোয়াটসআপে একটা মেসেজ এলো। ফোন বলে যে একটা বস্তু আমার আছে, সেটা সকাল থেকে ভুলেই গিয়েছিলাম। মেসেজ, ছবি, নোটিফিকেশন অনেক রয়েছে না দেখা কিন্তু যেটা এই মাত্র এলো সেটাই প্রথম খুললাম। দেখলাম আমার একমাত্র ভাই-বন্ধুর ছবি সহ একটা মেসেজ। ছবিটা কি সেটা আমার পোস্টের সাথেই আছে। লুচি আর ছোলার ডালের ছবি। কিন্তু ছবির সাথে লেখা লোকজনকে চুলকে দেবার জন্য যথেষ্ট। হোয়াটসআপ কথোপথনটাই না হয় দেখা যাক:

- গরীবের ছোলার ডালই চিকেন😢😢
- সেটা ভালো। কিন্তু কথা হচ্ছে গরীবটা কে? আর ছবি দেখানো তখনই ভালো হতো যদি তুমি বানাতে! বানাওনি তো!😊 তাই, যা দিচ্ছে চুপ-চাপ খাও।
- আমিই বানিয়েছি তো।
- কোনদিনই সেটা সম্ভব নয়। আর যদি বানাও তাহলে বলি, তোমার কোন আক্কেল জ্ঞান নেই! বাড়ীতে একটা ছোট ছেলে। তাকে একটু ভাত রেঁধে দিতে পারলে না! সকালের জলখাবাটা দুপুরের বলে চালিয়ে দিলে!😢
- এটা বড়ন্তি থেকে শিখে এলাম না 😋
- হা হা! তোমার দারোগা বউ তোমায় এটুকু রাঁধিয়ে ছেড়ে দিল!
- বউ বলে দয়া নেই 🤪
- হা হা!! তা অবশ্য বটে! তোমার ঐ চেহারা দেখেই মনে দয়া-মায়া জেগেছে তার!
- 🤦‍♂
- লজ্জা পেও না! তোমার আজকের পোস্ট করা ছবি দেখেই বললাম। যদিও একটুও বদলাও নি! শুধু চোখের ভাষা আমাদের সাথে মিশে মিশে আজকাল মদনদার মতো হয়ে যাচ্ছে!😊
- ওই জন্যই তো চশমা পড়তে হচ্ছে!
- ঠিক বলেছ।
বুঝতে পারছেন তো, মস্করার লেভেলটা কি! সারাদিন খাটা-খাটনির পর একটু শুতে এলাম আর উনি এখন আমায় জানাতে এসেছেন কি সুন্দর লুচি উনি বানিয়েছেন সঙ্গে নাকি ছোলার ডালও। লুচিগুলোর সাইজ আর মাপ দেখে বোঝাই যাচ্ছে কে বানিয়েছে। তাও উনি নাকি বললেন যে বড়ন্তি থেকে শিখে এসেছেন। এটাও এক ধরনের আমাকে চুলকে দেওয়া। বুঝলেন না তো! আসলে বড়ন্তি বেড়াতে গিয়ে হোটেল মালিক আমাদের আটার শক্ত লুচি দিয়েছিল। বাবুরা কেউই খান নি, মানে মুখেই তুলতে পারেন নি। আমি এক গ্রামের ছেলে, ভোলে-ভালা যে ওই লুচি যে বাজে তা বোঝার আগেই খান তিনেক খেয়ে আবার চেয়েছিলাম। তাই তিনি আমায় 'বড়ন্তির লুচি' শোনাচ্ছেন। ঠিক আছে। আমার সেদিন না-হয় খিদে পেয়েছিল! সেটা আবার বলার কি আছে! যাই হোক, ভায়ের ওই লুচি আর ছোলার ডালে উৎসাহিত হয়ে ভাবলাম সারাদিন অনেক রান্নাই তো করছি। দেখি না একবার চেষ্টা করে। বউ তো শুনে এই মারে সেই মারে! কোনরকমে রাজী করালাম যে শুধু লুচিই হোক। প্রচন্ড চেষ্টা-চরিত্রের ফল কি তা তো সবাই ছবিতেই দেখছে। সেই লুচি করা থেকে এখন অবধি ভেবে চলেছি, ভাই আমার শিল্পী মানুষ সেটা জানি! কিন্তু এতো সুন্দর গোল-গোল, একটুও না পুড়ে যাওয়া বড় বড় গুপী-বাঘার ভূতের রাজার বর দেওয়া লুচির মতো লুচি কি করে করলো! জীবনে একবারও তো বাড়িতে রান্নাঘরের ধার দিয়েও যেতে দেখি না! যাবেনই বা কেন? রান্নার দিদিই তো দেখি সব করেন ও বাড়িতে 'ম্যাডামজী'র তত্ত্বাবধানে। ওই দ্যাখো! এবার মনে পড়েছে! ঠিক এরকম লুচিই তো ওবাড়িতে সেদিন খেলাম 'ম্যাডামজী' নিজে আমাদের জন্য করেছিলেন। ভাই আমার সত্যি সত্যি আজকাল দিলুদা হয়ে যাচ্ছে! লুচি প্রথম চেষ্টা করলে কি হয় সেতো আমার ছবি দেখেই বোঝা যাচ্ছে। ভাইয়ের ভাগ্যে লুচি-ছোলার ডাল জুটলেও সেটা নিয়ে আমায় শুনিয়ে দিল যে ছোলার ডাল নাকি ওনার মতো গরীবের চিকেন! কবে আমি একবার আমার চিকেন রান্নার ছবি দিয়েছিলাম তাতেই এই! ভাবলাম একবার বলি, তোমার মতো গরীব যদি ভারতবর্ষের সব মানুষ হোত, তাহলে আর আমাদের দেশে আর কিছুর অভাব থাকত না! যাই হোক, আমার তো সেই গরীবের চিকেন ও জুটলো না। অগত্যা নুন দিয়েই লুচি খাবো ঠিক করেছিলাম। দেখে ওনার মায়া হওয়ায় একটু লিকার চা পেলাম। যাক, এসব তো আর ভাই বুঝবে না! সত্যিই ভাই আমার বদলে গেছে। কেন? তোমরা দেখেও বুঝতে পারলে না! চোখ দুটো দেখ! কোথায় হারিয়ে গেল সেই স্বপ্নালু সরল চোখ দুটো যা আগামীর স্বপ্ন দেখাতো আমাদের। আমাদের সাথে মিশে-মিশেই মনে হয় এরকম মদনদা হয়ে গেল!
ছবি পরিচিত পর পর:
১. ভায়ের রান্না করা (!) লুচি আর ছোলার ডাল!
২. আমার চটকে যাওয়া লুচির মতো ছোট কি যেন একটা!
৩. ভায়ের সেই স্বপ্নালু চোখ, যা দেখে 'ম্যাডামজী'রও পা ফিসলে ছিল সেদিন!
** একটা কথাতো বলতেই ভুলে গেছি: ভায়ের যে কোন ব্যাপারে আমি খুব রক্ষণশীল। তাই, সাবধানে কিন্তু! তবে আপনাদের জ্ঞান-গালি- গালাজ- আশীর্বাদ মনের সুখেই দিয়ে যেতে পারেন। আর ছবিগুলো আমি ভাইয়ের কাছ থেকেই পেয়েছি। ভাই ই পাঠিয়েছে। বিশ্বাস হল না! দেখে নাও আমাদের ছোট-ছোট ফোনবার্তা:
- লুচির ছবিটা ডকুমেন্ট করে পাঠাও একবার!
- কেন! ওটা কি লুচি মনে হচ্ছে না?
- আরে, পাঠাও না।
(পাঠানোর পর)
- ও কে! আর সকালে যে ছবিটা পোস্ট করেছ সেটাও পাঠাও ডকুমেন্ট করে।
- কি করতে চাইছ বল তো 🤔
- পাঠাও।
- (পাঠানোর পর) এটা?
- হুঁ। ওকে।
- ?
এরপর আর কথা হয় নি। এরপর কি হল দেখতে হলে মনে হয় ভায়ের দেওয়ালে যেতে হবে। এই ন্যারেটিভের কাউন্টার ন্যারেটিভ তৈরি হচ্ছে ভায়ের উর্বর মস্তিষ্কে! অপেক্ষায় আমরা সবাই।
আর একটা দিন পার করলাম #করোনামুক্তভারতবর্ষের দিকে
30.03.2020




Comments

Popular Posts