গুঁড়ো গুঁড়ো নীল, স্বপ্ন রঙ্গিন।।(১)

গুঁড়ো গুঁড়ো নীল, স্বপ্ন রঙ্গিন।।(১)

আমার ছেলেকে আমার প্রতি মুহূর্তে সব সময় সব কিছুতে বকতে মন হয়। সব কাজই যেন ও ভুল করে। সব, সব কাজ ভুল করে। কিছুতেই বলে বোঝাতেই পারি না। যা বলি, সেগুলো সব ভুলে যায়। যা যা বলবো ঠিক তার উল্টো টা করবে। উল্টোটা করা যতো শক্তই হোক, সেটাই করবে। মাঝে মাঝে মনে হয়, ইচ্ছা করেই করে মনে হয়। আবার কখনো দেখি, কি বলেছিলাম সত্যিই সব ভুলে গেছে। সত্যি সত্যিই ভুলে গেছে। আমিই কি রকম হয়ে যাই। ধূর বাবা! এতো সব ভুলে যায়! আবার ভাবি ভাগ্যিস সব ভুলে যায়! না হলে যে পরিমান আমি সব কিছুতে বকা-বকি করি তাতে কাল থেকেই তো ওর আমার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দেওয়া উচিত। ছেলেরা মনে হয় এরকম করেই বাবার সব বকা-বকি ভুলে যায়। না হলে আমি কেমন আজ বাবার সব ঝাড় গুলো ভুলে গেছি। আমার বাড়ীর লোকেরা বলে, আমি যা যা করতাম ওর মতো বয়সে ও সেগুলোই এখন করে। আর সেগুলো তেই আমি নাকি সব থেকে বেশি আপত্তি করি। এগুলো তো কিছুতেই আমি বুঝতে পারি না। ধূর, এসব আমি করতাম নাকি! আমি মোটেও এসব করতাম না। কিন্তু বেশি বাত মেরে লাভ কি! যেখানে নিজের মা ই আমার দলে নেই। মা-বৌমা র জোট এর কাছে বাস্তব সত্যটা হোল, আমি নাকি যা জ্বালাতন করতাম, বা ঝামেলা করতাম বা যা সব অত্যাচার বা যা যা বদমাইশি করতাম ওর বয়সে, তা নাকি 'মুঙ্কা' একভাগ ও করে না। তাই? তাহলে আমি যা বকি ওকে, সেই অনুপাতে তো আমার বাবাকে সারাদিন ই বকাবকি করতে হতো। সেরকম কিছু তো ছিল না। তাহলে কোথাও একটা, কিছু একটা ভুল আমার ই হয়তো হচ্ছে। তবে যাই হোক, এই বকাবকি, ঝাড় আবার মাঝে মাঝে বেশি বেশি ভালোবাসা নিয়ে আমাদের চলেই।যাচ্ছে একরকম আরকি! আগে অতো ভাবতাম না। এখন মাঝে মাঝে ভাবি কিছু কিছু কথা, সত্যিই সব কিছুতেই বেশ অদ্ভুত লাগে, ভালো না খারাপ সেটা বলছি না, তবে অবশ্যই অন্যরকম লাগে। তাই তো ভাবি, আর লিখি। লেখার আর একটা কারণ আছে। সেটা পরে বলা যাবে।
এবার একটু ভেবে দেখি, ঠিক কি হয় সমস্ত ঘটনা গুলো:
কালকের একটা ছোট কথোপকথন:
তার আগে একটু পূর্ব কথন:
রবিবার সারাদিন বাড়ী তে ছিলাম না আমি আর ও দুজনই। ওর পছন্দে কলকাতায় কাটাতে হয়েছে কারণ টলি ক্লাবে সে কলকাতা লিটারারি মিট হয়েছিল তাতে আমি আর ও গিয়েছিলাম। রাস্কিন বন্ড এর সাথে দেখা করবে, কথা বলবে, ছবি তুলবে, ওর সব বইগুলোতে সই করাবে: এই সব সমস্ত ভাবনা ও অনেকদিন থেকেই ভেবে আসছে। তাই সারাদিন আমরা কলকাতায়। সব কাজ ই হয়েছে যা যা চেয়েছিল, সে সব গল্প পরে করা যাবে একদিন। দুপুর বারোটার মধ্যে শেষ হলেও, ওর তখন ফিরে আসার ইচ্ছা নেই। তাই অগত্যা ওর সাথে সারাদিনই থাকলাম। যাই হোক, রবিবার গেছে পড়াশোনা না করে। সোমবার সকালে দেরী করে উঠলো। উঠে চান করে রেডি হতে হতেই স্কুল যাবার সময় হয়ে গেল। জানি আজ ফিরে এসে ও স্যার এর কাছে যাবে তাই আজও আর বাড়ীতে পড়া হবে না, আর রাত্রে বিয়ে বাড়ি যাবো আমরা সবাই। ওর মা কে বললাম ও আজ স্কুল গেলে ওর মোবাইল টা সরিয়ে রাখতে, আবার কদিন পর দেওয়া হবে। যাই হোক। রাত্রে আমি স্যার এর বাড়ী থেকে নিয়ে বিয়ে বাড়ী যাবার সময় দেখলাম ও মোবাইলে কিছু করছে। জানি ওই পাব-জি গেম খেলছে। মাথা গরম হওয়া শুরু হলো। একটু পরে কি একটা জিজ্ঞাসা করলাম, তাতে ভুল-ভাল ভাট বকলো। বুঝলাম, কিছু বোঝে নি। এবার শুরু হলো আমাদের কথা:
আমি: তোর দ্বারা কিছছু হবে না। সারাদিন শুধু আড্ডা আর মোবাইল আর গেম।
ও: (চুপ।)
আমি: একে তো পড়াশোনা করিস না, আবার কাজও করিস না। এবার ফেল করবি। জীবনে কিছু করতে পারবি না।
ও:( চুপ।)
আমি: কি যে করিস! সবাই দেখবি তোকে ফেলে কত।এগিয়ে যাবে। তুই কিছুই করতে পারবি না। (আমার মেজাজ চড়ছে)
ও: (চুপ।)
আমি: ( গলাটা একটু নামিয়ে, বোঝাবার মতো করে) দেখ বাবা, ভালো করে পড়াশোনা করতে হবে তো? না হলে, কি করে হবে বলতো? জীবনে দাঁড়াতে হবে তো? (কোথায় যে কিভাবে দাঁড়াতে হবে, আর কাকে দাঁড়ানো বলে সেটা কি আজও আমি নিজে জানি! জানি তো শুধু, চাকরি পাওয়া মানে দাঁড়ানো! তাই কি!)
ও: (চুপ।)
আমি: যাই হোক, কাল থেকে ভালো করে সব ঠিক করে করবে, হ্যাঁ! দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।
ও: (চুপ।)
আমি: ঠিক আছে! ভালো করে থাকবে, আর বেশী মোবাইল করবে না, বেশী গেম খেলো না, পড়াশোনা সব ভুলে যাবে তো!(কে বলেছে, কে জানে!)
ও: (চুপ।)
এবার একটু প্রসঙ্গ বদলে ওর মনের মতো কথা আলোচনা করে ওকে এতো বকার পর ভোলাবার চেষ্টা করলাম।
আমি: আচ্ছা 'মাংকা' বিয়ে বাড়ি তে আজ কি বেশি খাবি?
ও: মটন ই খাবো। বিরিয়ানি তো করবে না। ( এতক্ষন আমার সমস্ত কথার উত্তরের এই প্রথম মুখ খুললো)
দেখলাম থাক, আজ আর এসব নিয়ে কথা বলে কাজ নেই। এবার আমার বাইক এর পিছনে বসলো আর আমরা জি. টি. রোড দিয়ে বিয়ে বাড়ি যাবো বলে এগুলাম।
লেখাটা শেষ হয়ে যেতে পারতো এখানে।

তাহলে তো আর কিছু বলারই থাকে না।
বাইক স্টার্ট করার দশ সেকেন্ড পর পিছন থেকে আওয়াজ পেলাম:
'ছুঁই, ছুঁই, স্যাট, স্যাট, টর টর' ( প্রথমে আস্তে আস্তে, পরে একটু জোরে জোরে)। পাশ দিয়ে এল পি জি এর ট্যাঙ্কার গুলো পেরুচ্ছে, ভাবলাম কি হলো? অনেকক্ষণ শুনলাম। বুঝলাম, বাবুর মুখ দিয়ে এসব আওয়াজ করছে নিজের মনে। তারপর কি একটা ডায়ালগ দিলো। 'ওয়াও! উইনার উইনার, চিকেন ডিনার'!
আমি: কি হলো 'সনু'? ( মনে মনে ভাবছি যা শা*! ছেলেটা কি খেপে গেল, এতো বকলাম। একটু কেমন লাগছে!
ও: পাশ দিয়ে ট্যাঙ্কার গুলো যেগুলো যাচ্ছে, ওগুলো র দিকে আমি স্নাইপার দিয়ে গুলি মারছি। 'স্যাট, স্যাট', এবার উড়ে যাচ্ছে! আগুন! ড্রাইভার টা পালাচ্ছে জঙ্গলে! তুমি পাশ দিয়ে দিয়ে চালিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছো। এবার:
আমি: চুপ বেশ কিছুক্ষন।
পিছনে আরো কিছু ক্ষণ গুলি গোলা চললো। চুপ থাকলাম। একবার বললাম, এমন গুলি চালাচ্ছিস, দেখিস আমার যেন না লাগে!!!('পাব-জি' চলছে)
ও: তুমি ভেবো না তো, আমার স্নাইপার আমার ইশারাতে চলে। এরপর পিস্তল নেবো। আরো কাছে, কাছে..
এর মধ্যেই বিয়ে বাড়ী র গেট এ পৌঁছালাম। গাড়ী রাখার সাথে সাথে নেমেই এগুবো ভাবছি বাকি লোকেদের সাথে দেখা করার জন্য, এমন সময়,
ও: চলো, একবার স্টল গুলো দেখে আসি আগে। তারপর খেতে বসবো।
* বুঝলাম, 'পাব-জি' পুরো মাথা থেকে চলে গিয়ে মাথা এখন শুধু মটন ময়।
একে দু মিনিট হয়নি, আমি জীবনে দাঁড়ানো না কিসব নিয়ে যেন কি বলছিলাম!!!!

(ছবিটা আগের তোলা ছিল। প্রচুর স্টাইল করে চুল কেটেছিল। তারপর স্কুল শুরু হবার আগে নিজে কেটে এসেছে, না হলে স্কুলে কেটে দেবে সেই ভয়ে)


Comments

Popular Posts