লাটাগুড়ি, জলঢাকা, ফাগু।।

আমার প্রথম পোস্ট 'খেয়ে বেড়ানো' অনেকেই পড়েছেন বা খাবার ছবিগুলো দেখেছেন। আপনাদের প্রত্যেককে আমার সশ্রদ্ধ প্রনাম, ভালোবাসা আর ধন্যবাদ জানাই। লেখাটায় আমি যে তিনটে জায়গায় প্রায় ছয় দিন কাটিয়েছিলাম সেসব কোনো কিছুর উল্লেখ না করে শুধু নিজের পেট-পুজোর গল্প করেছি। আমি দুঃখিত সেজন্য, কারন অনেকেই আমায় কমেন্টসে বা আলাদা করে ইনবক্সে লিখেছেন জায়গাগুলোর সম্পর্কে ডিটেলস জানাবার কথা। ঠিকই বলেছেন। এগুলো আমরা সঠিক ভাবেই জানতে চাই, না হলে আমার যত ভালোই লাগুক আমি সেই জায়গায় যেতে পারবো না বা বুকিং করতে পারবো না। আমি এবার এই যে তিন জায়গায় গিয়েছিলাম তা খুবই পরিচিত আমাদের সবার। ডুয়ার্সে আসা-যাওয়ার পথেই এই জায়গাগুলো পড়ে। কোনটা একেবারেই পরিচিত আর কোনটা হয়তো দুটো পরিচিত বেড়াবার জায়গার মাঝখানে কোন এক জায়গা। আমিও যেমন ভাবে আমার বন্ধুদের পরামর্শে এই জায়গাগুলোতে গিয়েছিলাম, সেরকমভাবেই আপনাদেরও জানাতে চাইছি। শুধু একটা কথা মনে রাখতে হয়েছিল শেষ দুটো জায়গা যেহেতু কোনো পরিচিত বা নাম করা জায়গা নয়, তাই সেখানে ঘুরে দেখার কিছু নেই। আমিও শুধু সেই ভেবেই গিয়েছিলাম যে যাবো, খাবো আর ঘুমাবো। এবং আমার সেই উদ্দেশ্য সফল হয়েছে।

আমার প্রথম থাকা:
#আকর্ষণ বন বাংলো: লাটাগুড়ি।
না, এটা রাস্তার উপর বা বাজারের কাছে নয়, বরঞ্চ একটু ভিতরে ঢুকে গিয়ে ছিম-ছাম, নিরিবিলি থাকার জায়গা। দেখাশোনা করেন পবন দা। ওনার কথা আপনারা অনেকেই আগের লেখায় পড়েছেন এবং ওনাকে চিনে ফেলেছেন। ঠিক চিনেছেন। আপনাকে ভালো না খাওয়ালে বা ভালো না রাখলে ওনার শান্তি হয় না। খুবই ভালো মানুষ। ওনার সাথে মিশলে ভালো লাগবে। আমি এই লেখায় ওনাকে ট্যাগ করে দিচ্ছি আর ওনার ফোন নম্বর যেটায় সব সময়ই পাবেন বা হোয়াটস আপ আছে সেটাও দিচ্ছি। তবে ফেসবুক খুব একটা করেন বলে আমার মনে হয় না। ফোন করতেই বেশ অভ্যস্ত। কথা বলবেন যখন খুশী। আকর্ষণ বন বাংলো খুব বড় কোন রিসর্ট নয়, উপর-নীচ মিলিয়ে নয়-দশটা ঘর আছে। ঘরগুলো বেশ ভালোই। আমায় পবনদা চারজনের থাকার মতো খালের উপর ঝুলন্ত বারান্দা আর ঘরটা দিয়েছিল। আমার বেশ ভালো লেগেছে। খাবার কথা এবার আর লিখলাম না, আগেই বলেছি। আর ঘরের ভাড়া বা খাবারের দাম না হয় ফোনেই কথা বলে নেবেন। আমি শুধু এটুকুই জানি আমাদের মতো মধ্যবিত্তের আয়ত্বেই। আর এটা বুঝি পিক-সিজন বাদ দিয়ে অন্য একটু সময় ঠিক করলে 'ফাউ' একটু বেশীই পাওয়া যায় যেকোনো জায়গাতে। আর বাড়ীর লোক বলে আমি নাকি একটাকা 'ফাউ' পেলেই খুশী।
যাই হোক, বাদ দিন ওসব। পবনদার ফোন নম্বর: 9932223564.

আমার দ্বিতীয় থাকা:
#আর.জে রেস্টুরেন্ট এন্ড হোম স্টে: ২,জলঢাকা, কালিম্পঙ।
জায়গাটা ঝালং থেকে বিন্দু যাবার রাস্তায় দু/আড়াই কিমি যাবার পরই জলঢাকা নদীর পাড়ে। রেস্টুরেন্টটা হলো এদের প্রধান আকর্ষণ। রাস্তার পাশে ছাদে ঝুলন্ত যার প্রান্ত থেকে পাশে ভূটান পাহাড় আর নদী যেন ছোঁয়া যায়। আর থাকার ঘর আছে চারটে। দুটো ভিউ আর দুটো পিছনে নন-ভিউ। ঘরগুলো সবই আধুনিক এবং সাজানো গোছানো। সামনের বারান্দায় বসা আর নদীর পাড়ে বসা প্রায় একই। দুই ভাই এক বোন আর বাবা-মা মিলে চালায় এই হোম-স্টে। শুধু একটা কথাই বলে রাখি, এই দুই ভাই কিন্তু আমাদের শহরেই হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়ে এখানের ষ্টার হোটেলে কাজ করে বাড়ী ফিরে গেছে শুধু পাখির ডাক শুনতে পায় না আমাদের শহরে তাই। সমস্ত কিছুতেই পাবেন ষ্টার ক্যাটাগরির ছাপ এই প্রকৃতির মাঝেই। সদা হাসি-খুশী এই দুই ভাইয়ের অনেক বড় পরিকল্পনা এই হোম-স্টে নিয়ে। শুনবেন, ভালো লাগবে। রোহিত আচার্য্য হলো 'আর.জে' র 'আর'। ওর সাথে ফোন করেই সব বুক করতে পারবেন। হোয়াটস আপ ও করতে পারেন। আর দাম বলতে হবে না, আমাদের আয়ত্বের মধ্যেই।
রোহিত: 9650313487, 9474872885, 9474183845




আমার তৃতীয় থাকা:
#ফাগু টি বাংলো: ফাগু, গরুমারা।
ব্রিটিশ আমলে তৈরী এই বাংলোতে পৌঁছলেই পাওয়া যায় সেই পুরোনো দিনের ছোঁয়া। ফাগু থেকে গরুবাথান যাবার রাস্তায় তিন কিলোমিটার যাবার পরই একটা রাস্তা হটাৎ করেই পাশ দিয়ে একটা টিলায় উঠে গেছে। টিলা জুড়ে শুধু চা বাগান আর টিলার মাথায় কিছুটা সমতল জায়গা করে তৈরী এই বাংলো সমস্ত লোকালয় থেকে আপনাকে আলাদা করে দেবে। এখানে এলে আপনি চারিদিকের সমস্ত পাহাড় আর তার পরের পাহাড়ের সারি যেমন খালি চোখে দেখতে পাবেন ঠিক তেমনি পৃথিবীতে একা থাকার অনুভূতিও পাবেন। ব্যক্তিগত ভাবে জায়গাটা আমার খুবই ভালো লেগেছে। চারিদিকে কোনো আওয়াজ নেই, লোকজন নেই শুধুই নিজের সাথে নিজেদের নিয়ে থাকা। বাংলোতে থাকা আপনার রাঁধুনি, কেয়ার-টেকার আর মালি আপনি না চাইলে সারাদিন আপনার সমস্ত কিছুর জোগান দিয়েও কেমন করে অদৃশ্য থেকে যাবে। তিনটে ঘর, একটা বসার ঘর, আর একটা খাবার ঘর আর সামনে বিশাল বারান্দা নিয়ে এই বাংলো। ঘরগুলো নিয়ে খুব কিছু বলার না থাকলেও যেটা না বললেই হয় না, তা হলো এর আকার। কম-বেশী আমাদের বাড়ীর সমান এক একটা ঘর, আর প্রায় ঘরের সমান বাথরুম নিয়ে থাকা যার রুমে থাকা ফায়ার প্লেস, বাথরুমে থাকা সেই পুরোনো দিনের বাথ-টব সবই আপনাকে কলোনিয়াল হ্যাং-ওভারে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। শুধু একটা কথা মাথায় রাখবেন, এখান থেকে এসে পাশের জায়গা কিছু ঘুরে নেওয়া যাবে এই ভাবনা রাখবেন না। শুধু মনের আনন্দে এই জায়গাটাতেই দুটো দিন কাটিয়ে দিন। চারিদিকে সবুজ পাহাড়, পাখি, সামনে বাধা-হীন সূর্য ডোবা দেখতে দেখতে আর নিস্তব্ধতার নতুন রূপ উপভোগ করুন একা একাই। বলে রাখি এই বাংলোটির অবস্থা খুব কিছু ভালো নয়, দেখা-শোনা মানে ওই আরকি! একটু পয়সা খরচ করে সাজানো গোছানো নেই বললেই চলে। সেটুকু অসুবিধা সহ্য করে নিলে শুধু প্রকৃতির নিঃসঙ্গতা আর নীরবতা উপভোগ করার বেশ ভালো জায়গা। এদের সম্পর্কে গুগল এ সার্চ করলেই পাবেন আর মেক মাই ট্রিপ ও বুক করে যদিও আমার মনে হয়েছে এদের রুম ভাড়া আর খাবারের দাম বেশ বেশীই। যদিও পরে ভেবে দেখেছি একটা ব্রিটিশ আমলের বাংলোতে থাকতে আর থাকার পর যে পাওনা পাওয়া যায় তাতে সেটা মেনে নেওয়া যায়। আর খাবার ওরা একটু বেশীই দেয়, তিনজন থাকলে কোনোকিছুই তিন প্লেট বলতে হয় না। 9733508600 এই ফোন নম্বরে ফোন করেও বুকিং করা যায়। মেলে ওরা পেমেন্ট ডিটেলস দেয়। যেখান থেকে কমে পারেন সেখান থেকেই বুক করুন।
* এই পোস্ট টা এখানে এতো ডিটেলস দিয়ে করবো এসব ভাবনা আমার আগে ছিল না, তাই রুম গুলোর প্রতিটির ডিটেলস ছবি তো তুলি নি। আমার নিজের ওয়াল এ কিছু নিজেদের ছবি আছে, সেগুলোর লিংক নীচে কমেন্টসে দিলাম।
** খাবার আর রুমের দাম আমি লিখিনি ইচ্ছা করেই। কেউ আলাদা ভাবে জানতে চাইলে ফোন করে নেবেন। ওনারা প্রত্যেকেই বেশ ভালো।
*** শুধু মাথায় রাখবেন এই জায়গাগুলো, বিশেষ করে ফাগু আর জলঢাকায় শুধু থাকতেই যাওয়া। পাশের কিছু ঘুরে নেব ভেবে না করাই ভালো।
*** জায়গা গুলো সবই নিউ জলপাইগুড়ি থেকে কাছেই, ঘণ্টা দুই সর্বোচ্চ সময় লাগে।
*** আগের পোস্ট এর লিংকটা এখানে দিয়ে রাখলাম, কারোর যদি দেখার ইচ্ছা হয়। আসলে ওই লেখাটার পরের অংশ এটা। আগের বার আমায় অনেকেই ট্যাগ করতে বলেছেন কিন্তু আমি সব কমেন্টস থেকে খুঁজে পাচ্ছি না। চেষ্টা করছি আপনাদের জানানোর। আমায় একজন লিখেছেন, "ডেকে দেবেন"। আমি সত্যিই আপ্লুত, খুশী হয়েছি আপনাদের এরকম ভালোবাসায়।
**** খুব ভালো ঘুরুন। আর শুধু মাথায় রাখবেন এই তিনটে জায়গা এতো সবুজ আর শুধু সবুজ যে আপনি আর অন্য কোনো রঙে রাঙাতে পারবেন না, তাই আমাদের ব্যবহার করা চিপসের লাল-নীল প্যাকেট, মিনারেল ওয়াটারের খালি বোতল না হয় আমাদের গাড়ীর পিছনেই পরে থাকুক, ওখানে পরিষ্কার না করে, ফিরে এসে শহরের ডাস্টবিনেই না হয় ফেলবো। কি বলেন!
** এতোই যখন লিখলাম তখন আর একজনের কথা লিখেই দি। সে হল পার্থ। লাটাগুড়িতে বাড়ী। যোগাযোগ করতে পারেন, যখন যেখানে যা গাড়ী লাগবে ও আছে। পাশে থাকে সব দরকারে। আমি এবারেই ওর সাথে পরিচিত হয়েছি, কিন্তু খুবই কাছের মনে হয়। ওর নম্বর: 9832524231.

Comments

Popular Posts