নন-সেন্স কথামালা (১২) **** 'এই আইসক্রিম, ড্রিম ক্রিম!'



নন-সেন্স কথামালা (১২)


'#এই আইসক্রিম, ড্রিম ক্রিম!'

দুপুরের আড়াইটা থেকে সাড়ে তিনটের সময়টা আর কিছুতেই কাটতে চায় না যেন। চান করে ভাত খেয়ে পড়া-পড়া বাহানা করে মোটামুটি দেড়টা থেকে এতক্ষন কাটালাম। এরপর মায়ের জোর করে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা। নিজের কাছে নিয়ে শোওয়া। জানলাটা বন্ধ করে একটু অন্ধকার করা ঘর। সিলিং ফ্যান চলতে চলতে বন্ধ হলে তালপাতার পাখায় হাওয়া করা। খুব গরম করলে বিছানা ছেড়ে মেঝেয় বালিশ নিয়ে শোওয়া। এতো কিছুর পরও আমার চোখে ঘুম যেন কিছুতেই আসতে চাইতো না, আর মা শুয়ে পাখার বাতাস করতে করতেই এক মিনিটের মধ্যেই ঘুমিয়ে যেত। এই সময়টা ছিল আমার এক অন্য দেশে যাওয়ার সময়। চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান করে থাকলেও কান ছিল বেশ তীক্ষ্ণ। রাস্তা দিয়ে পেরিয়ে যাওয়া প্রতিটা সাইকেল আর তার বেলের আওয়াজ যেন মনে হতো আমার পাশেই হচ্ছে। পাঁচিলের উপর হনুমানের ধুপ করে লাফিয়ে পরার আওয়াজ মনে হতো দরজার পাশেই হচ্ছে। উঠোনের এক পাশে কাক-চড়াই এর ডাকাডাকি তো কান ভেদ করে মাথা সেঁদিয়ে যেত। ওপাশের বাড়ীর রমা বৌদির নারকেল ঝাঁটায় উঠোন, বাগান আর কলাতলা ঝাঁট দেবার আওয়াজ যে প্রত্যেকটা আলাদা ছিল আর কোনটা ঝাঁট দিতে কত সময় লাগতো তা আমার থেকে বেশী কেউ জানতো না। পাশের ঘর থেকে কেউ বাথরুমে গেলে আমি গুনতে পারতাম তার পায়ের আওয়াজ। কিন্তু এই সব শব্দের মাঝেই কোথায় হারিয়ে যেত যখন আমার দুপুরের ঘুম ঠিক তখনই রাস্তায় ঘড় ঘড় চাকার আওয়াজ আর ধুপ ধুপ করে কাঠের বাক্সের উপর ঢাকনা চাপড়ানোর আওয়াজ, আর তার পরেই ভেসে আসতো যে গলা, 'এই আইসক্রিম, ড্রিম ক্রিম!' 'মাজা ম্যাংগো, অরেঞ্জ, দুধবালা, কুলফি, রোজি আইসক্রিম'। আর চোখ বন্ধ করে কিছুতেই শুয়ে থাকা যায় না। উঠতেই হবে। মা কে বলেই এক দৌড়ে দরজা খুলেই রাস্তার সামনে, যদি চলে যায় আমাদের বাড়ী পেরিয়ে। কোনদিন একটা 'মাজা-ম্যাংগো' আবার কোনদিন শুধু 'জল-বালা', এতেই মনে হতো জীবনের সব পাওয়া হয়ে গেছে। এরসাথে আবার কখনো ফাউ জুটে যেত মায়ের হাতের পাখার বাঁট, কাঁচা ঘুম ভাঙিয়ে দেবার জন্য। আইসক্রিম খেয়ে, গেলাসে ভরে, জলে ডুবিয়ে, খেলা করে কোনক্রমে সাড়ে তিনটে বাজাতে পারলেই হলো। চারটেয় টাইম কলের জল আসবে, মা বাসন, বালতি নিয়ে কলতলায় আসবে এবং পাঁচটা পর্যন্ত আর কোনো দিকে তাকাবার অবসর থাকবে না। আর আমি খেলতে যাবার প্রস্তুতি নেব, যদিও আমায় চারটে না বাজলে বেরুতে দেবে না। যাই হোক, আজকের দুপুরটা কাটানো তো গেল।
না, এটা কোনো একটা নির্দিষ্ট দিনের কথা নয়। এরকমই ছিল আমার গ্রীষ্মের দুপুরগুলো, আমার বেড়ে ওঠার সময় গুলো জুড়ে। যদিও যে সময়টার কথা ভাবছিলাম আজ বেশ কিছুদিন ধরেই তা শুধু এই এক ভাবে কেটেছে তা নয়। ভাবতে ভাবতে অনেক কথা, অনেক সময় কিরকম নিজের অজান্তেই এমন সব কথা বুদবুদের মতো ভেসে উঠছে অজান্তেই আর একলা মনে হাসতে হাসতে তারা আবার কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে। আবার সেই একই খেলা। মনের কোন গভীর খাঁজে কি লুকিয়ে আছে, কি ছাপ ফেলে রেখেছে তাকে যেন হাতড়ে হাতড়ে খুঁজে বেড়াচ্ছি।
প্রাইমারী স্কুলে পড়ি তখন। গ্রামের বাড়ীতে থাকি। গ্রীষ্মের ছুটি পড়েছে স্কুলে। সারাদিন শুধু ছুটি আর ছুটি। সকালে একবার বই নিয়ে বসা, যা না বসারই সমান। বাবার বেরুনোর অপেক্ষা শুধু। আর রাত্রে তো পড়তে বসেই চোখ লাল, ঢুলে পড়ে যেতে যেতেই ভাত খেয়ে শুয়ে পড়তাম। সেইসময় আমাদের খেলা শুরু হতো সকালের কিছু পর থেকেই। এবাড়ি-ওবাড়ি ঘুরে, সবকটা ছাগল (ন-দাদু আদর করে ওই নামে ডাকতো আমাদের) মিলে শিবতলায় জুটতাম। বট গাছে উঠে দোল খাওয়া, মার্বেল খেলা, শেষে লুকোচুরি বা কুমির-ডাঙ্গা খেলে ক্লান্ত আমরা সবাই বাড়ী থেকে সোজা পুকুর ঘাটে। কাঁধে গামছা, হাফ-প্যান্ট, না সাবান- না তেল, পুকুর পাড় থেকে ঝাঁপিয়ে নামাই ছিল কে কত বীর, তা দেখাবার একমাত্র জায়গা। এর মধ্যেই আবার বেশী বীর আমি, কার্তিক আর পাঁচুর জায়গা ছিল ঘাটের পাশের বট গাছ। জলের গা ঘেঁষে ডাল ছেড়ে উঁচু ডাল থেকে জলে ঝাঁপ দিয়ে নেমে আসা ছিল আমাদের প্রতিদিনের কাজ। এর মাঝেই জয় মামা মাঝে মাঝে নেমে পড়তো মোষগুলো নিয়ে। তখন আমাদের মজা দেখে কে! মোষের পিঠে চেপে মাঝ পুকুরে ভোল্ট খেয়ে জলে ডোবা ছিল এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। যদিও সেটা সব দিন হতো না। যতক্ষন বাড়ী থেকে কেউ লাঠি নিয়ে পুকুর পাড়ে না আসতো, ততক্ষন আমাদের এই 'জল-গাবানো' শেষ হতো না। একটা কথা আজও মনে পড়ে সেই 'জল-গাবিয়ে' উঠে এসে ঘাটে কেমন যেন লাগতো, আর চোখে কেমন শুধু ধোঁয়া ধোঁয়া দেখতে পেতাম। তার মাঝেই ক্ষীণ গলায় মেজ দাদুর চিৎকার, 'শালাগুলো এমন জলের পাঁক গাবিয়ে উপরে তুলেছে যে মোষ নামতেও ভয় পাবে!' যাইহোক, সেই সময়ের দুপুরগুলো তো আর দেখতেই পেতাম না। ভাত খেয়ে সবকটাকে জ্যাঠাবাবার ঘরে শুইয়ে দিত, আর ঘুমোতে যেন সময়ই লাগতো না। এক ঘুমে বিকাল। এরকমই এক বিকালে ঘুম থেকে উঠে আমি আর ভাই ঘুমের ঘোরে কলতলায় গিয়ে দাঁত মাজতে শুরু করে দিয়েছিলাম। হয়েছিল কি, সেদিন আমাদের ঘুমোনোর পর কালবৈশাখীর জল-ঝড় হয়েছিল, বিকালটা কেমন সকালের মতো দেখতে লাগছিল, আর বাবা ও বারান্দায় বসে ছিল। বাবাকে তো সকাল আর সন্ধ্যায় দেখতাম। তাই, যা হয়। সে যা খোরাক করেছিল আমাদেরকে সবাই!
স্কুল পার করা আর না করার মাঝের সময়ের গ্রীষ্মকালের দুপুর ছিল এক ঘোর লাগা সময়ের দুপুর। মানে আমি শুধু আলাদা করে ইলেভেন-টুয়েলভ এর সময়টার কথা বলছি। তখন প্রতিদিন দুপুরে ছিল আমাদের কয়েকজনের এক্সট্রা টিউশন ক্লাসের টাইম। বললে হবে, সায়েন্স নিয়ে পড়ি, ছ-জন স্যার, আর সবাই একদিন করে এক্সট্রা ডেট তো দেবেই। কিন্তু আমাদের এই ক্লাসগুলো হতো 'ষ্টার', 'নটরাজ' আর 'অনিতা' তে আর মাঝে মাঝে 'বর্ধমান' সিনেমা হলে। রোজকার দুটো-পাঁচটার বাঁধা খাতা করে ফেলেছিলাম কয়েকজন। ঢপ দিতে দিতে এমন জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিলাম যে উত্তমদার ব্যাচে 'দুটো-পাঁচটা'র এক্সট্রা ক্লাস করে আবার যখন বাড়ী থেকে ছটায় বের হচ্ছি সন্ধ্যার ক্লাস করতে তখন মা জিজ্ঞাসা করছে, 'তা, আবার যদি পড়া থাকে, তাহলে বাড়ী এলি কেন?' বললাম, 'ধুর, দুপুরে তো বায়োলজি গেলাম!' মা কেমন হক-চকিয়ে গিয়ে বললো, 'বললি যে উত্তম দার কাছে যাবো অঙ্ক করতে!' এই রে! তাই বলেছিলাম! বুঝলাম ঝুলে গেছে কেস। এবার একটা ভালো রুটিন করতে হবে 'দুটো-পাঁচটা'র। কতবার হয়েছে একই সিনেমা কতবার দেখেছি, হল যে ওই চারটে। আবার একবার তো যা-তা হয়েছিল। 'অনিতা' তে পাড়ার এক কাকু লাইট দেখাতো। সে তো দেখলেই বলতো, 'এসে গেছিস! চলে আয়, এবার লোক এলে তোরাই বসার সিট দেখিয়ে দিস, আমি একটু ঘুরে আসি।' কি রেপুটেশন মাইরি! পরের বার আর এরকম করার সাহস দেখাই নি, যতই হোক হায়ার সেকেন্ডারিটা তো পাস করতে হবে!
কলেজ জীবনের তিনটে বছর গ্রীষ্মকালের দুপুর কোথায় হারিয়ে গেছে, আজ আর মনে পড়ে না। আসলে এই সময়টা থেকেই গ্রীষ্মের ছুটি কথাটাই হারিয়ে গেল জীবন থেকে। কলেজেই কেটে যেত সময়গুলো। মাঝে মাঝে যেতাম সবাইমিলে কৃষ্ণ-সায়র পার্কে। একদল ছেলে-মেয়ে মিলে জমিয়ে আড্ডা যার মূল আকর্ষণ ছিল অবশ্যই বড়লোক বান্ধবীর পয়সায় শেষ বেলায় 'সায়রী' তে খাওয়া। গালাগাল দিলেও ভালোবেসেই খাওয়াতো। জানে, আমাদের পয়সা মানেই তো বাড়ী থেকে বা টিউশনের ঝাড়া পয়সা। ওতে আর কদিন চলে! বেশ কিছু এরকম বান্ধবী তখন পেয়েছিলাম তাই উৎরে গেল কলেজ জীবন। তবে সেই সময় একদিনের কথা বেশ মনে আছে। সুকুমারের চায়ের দোকানে বসে আছি কলেজের দু একজন। এমন সময় একজন সিনিয়র দাদা যে আগের বছর চাকরী পেয়েছে, এসে হাজির। এসেই, 'চা দাও', 'জল দাও' বলেই আমাদের দেখেই চমকে উঠলো। 'কি রে তোরা, এই গরমে, দুপুরে বসে কি করছিস?' ভাবলাম বলি, 'তোমরাও তো আগে বসে থাকতে এখানেই, আজ আমাদের বলছো!' বলার আগেই সেই দাদার করুন স্বীকারোক্তি,
- 'আজ যা গরম পড়েছে মাইরি! গোটা খোসবাগান এলাকায় রাস্তার কুকুর আর আমরা ছাড়া কেউ কোথাও নেই রাস্তায়!' আমার সেই দাদা ওষুধ কোম্পনির রিপ্রেজেনটেটিভ ছিল। আমার অনেক বন্ধু, দাদা এই পেশায় যুক্ত, আমি তাদের একটুও অসম্মান না করেই এটা বললাম। সেদিন সেই সিনিয়র দাদার আক্ষেপ না বুঝলেও আজ বুঝি। সেদিন যখন একটুও গরম বুঝতে না পেরে আমরা আড্ডা দিয়ে যাচ্ছি, দাদা তখন তার কাজ করছে আর ভাবছে এরা গরমে বাইরে বসে না থেকে বাড়ী যাচ্ছে না কেন! সময়টা বদলে গেছে আমাদের দুপক্ষেরই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সময়টা ছিল অন্য শহরে যেখানের গরম আর শীত দুটোই ছিল তীব্র। কানপুরের গরম এক নতুন অভিজ্ঞতার স্বাদ দিয়েছিল আমাদের। গরমকালে দুপুর হবার আগেই রাস্তায় প্রায় সব দোকান-পাট বন্ধ হয়ে যাওয়া, রাস্তা জুড়ে আটশো-হাজার টাকার হাতে বানানো কুলার মেশিনের লাট লাগানো বিক্রেতা, বাড়ীগুলোর প্রায় সব জানালা জুড়ে নারকেল ছোবড়ার খড়-খড়ি, মাঝে মাঝেই জল ছড়িয়ে দিচ্ছে, ইউনি থেকে ফেরার সময় দুপুরে পিচ-গলা ধূ-ধূ ফাঁকা রাস্তায় মরীচিকা দেখা, লাল-ইমলির পাশের রাস্তার সুন্দর বাড়ী গুলোতে এসি চলা আর তার জল রাস্তায় আসা: সব মিলিয়ে কানপুরের দুপুর ছিল আমাদের ঘোল, লসসি, শরবত, ঝেড়ে খাওয়া কোক-পেপসির দুপুর। একবারের ঘটনা না বলে তো শেষ করা যায় না, তাই। গরমে ইউনি থেকে ফিরে রুমে দেখি একটা বোতলও জল নেই, পাম্প চালানো হয় পাঁচটার পর। তখন পাশের দোকানে এতো জলের বোতল কিনতে পাওয়া যেত না। আর কাছে পিঠের দোকানগুলোও সব বন্ধ। একমাত্র 'শরাব কি দুকান' দেখি খোলা। ভাবলাম, দেখি ওদের কাছে যদি জল পাওয়া যায়। না, জল নেই তবে বিয়ার নেবার সুপরামর্শ পাওয়া গেল। আর এটাও বললো দু বোতল বিয়ার নিলে একটা বড় চ্যাঙ বরফ দেবে যেটা আমরা নিয়ে গলিয়ে জল করে খেতে পারি। হায়রে, গরমকাল! হায়রে কানপুর!
আজকাল গরমের ছুটির সেই আনন্দ আর পাই না। ছুটি আসার আগে থেকে মনে হয় এই করবো, সেই করবো, অনেক প্ল্যান করি, কিন্তু কিছুতেই কিছু করা হয়ে ওঠে না, শুধু কুঁড়েমির জন্য। আর গরমের ছুটির সেই রোমাঞ্চ, গরম না লাগা গ্রীষ্মকাল, একটানা ছুটে বেড়ানোর গরমকাল সবই মনে হয় সেই পুকুরের জলে ফেলে এসেছি এ জীবনের মতো।
আমার প্রায় সব স্মৃতিচারণে আমি চাই বা না চাই আমার মামার বাড়ীতে কাটানো কিছু সময় ঠিক উঠেই আসে। এবারের সেই রকম এক ফালতু ঘটনা না বললেই নয়।
আমি 'জল-বালা' মানে ওই রং দেওয়া শুধু বরফের কাঠি আইসক্রিম সব থেকে বেশী খেতে পছন্দ করি আজও। সেই যখন এক একটার দাম দশ পয়সা তখন থেকেই ভালোবাসি। শুরু করে ছিলাম সি এম এস স্কুলের গেটে ৮৫ সালে, আর আজও দুটাকাতে যেখানে পাই সেখানেই খাই। মনে পড়ে তখন আমি একটাকা টিফিনে নিয়ে গেলে দশটা ওই 'জল-বলা' আইসক্রিম খেতাম। চাকরী পাবার পর কোনো একবার মামার বাড়ী গেছি এই গরমকালে। মামাদের জমি দেখে যে সাধন কাকু সে এসে বললো, 'চলো, খামার বাড়ীতে, তাল রস খাওয়াবো!' উৎসাহে হাজির হলাম। মুখে দিয়ে দেখলাম, যেমন গন্ধ তেমন বাজে স্বাদ। সাধন কাকু বেশ হতাশ হয়েই গেল, আমার মুখ বাঁকানো দেখে। পাশ দিয়ে একজন আইসক্রিমওয়ালা যাচ্ছিল। ডেকে গোটা দশেক 'জল-বালা' লাল-হলুদ কাটি আইসক্রিম নিয়ে তাল রসের বালতিতে ফেলে দিল। কিছুক্ষন বাদে দেখলাম গরম তালরস কি জাদুতে 'লাল ঠান্ডা শরবত' হয়ে গেল। সত্যিই প্রতিভা বাংলার গ্রামে গ্রামে!
** অনেকদিন বাদ গ্রামের পুকুরে ছেলে আর আমি নেমেছিলাম, পাঁক তুলতে না পারি, জল গাবিয়েছিলাম(!) বেশ কিছুক্ষণ।
(22.6.19)

Comments

Popular Posts