নন-সেন্স কথামালা (১১) **** তিনটে ফালতু গল্প এবং এক কে** মদন!

নন-সেন্স কথামালা (১১)

#তিনটে ফালতু গল্প এবং এক কে** মদন!

তিনটে অশ্লীল বা অসভ্য শব্দ দিয়ে তৈরী গল্প যা আমার এতদিনের এই ক্ষুদ্র জীবনের অনেক অভিজ্ঞতা একসাথেই বর্ণনা করে দেয়। গল্প তিনটে আমি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মানুষের কাছে শুনেছিলাম। তাদের নাম আজ এই গল্প বলার সময় খুব প্রয়োজনীয় কিছু নয় কিন্তু আবার তাদের নাম বা পরিচিতি উল্লেখ না করে গল্প বলায় আমার নিজের মধ্যেই কিরকম এক কিন্তু কিন্তু থেকে যায়। যাইহোক, চেষ্টা করবো অন্তত আমার পরিচিত জনেরা যেন তাদের বুঝতে পারে। তবে আসল কথা যেটা, সেটা হলো সম্পুর্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন সময়ে শোনা আমার এই গল্পগুলো আমায় অনেক পরিস্থিতিকে বর্ণনা করতে বা বুঝে নিতে সাহায্য করেছে। গল্পগুলো খুব আহামরি কিছু নয় বা এই প্রথম আমি বলছি তাও নয়, অনেকেই আগে শুনে থাকতেই পারে। আর গল্পগুলোর একটাই অসুবিধা হলো কিছু খিস্তির ব্যবহার না করে কিছুতেই বলা যায় না বা বোঝানো যায় না। এর জন্য আমি আগে অনেক চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু কিছুতেই সেই ভাবটা রাখতে পারছিলাম না। তাই ঠিক যে ভাবে শুনেছিলাম সেই ভাবেই বলার চেষ্টা করছি। আর গল্প তিনটে শোনার পর তুমি ভাববে, শুনে তোমার কি লাভ হলো। এখান থেকে তোমায় কোনো উপসংহারে আসতে আমি বলছি না বা আসার জন্য জোরও করছি না। গল্পের শুরু থেকে শেষ কোনটাই আমার কথা নয়। আমার কথা না হয় শেষ কালে হবে।

#বাঘিনীর গল্প (১)
গত যুগের প্রথম দিকে এক বন্ধু আমাদের অনেকজনেকে এই গল্পটা বলেছিল। সে শুনেছিল তার গ্রামের কোন এক বয়স্ক মানুষের কাছে। যাই হোক, শুরু করি তার ভাষায়।
ঘন জঙ্গলের মাঝে একটু ফাঁকা জায়গায় গরমকালের দুপুরে নরম ঘাসের উপর একটা বাঘ আর বাঘিনী বসে আছে চুপচাপ। একটু আগেই ভাগাড়ে ফেলে রাখা গরুর একদিকের ঠ্যাং চোয়ালের এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিয়ে এসে বেশ আরাম করেই দুজনে খেয়েছে। মনে বেশ শান্তিই আছে। বাঘটা যৌবন পার করে মধ্যবয়স্ক আর বাঘিনী এখনো যৌবনের শেষ ঘর অতিক্রম করে নি। বেশ জমিয়েই সংসার করছে বিগত কয়েক কাল দুজনেই। জঙ্গলে অনেকেরই বেশ ঈর্ষার পাত্র এই জুটি। যাইহোক, ঘুম ঘুম একটা ভাব এখন বাঘের চোখে। খাওয়াটা বেশ ভালোই হয়েছে আজ। পরে থাকা উচ্ছিষ্ট হাড় আর কিছু ছিন্ন মাংসের কুচি একটা রোগা পাতলা শেয়াল অনেকক্ষন থেকেই খাবার চেষ্টা করে চলেছে। বাঘ বা বাঘিনী কেউই তাতে পাত্তা দেয় নি। ভাবটা এরকম যে, খাচ্ছে খাক, ওতে তো আর কিছু নেই।
( কি হোল, চেনা লাগছে গল্পটা! লাগতেই পারে। চেনা লাগলেও চুপ থাকাই ভালো।)
শেয়ালটা বেশ কিছুটা খেয়ে এবার বাঘ-বাঘিনী যেখানে বসে আছে সেখানে এসে কিছুক্ষন ঘুর-ঘুর করলো। তারপর সোজা বাঘের পাশে এসে দাঁড়িয়ে (বাঘের থাবার আয়ত্বের বাইরে থেকে) বাঘটাকে বেশ তাচ্ছিল্যের সুরেই জিজ্ঞাসা করলো,
- কি! দেবো নাকি পোঁদটা মেরে একবার?
বাঘ চুপ, শুনতেই পায়নি কথাটা এরকম ভাবে সামনের গাছটার মগ ডালের দিকে তাকিয়ে রইলো। বাঘিনী শেয়ালের মুখ থেকে এরকম একটা কথা শুনে কি রকম চমকে গেছে। ভাবছে, কিছু ভুল শুনছি মনে হয়। শেয়াল কিন্তু সেই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আবার বাঘকে বললো,
- কি! কি হলো, দেবো নাকি একবার!
এবার বাঘিনী ঠিক শুনতে পেয়েছে এবং এতো অবাক হয়ে গেছে যে রেগে বাঘের দিকে তাকিয়েছে। দেখে বাঘ অন্য একটা গাছের ডালে ফিঙে পাখির লেজ ঝোলানোর খেলা দেখছে উদাস মনে। বাঘিনী এটা দেখে আর থাকতে না পেরে বাঘকে সোজাসুজি জিজ্ঞাসা করলো,
-- কি ব্যাপার, বলো তো? ওরকম এক পুটকে শেয়াল তখন থেকে তোমায় এতো বাজে কথা বলছে আর তুমি কিছু করছো না ওকে? মারো এক থাবড়া!
বাঘ যেন কোনো কিছুই শুনতে পাচ্ছে না। মুখটা একবার উপর থেকে নীচে নামিয়ে বাঁ দিকে বাঘিনীর দিকে তাকিয়ে আবার অন্য পাশের গাছে দুটো কাঠ বেড়ালী খেলা করছে তার দিকে মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকলো। শিয়াল যথারীতি এবার জায়গা পরিবর্তন করে বাঘিনীর পাশে এসে (থাবার আয়ত্বের বাইরে) বাঘিনীকে জিজ্ঞাসা করলো,
- কি গিন্নি! দেবো নাকি তোমার পোঁদটা মেরে একবার!
-- তবে রে, পাজির পা ঝাড়া, শালা, হারামীর বাচ্ছা! যত টুকু মুখ নয় তার থেকে বাতেলা বড়! আজ তোর একদিন কি আমার একদিন! দেখছি তোকে দাঁড়া!
এই বলে বাঘিনী বসে বসে সোজা বাঁ হাত দিয়ে একটা থাবড়া চালিয়ে দিল, যদিও শেয়াল একটু পিছিয়ে সেটা থেকে বাঁচলো। শেয়াল যেন এই আক্রমণের জন্যে প্রস্তুত ছিলই। এবার বাঘিনী আরো রেগে গিয়ে শেয়ালকে তাড়া করলো।
এরপর?
এরপর আর নেই। গল্প শেষ। বিশ্বাস হচ্ছে না! ঠিক আছে 'পোস্ট-ক্রেডিট সিন' এর মতো একটা ছোট অংশ আছে। শোনা যাক।
বেশ কিছুক্ষন পর বাঘ যেখানে বসেছিল তারপাশেই এসে বাঘিনী এসে বসলো। শেয়ালকে আর দেখা যাচ্ছে না। বাঘিনী বেশ চুপ-চাপ। বাঘ বেশ কিছুক্ষন পর প্রশ্ন করলো,
- কি, কোথায়? রাস্তার কালভার্টে তো?
বাঘিনী চুপ। সামনের গাছের ডালে পাখির বাসায় ছানা গুলোর কিচির মিচির শুনছে উদাস ভাবে।
শেষ কথা: তাড়া করা বাঘিনীকে শেয়াল প্রথমে এদিক ওদিক ঘুরিয়ে যখন বাঘিনী হাঁপিয়ে গেছে তখন শেয়াল পিচ রাস্তার পাশে নালায় নেমে গেছে। পিছনে পিছনে বাঘিনীও নেমেছে। শেয়াল এবার রাস্তার জল পারাপার করার চওড়া মুখ সিমেন্টের পাইপের ভেতর দিয়ে অন্যদিকে বেরুতে চেয়ে ছুটে ঢুকে গেছে আর বাঘিনীও সোজা ঢুকে গেছে। এখন পর্যন্ত ঠিকই ছিল। শেয়াল অন্য দিক দিয়ে বেরিয়ে এলেও বাঘিনী আটকে গেছে। যথারীতি শেয়াল বেরিয়ে এসে আবার অন্য দিকে ঢুকে আটকে থাকা বাঘিনীর পোঁদ মেরেছে। বাঘিনী কিছুই করতে পারে নি। শেষ-মেষ অনেক টানা -হ্যাঁচকা মেরে গা-মুখ ছিঁড়ে বেরিয়ে এসেছে। এখন কি সুন্দর আবার বাঘের পাশে এসে বসে আছে আর উদাস ভাবে ঘাসের ফুল গুলো হাওয়ায় দুলছে কিনা দেখছে। বাঘ একটা কথা বলেই চুপ হলো,
- হয়েছে তো! উত্তেজিত হয়ো না আর উত্তেজনা ছড়িও না।

#ডাকবো বাপিকে! (২)
এই গল্পটা আমি আমাদের ঠেকে একজনের মুখে শুনেছিলাম। এর সত্যতা নিয়ে আমি কখনো প্রশ্ন করিনি। সেই সিনিয়র আর তার কয়েকজন পাড়ার বন্ধু মিলে টাউন হল মাঠে দুপুরের দিকে আড্ডা দিচ্ছে। ফাঁকা মাঠ তখন, লোকজন নেই বললেই চলে। আর সেই সময় টাউন হলের কোনো পাঁচিল ছিল না তাই অনেকেই সাইকেল নিয়ে এদিকে ঢুকে ওদিকে কালীবাজার দিয়ে বেরিয়ে যেত। ওরা বসে থাকতে থাকতে দেখলো একজন সাইকেল নিয়ে আসছে। দেখেই ওদের মাথা থেকে পা অবধি জ্বলে গেল। কিন্তু কিছু বলার নেই বা কিছু করার নেই, কারণ সেই সময়ের ক্ষমতাশালী ব্যক্তি তিনি। বাপির সব সময়ই রাগ ওর উপর ছিল কারণ অকারণে উনি বাপিকে পাড়ায় যা-তা অপমান করতেন, শুধু অন্য রাজনৈতিক মতবাদী হবার জন্য। রাগ অনেক দিন ধরেই পোষা ছিল, আর এর আগের কোন এক সপ্তাহে বাপিকে পাড়ায় ক্রিমিনাল, এন্টিসোশ্যাল বলে দু-চার থাপ্পড়ও দিয়েছেন। ওনারা তো তখন পাড়া থেকে ভারতবর্ষের সমস্ত কিছুর দায়িত্ব নিয়ে ছিলেন আর কি! যাই হোক, সাইকেল ওদের আড্ডার সামনেই এসে দাঁড়ালো। সেই ব্যক্তি নেমে বেশ গম্ভীর ভাবে ওদের দিকে তাকিয়ে কোন কারণ ছাড়াই প্রশ্ন,
- কি, মাতব্বররা এখানে বসে কি হচ্ছে? ধান্ধা তো খারাপ দেখছি!
মানে? দু-চার জন কলেজ পড়ুয়া ছেলে কলেজ ছুটির দিন মাঠে বসে দিনের বেলায় বসে আড্ডা মারছে, তাতে কি এমন এসে গেল ওনার কে জানে। এরপর আমি যার মুখ থেকে শুনেছি তার ভাষায় বলি। এরপর দেখলাম বাপি আস্তে আস্তে উঠে গেল। সাইকেলটা ফেলে দিয়ে সেই ধুতি পরিহিত বিজ্ঞ এর পায়ের কাছে বসে ধুতিটা তুলে সোজাসুজি বিচিটা কামড়ে ধরেছে।
-ওরে এ এ বাপরে! বলেই ধপ করে পড়ে গেল আর অজ্ঞান। আর দেখা গেল বাপি উঠে হাঁটতে হাঁটতে টাউন হল পাড়ার দিকে মিলিয়ে গেল। বাকিরা ধরা-ধরি করে রিকশায় চাপিয়ে হাসপাতাল নিয়ে গেল আর প্রাইমারী ট্রিটমেন্ট করিয়ে সাইকেল সহ বাড়ী পৌঁছে দিয়ে এল। এরপর বাপি কে পাড়ায় বেশ কিছুদিন দেখা যায় নি। কিন্তু সর্বনাশ যা করার সেটা বাকি ছেলেরা করে দিয়েছে পাড়ায়। সবাই জানে কি হয়েছে, কিন্তু কেউ কিছু বলে না আর সেই বিজ্ঞও কাওকে বলেনি কি হয়েছে। সবাই জানে সাইকেল এক্সিডেন্ট হয়েছে, যদিও পাড়ায় একজনেরও জানতে বাকি ছিল না, আসল ঘটনা। এরপর যেটা হলো সেটা আরো মারাত্মক। পাড়ায়, বে-পাড়ায় কোথাও উনি মাতব্বরি করতে গেলেই ভিড়ের মাঝ থেকে কেউ না কেউ বলে উঠতো, 'ডাকবো বাপিকে!' কিছুক্ষন সব চুপ, তারপর আবার কর্ম-কান্ড শুরু হলেও সেই বিজ্ঞ বাবুর মুখ দিয়ে আর কোনো কথা বের হতো না।

#তোর বাল হবে! (৩)
এই গল্পটা আমি যখন শুনেছিলাম তখন আমি এর মানে বুঝতে পারিনি। হয়তো শ্লীল-অশ্লীলের গন্ডী পেরিয়ে বাকি অংশটুকু বুঝে উঠতে পারিনি, তবে যত বড় হয়েছি, যত সমাজের জটিলতার বাঁকে পড়েছি ততো এর মানে আমার মতো করে বুঝেছি। শোনা যাক গল্পটা আমার মুখেই।
গ্রামের বর্ধিষ্ণু একান্নবর্তী পরিবার চৌধুরী বাড়ী। পাঁচ ভাই, চার ভায়ের বউ, ছেলে-মেয়ে, চাকর-বাকর, পুরোহিত, চাষের লোক মিলিয়ে সকাল বিকাল প্রায় পঞ্চাশটা পাত পড়তো। বড় ভাই ছাড়া সবাই ব্যবস্যা আর চাষের কাজে ব্যস্ত। একমাত্র বড় ভাই অনেক পড়াশোনা করে মধ্যপ্রদেশের কোলিয়ারীতে চাকরি করতো। বিয়ে করে নি, সারাদিন বইয়ে মুখ ডুবিয়ে দিন কাটিয়ে দেয়। চাকরী জীবন থেকে অবসরের পর ওখানেই থেকে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু ভায়েরা সবাই মিলে জোর করে নিয়ে এসে বাড়িতে ঠাকুরের মতো বাইরের বারান্দা দেওয়া ঘরে প্রতিষ্ঠা করেছে বললেই চলে। একটু খ্যাপা-ধোপা মানুষ। বাড়ির কোনো কিছুতেই থাকে না। খায় আর ঘরে ঢুকে বই নিয়ে বসে থাকে। শুধু বিকালে বাড়ির সব ছেলে-মেয়ে গুলোকে নিয়ে একটু বাইরে ঘুরতে বেরোয়, কোনো জোর নেই, যার মন হয় সেই যায়। বড় ভাই নিজের মতো করেই ছেলে-মেয়ে গুলোর সাথে মেশে। বাকি সময় নিজের মতো ঘরেই থাকে। ছেলে-মেয়ে গুলোর মধ্যে মেজো ভাইয়ের মেয়েই একমাত্র এই খ্যাপা জ্যাঠা কে পছন্দ করে। সে সব কথা জ্যাঠার সাথে আলোচনা করে, সে জ্যাঠা শুনুক আর না শুনুক। বাড়ীর বাকি লোকেরা যখন ওই ঘরে ঢুকে কথা বলতে ভয় পাই তখন এই পনের বছরের সুধার ডাক পড়ে। ভালোই চলছিল সংসার আর সংসারে থেকেও না থাকা বড় ভাইয়ের জীবন। মোজো ভাই হটাৎ করেই সুধার বিয়ে ঠিক করে ফেলে পাশের গ্রামের চৌধুরীদের বড় ছেলে যে শহরে থাকে। ছেলে বিরাট সরকারী অফিসার, গাড়ী,বাংলো, চাকর-বাকর নিয়ে এলাহী ব্যাপার। ওদের ও সুধাকে পছন্দ হয়েছে কোন এক বিয়ে বাড়ীতে দেখে। পালটি ঘর, তাই কথা এগিয়ে মত মিলতে দেরী হয়নি দু পক্ষের। কিন্তু শোনার পর থেকেই সুধা খাওয়া -দাওয়া ছেড়ে শুধু কান্না-কাটি করছে। আসলে ছেলে মানুষ তো, বিয়ে-সংসার সবই অচেনা জগৎ। সবাই কত কিছু বোঝাচ্ছে, কিন্তু কান্না তার থামে না।
ছোটকাকী: কাঁদিস না, দেখবি কতো ভালো ভালো কিছু হবে তোর!
বড়পিসি: দেখ, এ যা পাচ্ছিস তুই, তোর বাপের ভাগ্য!সারাদিন বাড়িতে বসে খাবি। চাকর-বাকর সব ম্যাডাম ম্যাডাম বলে কি করবে খুঁজে পাবে না!
ন-কাকা: না রে সুধী, জামাই আমাদের এতো ভালো মানুষ, দেখে বোঝাই যায় না। এই জেলার তো প্রায় সব কিছুর কর্তা! ওনার উপরে তো শুধু ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব। তোর ভালো হবে, দেখিস!
পাশের বাড়ীর কাকিমা: তোর কি ভাগ্য রে! রাজরানী হবি তুই!
এরকম চারিদিকে অজস্র শুভাকাঙ্খী মানুষের ভালোবাসার আর সুখের দিনের ভবিষ্যৎবাণী ও যখন সুধার কান্না থামাতে পারলো না তখন মা বললো, 'যা, তুই একবার জ্যাঠার কাছে গিয়ে বল, দেখ, জ্যাঠা কি বলে তোকে!'
মনের দুঃখে কাঁদতে কাঁদতেই সুধা সে বারান্দার ঘরে জ্যাঠার সামনে গিয়ে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। বেশ কিছুক্ষন পর জ্যাঠা বই থেকে মুখ তুলে,
-এই, এটা কে রে! কার মেয়ে তুই? কি করছিস এখানে?
--জ্যাঠা! আমি সুধা!
- সুধা না মুধা! তাতে আমি কি করবো? কাঁদছিস কেন এখানে বসে?
-- জ্যাঠা, ওরা আমার বিয়ে দিয়ে দেবে, বলছে!
- তা, বিয়ে কর গে! এখানে কাঁদতে এসেছিস কেন?
-- জ্যাঠা, আমার কি হবে গো?
এরপর জ্যাঠা যা উত্তর দেয় শুনে সুধা ঘর থেকে চলে আসে। সামনের পুজোর আগেই সুধার খুব ধুম-ধাম করেই বিয়ে হয়ে যায়। এরপর পুজোর সময় সুধা জামাই নিয়ে বাড়ী এসেছে আর তার জন্য বাড়ী জুড়ে যা আনন্দের উৎসব হচ্ছে তা বর্ণনা করা যায় না। গা-ভর্তি গহনা, রূপ যেন ফেটে পড়ছে। প্যা-কাটির মতো সুধা এই তিন মাসে যেন ভারিক্কি গিন্নি হয়ে উঠেছে। জামাই আসার আগেই বাড়িতেই সাজো-সাজো রব, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট জামাই বলে কথা! আসার আগে থেকেই গ্রামে দুজন পুলিশ, দু জন চাকর, একজন সুধার ফাই-ফরমাস খাটার কাজের মেয়ে নিয়ে সুধা যেন গোটা বাড়ী মাতিয়ে রেখেছে। সবাই আসছে, দেখা করছে আর ঘুরে ফিরে এক কথাই বলে যাচ্ছে,
- কি সুধা, সেদিন বলেছিলাম তো, আজ কাঁদছিস বটে, বিয়ের পর সব পাল্টে যাবে।
ছোট কাকী তো আর এক ধাপ উপরে। বলছে, কি রে! জামাই এত পছন্দ হয়েছে যে কান্না ভুলে গেছিস। তখন যে বলে ছিলি, 'আমার কি হবে গো?' দেখ, যা বলেছিলাম, তাই তো হয়েছে!
সবাই বেশ খুশী কারণ আজ সুধা খুশী। সবাই বলছে, কি, যা বলেছিলাম, মিলেছে তো!
অনেকক্ষণ এসব কথার কোন উত্তর না দিয়ে সুধা শুধু শ্বশুর বাড়ী আর তার বাংলোর বর্ণনা করতেই ব্যস্ত ছিল। শেষে উত্তর দিল,
- ধুর! তোমরা যা বলেছো, তার কিছুই মেলে নি। শুধু জ্যাঠা যা বলেছে তাই হয়েছে!
এই বলে ধুপ-ধাপ করে উঠে, 'যাই, জ্যাঠার সাথে একবার দেখা করে আসি!' বলে সবাইকে অবাক করে দিয়ে সেই বারান্দার ঘরে চলে গেল। সবাই খুব অবাক। ওই হাফ-পাগল, সংসার বিচ্ছিন্ন লোকটা আবার কি বললো, যা সুধার জীবনে একমাত্র মিলে গেল! কিছুক্ষন পরে ফিরে এসে,
-জ্যাঠা কে বলে এলাম আর দেখিয়ে এলাম যে তুমি আমায় বিয়ের আগে যা বলেছিলে তাই হয়েছে আমার।
--কি বলেছিল জ্যাঠা? (সবাই বেশ কৌতূহলী হয়েই জিজ্ঞাসা করলো)
- বলেছিল, 'তোর বাল হবে!'
শুরু করেছিলাম যেখানে, সেখানেই না হয় ফিরে আসি। বাঘেরা আমাদের জীবনে অনেকেই আছে কিন্তু যাদের দেখেও আমরা শিক্ষা নেবার চেষ্টা করি না কারণ আমরা বাঘিনীই হবো বলেই ঠিক করেই রেখেছি। যৌবনের উচ্ছ্বাস কে বাঁধ দিতে গিয়ে যখন ভাঁড়ের ক্ষমতার আস্ফালন বিরক্তির কারণ হয়ে যায় তখনই কিন্তু বাপীদের দরকার। আর শেষ কথা তো জ্যাঠাই বলে গেছেন। জ্যাঠার কথাই শেষ কথা।
* না এটা কোন রাজনৈতিক পোস্ট নয়, বা 'পলিটিক্যাল সারকাজম' নয় কারণ সে লেখার ক্ষমতা আমার নেই তবে তুমি চাইলেই তোমার রাজনৈতিক ভাবনার সাথে মিলিয়ে নিয়ে দেখতে পারো। আমিও মিলিয়ে নিয়েছি আমার মতো করেই কারণ দিনের শেষে তো আমরা সবাই সামাজিক জীব যার সাথে রাজনীতির দূরত্ব খুব বেশী কিছু নয়!

(4.6.2019)

Comments

Popular Posts