আই লাভ ইউ থ্রী থাউজেনড!

#iLoveYou3000!
#আই লাভ ইউ থ্রী থাউজেনড!


ভালোবাসা, জানি তুমি ফিরে আসবে না। তাই!

কেন তুমি এতো ভালোবাসার আজও বুঝিনি। চারিদিকে যখন বেশ একটা যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাব, আমেরিকা মোটামুটি ভাবে মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোকে নিজেদের অস্ত্র বেচে নিজেরাই যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলায় মত্ত ঠিক তখনই আমেরিকার সব থেকে বড়ো অস্ত্র ব্যবসায়ী আফগানিস্তানের জঙ্গিদের হাতে ধরা পড়ে তাদের ফরমায়েশি অস্ত্র বানিয়ে না দিয়ে তার বানানো আয়রন স্যুট পরে জঙ্গী ঘাঁটি উড়িয়ে দিয়ে নিউ ইয়র্কে নিজের অফিসে সাংবাদিক মিট করার জন্য ডেকে প্রথম যেটা করে তা হলো, জার্ভিসকে ডেকে একটা এক্সট্রা চীজ বার্গার অর্ডার দেয়, আর পোডিয়ামের নীচে মাটিতে বসে ঘোষণা করে, 'আমরা আর অস্ত্র বানাবো না।' চারিদিকে হৈ-চৈ পরে যায়। টোনিকে বাড়ী পাঠানো হয়, শরীর খারাপ আছে, দীর্ঘ দিন জঙ্গী ঘাঁটিতে বন্দি থেকে ওর মানসিক অবস্থা ঠিক নয়, এই বলে।
চমকে উঠতে হয় বইকি, এরকম এক ঘোষণা শোনার পর। আমেরিকা যার কোম্পানির সমস্ত অস্ত্র কিনতো, দেশের সামরিক সজ্জার সমস্ত কিছু যাদের কোম্পানি সাপ্লাই করতো সেই বাড়ীর ছেলে যদি বলে যে সে সমস্ত অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করে দেবে আর অস্ত্র বানাবে না, তখন চিন্তা হয় বৈকি সমাজের মাথাদের। আসলে টোনি যে তখন দেখে ফেলেছে তাদের কোম্পানির বানানো অস্ত্র জঙ্গী ঘাঁটিময় আর সেই অস্ত্র নিয়েই তারা লড়ে যাচ্ছে তার দেশের সাথে, যাদের কে টোনিই অস্ত্র জোগান দেয়। টোনি বুঝে ফেলেছি এই রাজনেতিক দ্বিচারিতা। জন্ম হয় অস্ত্র ব্যবসায়ী টোনি থেকে আয়রন ম্যান টোনি।
কে এই টোনি? কোথায় ছিল? কি করছিল এতদিন?
এম.আই. টি গ্রাজুয়েট টোনি স্টার্ক হলো হাওয়ার্ড আর মারিয়ার একমাত্র ছেলে যে পাশ করার পর স্টার্ক ইন্ডাস্ট্রিজের সি.ই.ও। যদিও তার সাথে ছিল তার প্লে-বয় ইমেজ আর সুপার ইনভেন্টর মন। মার্ভেল কমিকস বুকে স্ট্যান লি খুব যত্নে সাজিয়েছিল এই চরিত্রটি। আর রবার্ট ডাউনি জুনিয়ার তার অভিনয় করে গেল সমস্ত আয়রন ম্যান সিরিজ জুড়ে। ২০০৮ এ 'আয়রন ম্যান ওয়ান' থেকে ২০১৯ এর 'অ্যাভেঞ্জার্স: এন্ডগেম': মাত্র এগারো বছরের যাত্রাপথে টোনি আমাদের অনেক কিছু দেখিয়েছে, অনেক কিছু ভাবতে শিখিয়েছে। নিজস্ব নামে তিনটে ছবির সিরিজ আর অ্যাভেঞ্জার্স সিরিজের সাতটা ছবিতে মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সকে এক নতুন জগতে নিয়ে গেছে আয়রন ম্যান। নিজের লড়াই ছিল নিজের দেশের বিক্রি হয়ে যাওয়া যুদ্ধ বিলাসীদের বিরুদ্ধে আর অ্যাভেঞ্জার্স টীমগেম ছিল সমস্ত অ্যাভেঞ্জার্সকে এক করে লোকির নেতৃত্বে আসা এলিয়ন ওয়ার থেকে পৃথিবীকে বাঁচানো। লড়াই তাকে প্রতিনিয়ত করতে হয়েছে। মার্ক ওয়ান স্যুট থেকে মার্ক ফর্টি টু স্যুট যেটা টোনি কখনোই চায় নি যে এই টেকনোলজি যেন কোনো ভাবেই গভর্নমেন্টের কাছে না যায়, গেলে যে কি হয় তার পরিণতি সে দেখেছে। তাই সে নিজেকে ডুবিয়ে দেয় আরো কঠিন রিসার্চে যাতে সে আরো উন্নত স্যুট বানাতে পারে। পেরেছে টোনি তার আবিষ্কারকে এক নতুন মাত্রায় নিয়ে যেতে। মাঝে এসেছে পীপারের ভালোবাসা, যে আসতে আসতে হয়ে উঠেছে তার যোগ্য সহধর্মিনী।
'আই এম আয়রন ম্যান', এটা এখন আর টোনি একা বলে না, আমেরিকার বাচ্ছারাও বলে। মহিলা মহল থেকে বাচ্ছারা সবাই এখন টোনির ফ্যান, আয়রন ম্যান এর ফ্যান। নিউ ইয়র্কে স্টার্ক টাওয়ার থেকে এসগার্ডিয়ান লোকি র চিতরিয়ান আর্মির গাইডেড মিসাইল মেন ফ্রেমে ব্লাস্ট করানো হোক বা ম্যান্ডারিনকে পরাস্ত করা হোক বা এয়ার ফোর্স ওয়ান এর সবাইকে ব্লাস্টের পরে নদীতে নামিয়ে আনা হোক, পীপার কে প্রপোজ করা হোক বা স্পাইডার ম্যানের মেন্টর হিসাবে পিটার কে অ্যাভেঞ্জার্স টিমে নিয়ে আসা আর তার জন্য হাই-টেক স্যুট বানিয়ে দেওয়া সবেতেই টোনি এক এবং অদ্বিতীয়ম।
আয়রন ম্যান নিয়ে অনেক অনেক কথা লিখে যাওয়ায় যায়। লিখবো না, কারণ আমার মতো তোমরাও টোনি কে চেনো, কেউবা আমার থেকে বেশীই চেনো।
শুধু শেষ ছবি এন্ডগেম এ টোনি র প্রথম উপস্থিত আমায় কেমন স্মৃতি বিজড়িত দুঃখী করে দিয়েছিল। আসলে এর আগে কানা ঘুঁষো শুনছিলাম, এবার আয়রন ম্যান মারা যাবে, মার্ভেল কন্টাক্ট শেষ করেছে। যাই হোক, মুখটা যখন পর্দা জুড়ে এলো দেখলাম অনেকেই উল্লাসে চিৎকার করে চলেছে। তারপরেই একটু সূর্যের আলো যখন তোমার মুখময়, আর তুমি হাত দিয়ে আড়াল করছো, কেমন যেন মনে হলো টোনি বুড়ো হয়ে গেছে, ম্লান মুখমন্ডল জুড়ে ক্লান্তির ছাপ। যাই হোক, থানোস বধ আর পৃথিবী বাঁচানোর আগেই টোনি মেয়ে মেগান স্টার্ককে নিয়ে নির্বাসনে চলে গেছে। ফিরে এসেছে আবার শুধু অ্যাভেঞ্জার্স আর পীপার কে ফিরিয়ে আনতে। ফিরিয়ে এনেছে সবাইকে। পিটার থেকে স্কারলেট উইচ থেকে ভালকরী থেকে গ্যামোরা, কেউ কোথাও বাদ নেই। সবাই ফিরে এসেছে আর টোনি শুধু থানোস আর তার সৈন্যদল মারতে থানোস এর স্টোন হাতে নিয়ে 'স্ন্যাপ' করেছে।
মিলিয়ে দিয়েছে বাতাসে সব শত্রু পৃথিবীর।
ফিরিয়ে এনেছে সব বন্ধু-বান্ধব আর মানুষদের।
মিলিয়ে দিয়েছে নিজেকে।
বিলীন করেছে নিজেকে।
শেষ যুদ্ধের আগে মেয়ের সাথে টোনির কথা:
- আই লাভ ইউ।
- আই লাভ ইউ টু।
- আই লাভ ইউ থ্রী থাউজেনড।
সত্যিই টোনি উই লাভ ইউ থ্রী থাউজেনড।
আমার আর আমার ছেলের দেখা একমাত্র অ্যাভেঞ্জার্স তুমিই যাকে আমাদের মনে হতো, আমেরিকা গেলেই তোমায় দেখতে পাবো। আয়রন ম্যান কোনো কল্প জগতের মানুষ মনে হয় না আমাদের একবারও। তোমার সেই প্রথম দিকে ব্যবহার করা মোবাইল তো আজ এক কোম্পানি বের করেছে। তোমার স্যুট, তোমার আবিষ্কার সবই তো বিজ্ঞান। তাই আমি যুক্তি খুঁজে তোমার কাজে।
তোমার সাথে দেখা হলো না টোনি!
দুঃখিত আমি।
* 'স্পাইডার ম্যান: ফার ফ্রম হোম' পরবর্তী অ্যাভেঞ্জার্স মুভি। আমি অবশ্যই যাবো দেখতে। দেখবো কেমন করে তুমি তোমার লীড পিটার এর হাতে দিয়েছো, কেমন করে ও তোমার তৈরী স্যুট এর সমস্ত কন্ট্রোল নিজের হাতে নিয়েছে আর তোমার যোগ্য উত্তরসূরী হয়ে উঠছে। এই মুভির ট্রেলর এ দেখলাম ও একবার বলছে, 'দা ওয়ার্ল্ড নিডস আয়রন ম্যান!' এক মুহূর্তের জন্য চমকে উঠেছিলাম আমি! মানে! ফিরে আসছো তুমি! না। দেখলাম, তোমার স্যুট, তোমার টেকনোলজি হাতে নিয়ে পিটার নিজের পাওয়ার বাড়িয়ে নিচ্ছে। দেখা যাক, তোমার শিষ্য কি করে! তবে বার বার আমার মনে হচ্ছে এরপর মনে হয় ও স্যুট এর ভিতর তোমার গলা শুনতে পাবে যেমন করে তুমি জারভিস এর দেওয়া ইনস্ট্রাকশন পেতে ফ্রাইডের গলায়।
উই মিস ইউ, টোনি!
উই মিস ইউ, আয়রন ম্যান!
উই মিস ইউ, মাই হিরো!

Comments

Popular Posts